হিট্টীয় জাতি
নিকটপ্রাচ্যের প্রাচীন জাতি / From Wikipedia, the free encyclopedia
হিট্টীয় ছিলো একটি আনাতোলীয় জাতি যারা প্রথমে কুসারায় একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো (খ্রিস্টপূর্ব ১৭৫০ সালের আগে), তারপর কানেশ বা নেসা রাজ্য (আনু. ১৭৫০-১৬৫০ খ্রিস্টপূর্ব), ও পরবর্তীতে উত্তর-মধ্য আনাতোলিয়ার হাট্টুসা কেন্দ্রিক একটি সাম্রাজ্য (খ্রিস্টপূর্ব ১৬৫০ সালের দিকে)।[2][3] এই সাম্রাজ্য খ্রিস্টপূর্ব ১৪শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে যখন এটি আনাতোলিয়ার বেশিরভাগ অংশের পাশাপাশি উত্তর ঐতিহাসিক পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও উচ্চ মেসোপটেমিয়ার কিছু অংশকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলো তখন প্রথম স্পুপিলুলিয়ামার অধীনে এর শীর্ষে পৌঁছেছিলো।
হিট্টীয় সাম্রাজ্য Ḫa-at-tu-ša / 𒄩𒀜𒌅𒊭 | |||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
আনু. ১৬৫০ খ্রিস্টপূর্ব–আনু. ১১৯০ খ্রিস্টপূর্ব | |||||||||||
হিট্টীয় সাম্রাজ্যের মানচিত্র (আনু. ১৩৫০-১৩০০ খ্রিস্টপূর্ব) সর্বোচ্চ মাত্রায়, হিট্টীয় শাসনের সাথে সবুজ রেখা দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হয় | |||||||||||
রাজধানী | হাট্টুসা, তারহউন্টাসসা (দ্বিতীয় মুওয়াতাল্লির শাসনকালে) | ||||||||||
প্রচলিত ভাষা | হিট্টীয়, হাট্টীয়, লুভীয়, আক্কাদীয় | ||||||||||
ধর্ম | হিট্টীয় ধর্ম | ||||||||||
সরকার | স্বেচ্ছারন্ত্রী রাজশাসন (পুরোনো রাজ্য) সাংবিধানিক রাজতন্ত্র (মধ্য ও নব্য রাজ্য)[1] | ||||||||||
রাজা | |||||||||||
• আনু. ১৬৫০ খ্রিস্টপূর্ব | প্রথম লাবারনা (প্রথম) | ||||||||||
• আনু. ১২১০–১১৯০ খ্রিস্টপূর্ব | দ্বিতীয় স্পুপিলুলিয়ামা (শেষ) | ||||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | ব্রোঞ্জ যুগ | ||||||||||
• প্রতিষ্ঠা | আনু. ১৬৫০ খ্রিস্টপূর্ব | ||||||||||
• বিলুপ্ত | আনু. ১১৯০ খ্রিস্টপূর্ব | ||||||||||
| |||||||||||
বর্তমানে যার অংশ | তুরস্ক সিরিয়া লেবানন সাইপ্রাস |
খ্রিস্টপূর্ব ১৫শ ও ১৩শ শতাব্দীর মধ্যে আধুনিক সময়ে প্রচলিতভাবে হিট্টীয় সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত হাট্টুসা সাম্রাজ্য নিকট প্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণের জন্য নব্য মিশরীয় সাম্রাজ্য, মধ্য অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্য ও মিতান্নি সাম্রাজ্যের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। মধ্য অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্য অবশেষে প্রভাবশালী শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয় ও হিট্টীয় সাম্রাজ্যের বেশিরভাগ অংশ দখল করে নেয়, বাকি অংশকে এই অঞ্চলে নবাগত ফ্রিজীয়দের দ্বারা বহিষ্কার করা হয়। পরে আনু. ১১৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, ব্রোঞ্জ যুগের শেষের দিকে পতনের সময় হিট্টীয়রা কয়েকটি স্বাধীন সিরীয়-হিট্টীয় রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যার মধ্যে কিছু নব্য-অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের কাছে নিঃশেষ হওয়ায় আগে খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত টিকে ছিল।
