বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডল
From Wikipedia, the free encyclopedia
বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডল হল সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহীয় বায়ুমণ্ডল। মোটামুটি সৌর অনুপাতে প্রধানত আণবিক হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম দ্বারা এই বায়ুমণ্ডল গঠিত। এছাড়া মিথেন, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড ও জল সহ অন্যান্য রাসায়নিক যৌগও সামান্য পরিমাণে এই বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত। অনুমান করা হয়, বৃহস্পতি গ্রহে জলের অবস্থান বায়ুমণ্ডলের অনেক গভীরে। তবে সেই জলের সরাসরি পরিমাপকৃত মাত্রা অত্যন্ত কম। বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন, সালফার ও বিরল গ্যাসের অতিপ্রাচুর্য সৌর মানের তুলনায় প্রায় তিন গুননীয়ক বেশি।[2]
বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে কোনও সুস্পষ্ট নিম্নসীমা নেই। এই বায়ুমণ্ডল ক্রমশ গ্রহের তরল অন্তর্ভাগে অবস্থান্তরিত হয়েছে।[3] সর্বনিম্ন অংশ থেকে উপরিতল পর্যন্ত এই বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলি হল যথাক্রমে ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার, থার্মোস্ফিয়ার ও এক্সোস্ফিয়ার। প্রত্যেকটি স্তরের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসূচক তাপাঙ্ক নতিমাত্রা রয়েছে।[4] সর্বনিম্ন স্তর ট্রপোস্ফিয়ার হল মেঘ ও কুয়াশার এক জটিল সমবায়। এই অংশটি গঠিত হয়েছে অ্যামোনিয়া, অ্যামোনিয়াম হাইড্রোসালফাইড ও জলের ভিন্ন ভিন্ন স্তর নিয়ে।[5] উপরিভাগের অ্যামোনিয়া মেঘগুলি বৃহস্পতির পৃষ্ঠভাগেই দেখা যায়। এগুলি বিষুবরেখার সমান্তরালে এক ডজন ক্ষেত্রীয় বন্ধনীতে সংগঠিত এবং "জেট" নামে পরিচিত শক্তিশালী বায়ুমণ্ডলীয় প্রবাহ (বায়ু) দ্বারা পরিবেষ্টিত। বন্ধনীগুলির রং পর্যায়ক্রমিক: গাঢ় রঙের বন্ধনীগুলিকে বলা হয় "বেল্ট" এবং হালকা রঙের বন্ধনীগুলিকে বলা হয় "জোন"। জোনগুলি বেল্টগুলির তুলনায় শীতলতর, ঊর্ধ্বমুখিনতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। অপরদিকে বেল্টগুলি হল অবরোহী গ্যাসের বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন।[6] মনে করা হয়, অ্যামোনিয়া বরফের উপস্থিতির কারণেই জোনগুলির রং হালকা দেখায়। কিন্তু বেল্টগুলির গাঢ় রঙের কারণ কী সেই ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন।[6] এই ধরনের শ্রেণিবদ্ধ গঠনশৈলী ও জেট বায়ুর উৎসটিও সঠিক বোঝা যায় না। যদিও এই ক্ষেত্রে একটি "অগভীর মডেল" ও একটি "গভীর মডেল"-এর অস্তিত্ব রয়েছে।[7]
বার্হস্পত্য বায়ুমণ্ডলে অনেক ধরনের সক্রিয় ঘটনা ঘটে চলেছে। এই ধরনের ঘটনার মধ্যে রয়েছে বন্ধনীগুলির অস্থিরতা, ঘূর্ণি (ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত), ঝড় ও বজ্রপাত।[8] বৃহস্পতির ঘূর্ণিগুলি বড়ো বড়ো লাল, সাদা ও বাদামি ডিম্বাকৃতি দাগের আকারবিশিষ্ট। বৃহত্তম দাগ দু’টি হল বৃহৎ লাল বিন্দু[9] ও ডিম্বাকার বিএ (এটিও লাল)।[10] এই দাগ দু’টি এবং অন্যান্য বৃহদাকার দাগগুলি প্রতীপ ঘূর্ণবাতমূলক। অপেক্ষাকৃত ছোটো আকারের প্রতীপ ঘূর্ণবাতগুলি প্রায়শই সাদা রঙের হয়ে থাকে। ঘূর্ণিগুলিকে আপেক্ষিকভাবে অগভীর বলেই মনে করা হয়। এগুলির গভীরতা কয়েকশো কিলোমিটারের বেশি নয়। বৃহস্পতির দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত বৃহৎ লাল বিন্দুটি সৌরজগতের জানা ঘূর্ণিগুলির মধ্যে বৃহত্তম। বিগত অন্তত তিনশো বছর ধরে এই দাগটির অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। এটি আকারে এতটাই বড়ো যে দুই বা তিনটি পৃথিবী গ্রাস করতে পারে। বৃহৎ লাল বিন্দুর দক্ষিণে অবস্থিত ডিম্বাকার বিএ অপর একটি লাল দাগ। এটির আকার বৃহৎ লাল বিন্দুর এক-তৃতীয়াংশ। ২০০০ সালে তিনটি সাদা ডিম্বাকার দাগ একীভূত হওয়ার ফলে এই দাগটির সৃষ্টি হয়েছিল।[11]
বৃহস্পতি গ্রহে শক্তিশালী ঝড় উঠে থাকে, যার সঙ্গে প্রায়শই বজ্রপাতের ঘটনাও ঘটে। এই ঝড়গুলি হল বায়ুমণ্ডলে আর্দ্র পরিচলনের ফল, যা জলের বাষ্পীভবন ও ঘনীভবনের সঙ্গে জড়িত। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অঞ্চলগুলিতে বায়ু সবেগে ঊর্ধ্বমুখে ধাবিত হয়, যার ফলে উজ্জ্বল ও গভীর মেঘসমূহের সৃষ্টি হয়ে থাকে। ঝড়গুলি প্রধানত ওঠে বেল্ট অঞ্চলগুলিতে। বৃহস্পতিতে যে বজ্রপাত হয় তা পৃথিবীতে সংঘটিত বজ্রপাতের তুলনায় কয়েকশো গুণ শক্তিশালী এবং মনে করা হয় এগুলি জলীয় মেঘমেঘগুলির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।[12]