প্রাচীন গ্রিসে পেডেরাস্টি
From Wikipedia, the free encyclopedia
প্রাচীন গ্রিসে পেডেরাস্টি ছিল সামাজিকভাবে গৃহীত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং অপেক্ষাকৃত কম বয়সী পুরুষের (সাধারণত কিশোর) ("এরোমেনোস") মধ্যে বিদ্যমান এক ধরনের প্রণয় সম্পর্ক।[1] এই ধরনের সমাজব্যবস্থা ছিল গ্রিসের আর্কেইক ও ক্ল্যাসিক্যাল যুগের বৈশিষ্ট্য।[2] কোনো কোনো গবেষক প্রাচীন গ্রিসের দীক্ষাব্যবস্থাকে (বিশেষত ক্রিটে প্রচলিত বয়ঃপ্রাপ্তির অনুষ্ঠান, যেটি সামরিক বাহিনীতে পুরুষের প্রবেশ ও জিউসের ধর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিল)এই ব্যবস্থার উৎস মনে করেন।[3]
প্রাচীন গ্রিসের সমাজে যে ব্যবস্থাটি "পেডেরাস্টিয়া" নামে পরিচিত ছিল তাকে গ্রিসের প্রাচীন সাহিত্য ও দর্শনে যুগপৎ প্রশংসা ও নিন্দা করা হয়েছে।[4] হোমারের মহাকাব্যে এর কোনো আনুষ্ঠানিক উল্লেখ পাওয়া যায় না। সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে গ্রিক সমকাম-মূলক সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে এটি বিকশিত হয়।[5] খেলাধুলা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নগ্নতার প্রদর্শনী ছিল এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। উচ্চবিত্ত সমাজে এই প্রথার দরুনই পুরুষরা বেশি বয়সে বিয়ে করত। এই নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হত এবং মেয়েরা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকত।[6] পেডেরাস্টির প্রভাব এতটাই ছিল যে একে বলা হত "নাগরিকদের মুক্ত সম্পর্কের সাংস্কৃতিক মডেলের আদর্শ"।[7]
গবেষকরা পেডেরাস্টির প্রসার ও ভূমিকার ব্যাপারে নানা মত পোষণ করেন। স্থানীয় প্রথা ও ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ এর সম্ভাব্য কারণ।[8] ইংরেজি ভাষায় "পেডেরাস্টি" ("pederasty") শব্দটি বর্তমান কালে কোথাও কোথাও শিশুদের প্রতি যৌন নির্যাতনের সমার্থক হিসেবের আইনত দণ্ডনীয় অপরাধমূলক। কিন্তু পএথেন্সের আইনে এটিকে ইচ্ছা বা বয়সের বিরুদ্ধে যৌন আচরণের মাপকাঠি হিসেবে ধরা হত না।[9] ক্ল্যাসিক্যাল ঐতিহাসিক রবিন অসবর্ন বলেছেন যে একুশ শতকের নৈতিক আদর্শের নিরিখে দেখলে "পেডেরাস্টিয়া"-সংক্রান্ত ঐতিহাসিক আলোচনা জটিলতর হয়ে উঠবে:
ঐতিহাসিকের কাজ হল গ্রিক জগতের সাহিত্য ও শিল্পকলার পিছনে লুকিয়ে থাকে ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অবশ্যই নৈতিক ইস্যুগুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা। ঐতিহাসিকের কাজ হল পেডেরাস্টি ও অন্যান্য বিষয়গুলিকে উপস্থাপন করা, যাতে বিশ্বে গ্রিসের গৌরবময় অতীতের মুখোমুখি আমরা হতে পারি। এর মধ্যে যাতে আমাদের মূল নীতিবোধগুলি পুনঃপ্রবর্তনের মুখে না পড়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।[10]