জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
বাংলাদেশের একটি ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল / From Wikipedia, the free encyclopedia
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ বাংলাদেশের একটি ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল। ব্রিটিশ ভারতে ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ, যা অবিভক্ত ভারতের পক্ষে স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে যায়। পাকিস্তান আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে তার থেকে ১৯৪৫ সালে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম। স্বাধীনতা উত্তর পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জমিয়ত, নেজামে ইসলাম পার্টি নামে নিজেদের নির্বাচনি সেল গঠন করে ৩৬টি আসনে জয়লাভ করে। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হলে পাকিস্তানে সমস্ত রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ হয়। সামরিক শাসন পরবর্তী জমিয়ত নেতাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু হলে পূর্বে গঠিত জমিয়তের নির্বাচনি সেল নেজামে ইসলাম পার্টি একটি স্বতন্ত্র দলের রূপ ধারণ করতে থাকে। অন্যদিকে ১৯৬৪ সালে আশরাফ আলী বিশ্বনাথীর আহ্বানে সিলেট বিভাগীয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে জমিয়তের আরেক অংশ সংগঠিত হয়, যারা মূলত পূর্বের জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের পূর্ব পাকিস্তান অংশের কর্মী ছিলেন। ১৯৬৭ সালে জমিয়ত স্পষ্টতঃ দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। অন্যভাগ নেজামে ইসলাম পার্টি নামে কার্যক্রম চালিয়ে যায়। জমিয়ত ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে সর্বাধিক আসন লাভ করে। ১৯৭১ সালের ২২ মার্চ এটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান জমিয়তের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং দলের বর্তমান নামটি গ্রহণ করে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ হলেও এটি নিষিদ্ধ হয় নি। স্বাধীন বাংলাদেশে এটি ইসলামি শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। নব্বইয়ের দশকে এটি মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাওবার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে এবং সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদে যোগ দেয়। ১৯৯০ সালে এটি ইসলামী ঐক্যজোটে অংশগ্রহণ করে। ইসলামী ঐক্যজোটের অংশ হিসেবে ১৯৯৯ সালে এটি বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটে যোগদান করে এবং ২০০১ সালে সরকার গঠনে অংশীদার হয়। চার দলীয় জোট পরবর্তীতে বিশ দলীয় জোটে পরিণত হয়। ২০২১ সালে এটি বিশ দলীয় জোট থেকে বের হয়ে যায়। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত ছাতা সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশে এটি সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিল। ২০২০ সালে গঠিত হেফাজতের ১৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জমিয়তের নেতা ছিল ৩৪ জন।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ | |
---|---|
সংক্ষেপে | জমিয়ত |
সভাপতি | জিয়া উদ্দিন |
মহাসচিব | মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী |
প্রতিষ্ঠা | ২২ মার্চ ১৯৭১; ৫৩ বছর আগে (1971-03-22) |
নিবন্ধিত | ১৩ নভেম্বর ২০০৮ |
বিভক্তি | বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা |
পূর্ববর্তী | জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম |
সদর দপ্তর | পুরানা পল্টন, ঢাকা |
ছাত্র শাখা | ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ |
যুব শাখা | যুব জমিয়ত বাংলাদেশ |
ভাবাদর্শ | |
রাজনৈতিক অবস্থান | ডানপন্থী |
আনুষ্ঠানিক রঙ | |
স্লোগান | জমিয়তের দাওয়াত, জমিয়তের পয়গাম; আল্লাহর জমিনে, আল্লাহর নেজাম |
জাতীয় সংসদের আসন | ০ / ৩৫০
|
নির্বাচনী প্রতীক | |
দলীয় পতাকা | |
ওয়েবসাইট | |
jueibd | |
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের নেতৃত্বে একই নামে ১২১ সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি কমিটি গঠিত হয়। |
স্বাধীন বাংলাদেশে জমিয়তের প্রথম সভাপতি ছিলেন তাজাম্মুল আলী ও প্রথম মহাসচিব ছিলেন শাহ আহরারুজ্জামান। দলটির বর্তমান সভাপতি জিয়া উদ্দিন ও মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দলটিতে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের ঘটনা ঘটে। এসময় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে দলটির নিবন্ধিত নামে সভাপতি ছিলেন আব্দুল মোমিন ইমামবাড়ি ও মহাসচিব নূর হুসাইন কাসেমী। তারা মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তিনি ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে একই নামে ১২১ সদস্য বিশিষ্ট জমিয়তের আরেকটি কমিটি গঠন করেন। আব্দুল মোমিন ইমামবাড়ির মৃত্যুর পর সভাপতির দায়িত্বে আসেন জিয়া উদ্দিন এবং নূর হুসাইন কাসেমীর মৃত্যুর পর মহাসচিব পদে আসেন মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। ইতিপূর্বে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে জমিয়ত থেকে বের হয়ে ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা এবং আলিমুদ্দিন দুর্লভপুরী জমিয়তে উলামা বাংলাদেশ গঠন করেন।