নাক্ষত্রিক বায়ুমণ্ডল
From Wikipedia, the free encyclopedia
নাক্ষত্রিক বাতাবরণ (ইংরেজি ভাষায়: Stellar atmosphere) বলতে তারার সবচেয়ে বাইরের অংশটিকে বোঝায়। এর সংজ্ঞা দুইভাবে দেয়া যায়, তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক। তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে হয়, তারার যে অংশটির কোন নিজস্ব শক্তির উৎস নেই বরং যেখানে কেবল কেন্দ্র থেকে আসা বিকিরণীয় শক্তির পুনর্বণ্টন ঘটে সেই অংশের নাম বাতাবরণ। আর ব্যবহারিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে হয়, তারার যে অংশটি বহির্মুখী বিকিরণের জন্য স্বচ্ছ, অর্থাৎ যে অংশ থেকে বিকিরণ বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে তারই নাম বাতাবরণ।[1]
সূর্যের মত একটি তারার একেবারে কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে যেতে থাকলে যে অঞ্চলগুলো দেখা যায় তা হল: কোর, বিকিরণীয় অঞ্চল, পরিচলনীয় অঞ্চল এবং সবশেষে বাতাবরণ। বাতাবরণটি তারার সমগ্র আকারের তুলনায় খুবই ছোট। বাতাবরণ নিজেও আবার কয়েকটি অংশ নিয়ে গঠিত। ভেতর থেকে বাইরের দিকে বাতাবরণের অংশগুলো হচ্ছে:
- আলোকমণ্ডল বা ফটোস্ফিয়ার বাতাবরণের সবচেয়ে ভেতরের এবং সবচেয়ে শীতল অংশ।[2] তারার পৃষ্ঠতল থেকে পলায়মান বিকিরণকে এই অঞ্চল অতিক্রম করেই ঊর্ধ্বতন স্তরগুলোতে পৌঁছাতে হয়। সূর্যের আলোকমণ্ডলের কার্যকরী তাপমাত্রা হচ্ছে ৫,৭৭০ থেকে ৫,৭৮০ কেলভিনের মধ্যে।[3] নাক্ষত্রিক কলঙ্ক অর্থাৎ বিদীর্ণ চৌম্বক ক্ষেত্রের অঞ্চলগুলো আলোকমণ্ডলেই অবস্থিত।[4]
- আলোকমণ্ডলের উপরেই থাকে বর্ণমণ্ডল বা ক্রোমোস্ফিয়ার। এই অঞ্চলের তাপমাত্রা আলোকমণ্ডলের তুলনায় ১০ গুণ পর্যন্ত বেশি হতে পারে।
- বর্ণমণ্ডলের উপরে থাকে ক্রান্তীয় অঞ্চল। এর তাপমাত্রা ব্যাসার্ধ্যের সাথে সাথে খুব দ্রুত বাড়ে, মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যেতে পারে।[5]
- নাক্ষত্রিক বাতাবরণের সবচেয়ে বাইরের স্তরের নাম কিরীট বা করোনা। এটি প্লাজমা দিয়ে গঠিত একটি সরু অঞ্চল যার তাপমাত্রা ১০ লক্ষ কেলভিনেরও বেশি।[6] প্রধান ধারার সকল তারার ক্রান্তীয় অঞ্চল ও কিরীট থাকলেও আরও বিবর্তিত অনেক তারায় এগুলো দেখা যায় না। দেখা গেছে কিছু দানবীয় তারা এবং মাত্র কয়েকটি অতিদানবীয় তারার কিরীট থাকে। জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের একটি সমাধানহীন সমস্যা হচ্ছে কিরীট কীভাবে এত উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত হয়। উত্তর নিহিত আছে চৌম্বক ক্ষেত্রে যদিও প্রক্রিয়াটি এখনও অজানা।[7]
একটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের আলোকমণ্ডল ঢেকে যায়, দেখা যায় কেবল বাতাবরণের অন্য স্তরগুলো।[2] গ্রহণের সময় সূর্যের বর্ণমণ্ডলকে গোলাপী আভাযুক্ত আর্ক হিসেবে[8] এবং কিরীটকে গুচ্ছবদ্ধ হেলো হিসেবে দেখা যায়। আবরণী বিষমতারায় এই একই ঘটনার কারণে দানবীয় তারার বর্ণমণ্ডল দৃশ্যমান হয়ে উঠতে পারে।[9] বাতাবরণের আকার তারার বিবর্তনীয় দশার উপর ভিত্তি করে একেক রকম হতে পারে, যেমন, প্রধান ধারার তারা, লোহিত দানব তারা, শ্বেত বামন এবং নিউট্রন তারার বাতাবরণের আকার যথাক্রমে ১০০ - ১০০০ কিলোমিটার, ১০ হাজার - ১ লক্ষ কিমি, ১০ মিটার এবং ১ মিটার।[1]