সুলতান সুলাইমান
উসমানীয় সাম্রাজের সুলতান / From Wikipedia, the free encyclopedia
সুলতান সুলাইমান কানুনি ( উসমানীয় তুর্কি ভাষায়: سليمان اوّل: সুলাইমানে আউওয়াল) ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের দশম ও সবচেয়ে দীর্ঘকালব্যাপী শাসনরত প্রভাবশালী সুলতান, যিনি ১৫২০ থেকে ১৫৬৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উসমানীয় সাম্রাজ্য শাসন করেন।[4] পশ্চিমা বিশ্বে তিনি সুলাইমান দ্যা ম্যাগনিফিসেন্ট নামে, তুরস্কে কানুনি সুলতান নামে এবং আরব বিশ্বে সুলাইমান আল মুহতাশাম নামে পরিচিত। সুলতান সুলায়মান ১৪৯০ সালের ২১ আগস্টে পিতা সুলতান সেলিমের ঔরসে ট্রাবোজন প্রাসাদে জন্মলাভ করেন। তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের পুরাতন সকল নীতিমালা পুনরায় সম্পূর্ণরূপে নবীণকরণ করেন বলেউ তুরস্কে তাকে কানুনি সুলতান (আরবি: سليمان القانوني ) বলা হয়। তিনি ষোড়শ শতাব্দীর ইউরোপে একজন বিশিষ্ট সাম্রাজ্যাধিপতি হিসেবে স্থান লাভ করেন, যার শাসনে উসমানীয় খেলাফতে সামরিক, রাজনৈতিক, আত্মিক ও অর্থনৈতিক শক্তির ব্যাপক বিস্তার ঘটে।
সুলতান সুলাইমান | |
---|---|
উসমানীয় খলিফা আমিরুল মুমিনিন সুলতান ও কায়সার-ই-রোম আলকানুনি (বিধানকর্তা) ম্যাগনিফিসেন্ট (মহৎ) খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন | |
ইসলামের খলিফা ১০ম উসমানীয় সুলতান | |
রাজত্ব | ২২ সেপ্টেম্বর ১৫২০ – ৬ সেপ্টেম্বর ১৫৬৬ (৪৫ বছর, ৩৪১ দিন) |
তরবারী প্রদান | ৩০শে সেপ্টেম্বর, ১৫২০ |
পূর্বসূরি | প্রথম সেলিম |
উত্তরসূরি | দ্বিতীয় সেলিম |
জন্ম | (১৪৯৫-১১-০৬)৬ নভেম্বর ১৪৯৫[1]:৫৪১ তাবরিজ, তুরস্ক |
মৃত্যু | ৬ সেপ্টেম্বর ১৫৬৬(1566-09-06) (বয়স ৭১)[1]:৫৪৫ সিগেটভার (Szigetvár), হাঙ্গেরি |
সমাধি | |
দাম্পত্য সঙ্গী |
|
বংশধর |
|
পিতা | প্রথম সেলিম |
মাতা | হাফসা সুলতান |
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম |
তুগরা |
সুলতান সুলাইমানের সেনাবাহিনী পবিত্র রোম সাম্রাজ্য ও সুবিশাল হাঙ্গেরির পতন ঘটায়। সুলতান সুলাইমান পারস্যের সাফাভি রাজবংশের শাহ প্রথম তাহমাসবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করে মধ্য প্রাচ্যের বেশির ভাগ অঞ্চল দখল করেন। এছাড়াও তিনি উত্তর আফ্রিকায় আলজেরিয়া ও লিবিয়াসহ বড় বড় অঞ্চলগুলো দখল করেন। তার শাসনামলে তার অধীনস্থ কাপুদান পাশা (নৌসেনাপতি) খিজির খাইরুদ্দিন বার্বারোসা স্পেনের অ্যাডমিরাল আন্দ্রে দোরিয়ার নেতৃত্বে সম্মিলিত খ্রিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে ১৫৩৮ সালের প্রিভিজার যুদ্ধে বিজয় লাভ করে। এই নৌবাহিনী ভূমধ্যসাগর থেকে লোহিত সাগর এবং পারস্য উপসাগর পর্যন্ত তাদের আধিপত্য বজায় রাখে। [5] এছাড়াও তার নৌ-বাহিনী তৎকালীন স্পেনের হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া পালিয়ে যাওয়া নির্বাসিত মুসলিম ও ইহুদিদের উদ্ধারকার্য পরিচালনা করেন। তিনি ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের সবেচেয়ে শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান সুলতান।
উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিস্তারকালে, সুলতান সুলাইমান ব্যক্তিগতভাবে তার সাম্রাজ্যের সমাজ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, খাজনা ব্যবস্থা ও অপরাধের শাস্তি ব্যবস্থার বিষয়গুলোতে আইনপ্রণয়নসংক্রান্ত পরিবর্তন আনার আদেশ দেন। তিনি যেসব কানুনগুলো স্থাপন করে গেছেন, সেসব কানুনগুলো উসমানীয় সাম্রাজ্যে অনেক শতাব্দী ধরে প্রচলিত ছিল।[6] সুলতান সুলাইমান যে শুধু একজন মহান রাজা ছিলেন তা নয়, তিনি একজন মহান কবিও ছিলেন। 'মুহিব্বি' (অর্থ:প্রেমিক) নামক ছদ্ম উপনামে তিনি তুর্কি ও ফারসি ভাষায় বহু কালজয়ী কবিতা লিখেছেন। তার শাসনামলে উসমানীয় সংস্কৃতির অনেক উন্নতি হয়। সুলতান সুলাইমান উসমানীয় তুর্কি ভাষা সহ আরো পাঁচটি ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারতেন: আরবি ভাষা, সার্বীয় ভাষা, ফার্সি ভাষা, উর্দু ভাষা এবং চাগাতাই ভাষা (একটি বিলুপ্ত তুর্কি ভাষা)।
উসমানীয় সংস্কৃতির নিয়ম ভঙ্গ করে, সুলাইমান তার হেরেমের রুথেনিয়ান বংশোদ্ভুত দাসী হুররামকে বিবাহ করেন। সে ছিলো একজন অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী, কিন্তু বিবাহের পূর্বেই সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। প্রকৃতপক্ষে সুলতান রসুল সা. এর হাদিস মোতাবেক তাকে জ্ঞান ও শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়ে হাদিসের আদেশ মোতাবেক আজাদ করে দেন এবং পরবর্তীতে তাকে একজন মুক্ত নারী হিসেবে বিবাহ করেন। হুররাম, সুলতান সুলাইমানের একাধিক পুত্রসন্তান ও একজন কন্যাসন্তানের মাতা। তার গর্ভে শাহজাদা সেলিম জন্ম নেন, যিনি সুলতান সুলাইমানের দীর্ঘ ৪৬ বছরের শাসনামলের পর তার স্থলাভিষিক্ত ও একাদশতম সুলতান পদে অধিষ্ট হন। তার অন্যান্য পুত্রগণ তার মৃত্যুর পূর্বেই মারা যায়; তার মেঝ পুত্র মুহাম্মদ (মেহমেদ) ১৫৪৩ সালে গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এবং বড় পুত্র শাহজাদা মুস্তাফাকে বিদ্রোহের কারণে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়, এর কারণ হিসেবে উজিরে আজম রুস্তম পাশার ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে ইতিহাসবিদগণ চিহ্নিত করেছেন। তার অন্য দুই পুত্র বায়েজিদ ও সেলিম পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হন। বায়েজিদ বড় ভাইয়ের পথে হাটলে তাকেও তার চার পুত্র সহকারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ফলে সিংহাসনে আরোহনে সেলিমের আর কোন বাধা রইলো না। যদিও সুলাইমান কোনো পুত্রকে উত্তরাধিকার ঘোষণা দেননি, তবুও আর কোন সন্তান বেঁচে না থাকায় শাহজাদা সেলিমই সিংহাসনে অধীষ্ট হন। পণ্ডিতগণ এই সমস্যাটিকে সাম্রাজ্যের পতন বলার চেয়ে 'সঙ্কট ও অভিযোজন' বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।[7][8][9] সুলাইমানের শেষ জীবন উসমানীয় ইতিহাসে খুবই ধুসর ছিল। সুলাইমানের পরের দশকগুলিতে, উসমানীয় সাম্রাজ্য উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলি অনুভব করতে শুরু করে। এ ঘটনাকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের রূপান্তর হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[8][10]:১১