হিট্টীয় ভাষা ছিলো ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের আনাতোলীয় শাখার একটি স্বতন্ত্র সদস্য। ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত লুভীয় ভাষার পাশাপাশি হিট্টীয় হল প্রাচীনতম ঐতিহাসিকভাবে প্রত্যয়িত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা,[4] এই ভাষায় কথা বলা ব্যক্তিরা এটিকে "নেসিলি" nešili ভাষা বলে উল্লেখ করেছেন। হিট্টীয়রা তাদের দেশকে হাট্টীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্ত একটি নাম হাট্টুসা রাজ্য (আক্কাদীয় ভাষায় হাট্টি) বলে ডাকত, এটি ছিলো পূর্ববর্তী একটি জাতি যারা খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের শুরু পর্যন্ত কেন্দ্রীয় আনাতোলীয় অঞ্চলে বাস করত ও শাসন করত এবং যারা হাত্তীয় নামক একটি সম্পর্কহীন ভাষায় কথা বলত।[5] আধুনিক প্রচলিত নাম "হিট্টীয়" ১৯শ শতাব্দীর প্রত্নতাত্ত্বিকদের দ্বারা বাইবেলে উল্লেখিত হিট্টীয়দের সাথে হাট্টুসা জাতিদের প্রাথমিক সনাক্তকরণের কারণে এসেছে।
হিট্টীয় সভ্যতার ইতিহাস বেশিরভাগই তাদের রাজ্যের অঞ্চলে পাওয়া কিউনিফর্ম পাঠ্য থেকে এবং অ্যাসিরিয়া, ব্যাবিলনিয়া, মিশর ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন আর্কাইভে পাওয়া কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক চিঠিপত্র থেকে জানা যায়, যার পাঠোদ্ধারও ইন্দো-ইউরোপীয় গবেষণার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিলো।
পণ্ডিতরা একবার ব্রোঞ্জ যুগের শেষের দিকে আনাতোলীয় হিট্টাইটদের লোহা গলন বিকাশের জন্য দায়ী করেছিলেন, তাদের সাফল্যটি সেই সময়ে লোহার কাজের উপর একচেটিয়া সুবিধার উপর ভিত্তি করে দেখা হয়েছিলো। কিন্তু এই ধরনের একটি "হিট্টীয় একচেটিয়া" দৃষ্টিভঙ্গি পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতায় এসেছে এবং এতে আর পণ্ডিতদের ঐকমত্য-সমর্থন নেই।[6] পরবর্তী ব্রোঞ্জ যুগ/প্রাথমিক লৌহ যুগের অংশ হিসেবে, প্রয়াত ব্রোঞ্জ যুগের পতনের ফলে এই অঞ্চলে লোহার কাজের প্রযুক্তির ধীর, তুলনামূলকভাবে ক্রমাগত বিস্তার দেখা যায়। ব্রোঞ্জ যুগের আনাতোলিয়া থেকে কিছু লোহার বস্তু থাকলেও সংখ্যাটি মিশরে ও একই সময়ের অন্যান্য স্থানে পাওয়া লোহার বস্তুর সাথে তুলনীয়; এবং এই বস্তুর মাত্র অল্প সংখ্যক অস্ত্র।[7] হিট্টীয়রা গলনযুক্ত লোহা ব্যবহার করত না, বরং উল্কাপিণ্ড ব্যবহার করত।[8] হিট্টীয় সামরিক বাহিনী রথের সফল ব্যবহার করেছিলো।[9]
ধ্রুপদী সময়ে জাতিগত হিট্টীয় রাজবংশগুলো বর্তমান সিরিয়া, লেবানন ও পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট রাজ্যগুলোতে টিকে ছিল। একীভূত ধারাবাহিকতার অভাবে, তাদের বংশধররা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয়, তুরস্ক ও মেসোপটেমিয়ার আধুনিক জনগোষ্ঠীতে মিশে যায়।[10]
১৯২০ এর দশকে, ১৯২৩ সালে তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে হিট্টীয়দের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। হিট্টীয়রা তুর্কি প্রত্নতাত্ত্বিকদের যেমন হালেত চাম্বেল ও তাহসিন ওজগুচের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো। এই সময়কালে, হিট্টীয়বিদ্যার নতুন ক্ষেত্রটি তুর্কি প্রতিষ্ঠানের নামকরণকেও প্রভাবিত করে যেমন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এটিব্যাঙ্ক ("হিট্টীয় ব্যাঙ্ক"),[11] ও হিট্টীয়দের রাজধানী হাট্টুসার ২০০ কিলোমিটার (১২৪ মাইল) পশ্চিমে আঙ্কারায় আনাতোলীয় সভ্যতা জাদুঘরের ভিত্তি যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত হিট্টীয় শিল্পকলা ও শিল্পকর্মের প্রদর্শনী রয়েছে।