ডিরাক সমীকরণ
From Wikipedia, the free encyclopedia
ডিরাক সমীকরণটি পদার্থবিজ্ঞানের আপেক্ষিকতা তত্ত্বীয় কোয়ান্টাম বলবিদ্যাজাত একটি তরঙ্গ সমীকরণ যা মৌলিক স্পিন ১/২ কণিকা, যেমন- ইলেকট্রনের আচরণের এমন পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দেয় যা, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা এবং বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব উভয়ের সাথেই সামঞ্জস্যপূর্ণ।[1] ব্রিটিশ পদার্থবিদ পল ডিরাক ১৯২৮ সালে এটি আবিষ্কার করেন। গবেষণাগারে আবিষ্কার করার আগেই এই সমীকরণের সাহায্যে ডিরাক প্রতিকণা'র(বিশেষতঃ পজিট্রন) অস্তিত্ব সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। পরবর্তিতে এই ভবিষ্যদ্বাণীর সূত্র ধরে ইলেকট্রনের প্রতিকণা, পজিট্রনের আবিষ্কার আধুনিক তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় সাফল্যগুলির একটি।
যেহেতু ডিরাক সমীকরণটি মূলতঃ ইলেকট্রনের আচরণ ব্যাখ্যা করার উদ্দেশ্যে উদ্ভাবণ করা হয়, তাই এই নিবন্ধে ইলেকট্রন নিয়েই আলোচনা করা হবে। তবে সমীকরণটি স্পিন ১/২ কণিকা কোয়ার্ক'র বেলায়ও সমভাবে প্রযোজ্য হবে। যদিও প্রোটন এবং নিউট্রন মোলিক কণিকা নয়(এরা প্রত্যেকে একাধিক কোয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত) তবুও খানিকটা পরিবর্তিত ডিরাক সমীকরণ এদের আচরণও ব্যাখ্যা করতে পারে। ডিরাক সমীকরণের আরেকটি প্রকরণ হলো ম্যাজোরানা সমীকরণ, যা নিউট্রিনো'র আচরণ ব্যাখ্যা করতে পারবে বলে আশা করা হয়।
ডিরাক সমীকরণটি হচ্ছে,[2]
যেখানে,
- m হলো ইলেকট্রনের নিশ্চল ভর;
- c হলো আলোর দ্রুতি;
- p হলো ভরবেগ অপেক্ষক;
- হলো লঘুকৃত প্ল্যাংকের ধ্রুবক;
- x এবং t হলো যথাক্রমে স্থান এবং কাল স্থানাংক; আর
- হলো চার-উপাদান বিশিষ্ট তরঙ্গ অপেক্ষক (সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের শর্তানুসারে তরঙ্গ অপেক্ষক'কে সাধারণ স্কেলার রূপে নয়, বরং চার-উপাদানবিশিষ্ট স্পিনর হিসাবে প্রকাশ করতে হয়। উপাদানগুলির ভৌত তাৎপর্য নিচে বর্ণনা করা হয়েছে।)
গুলি হলো রৈখিক অপারেটর, এরা তরঙ্গ অপেক্ষকের উপর ক্রিয়া করে। এদের সবচেয়ে মোলিক বৈশিষ্ট্যটি হলো, এদের অবশ্যই পরস্পরের সাথে প্রতিবিনিময়যোগ্য হতে হবে। অন্যভাবে বললে,
যেখানে , এবং i ও j এর সম্ভাব্য মান ০ থেকে ৩ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। সবচেয়ে সহজ যে উপায়ে এই বৈশিষ্ট্যগুলি পাওয়া যাবে তা হলো: ৪ X ৪ ম্যাট্রিক্স। এরচেয়ে ক্ষুদ্রতর মাত্রার ম্যাট্রিক্সের কোন সেট পাওয়া সম্ভব নয়, যা প্রতিবিনিময় শর্তটি মেনে চলে। আসলে চতুর্মাত্রার ম্যাট্রিক্সের প্রয়োজনীয়তার ভৌতিক তাৎপর্য রয়েছে।
যদিও এর বিকল্প রয়েছে, তবু গুলোর জন্য একটা সুবিধাজনক পছন্দ হতে পারে এরকম:
এরা ডিরাক ম্যাট্রিক্স নামে পরিচিত। সম্ভাব্য সবগুলি বিকল্পই আসলে অনুরূপতা রূপান্তর দ্বারা সম্পর্কিত, কারণ তত্ত্বীয়ভাবে উপস্থাপন করতে ডিরাক স্পিনরের কোন বিকল্প নাই।
ডিরাক সমীকরণটি একটি একক ইলেকট্রনের সম্ভাব্যতার বিস্তার ব্যাখ্যা করে। এটা একটা একক-কণা তত্ত্ব; অন্যকথায়, এতে কণাসমূহের সৃষ্টি ও ধ্বংস নিয়ে কিছু বলা হয় না। এটি ইলেকট্রনের চৌম্বক ভ্রামকের উৎসের একটি ভালো ব্যাখ্যা দেয় এবং পারমাণবিক বর্ণালীরেখা'য় দৃষ্ট সূক্ষ্মতর গঠনেরও ব্যাখ্যা দেয়। এটি ইলেকট্রনের স্পিনকে ব্যাখ্যা করতে পারে। সমীকরণটির চারটি সমাধানের দুটি ইলেকট্রনের দুইটি স্পিন দশাকে ব্যাখ্যা করে। কিন্তু বাকি দুটি সমাধান একটু অদ্ভুতভাবে অসীমসংখ্যক কোয়ান্টাম দশার অস্তিত্ব সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে যেখানে ইলেকট্রনের শক্তি হবে ঋণাত্মক। এই অদ্ভুৎ ফলাফলকে ব্যাখ্যা করতে ডিরাক "গহ্বর তত্ত্ব" নামের একটি অসাধারণ তত্ত্বের অবতারনা করেন, যার সূত্রধরে তিনি ধনাত্মক আধানযুক্ত ইলেকট্রনের অনুরূপ কণার অস্তিত্ব সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। ডিরাক প্রথমে মনে করেছিলেন যে, এই কণাগুলো বোধ হয় প্রোটন। কিন্তু তার তত্ত্বমতে কণাগুলোর আধানই কেবল ইলেকট্রনের সমান হবে তা নয়, এদের ভরও হতে হবে ইলেকট্রনের সমান। তাই ১৯৩২ সালে পজিট্রন আবিষ্কৃত হওয়ার পর যখন দেখা গেল যে, তার প্রাথমিক অনুমানটি ভুল ছিল, বরং তার তত্ত্বের ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছে, তখন ডিরাক একটু লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলেন। পরে তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হল যে, কেন তিনি অনাগত পজিট্রনকে সঠিক ভরসহ অনুমান করেননি, তিনি বললেন, "নির্ভেজাল কাপুরুষতা!" তবে সে যাই হোক, এতে করে ১৯৩৩ সালে তার নোবেল পুরস্কার ভাগাভাগি করে নেয়াটা কিন্তু থেমে থাকেনি।
এত সাফল্য সত্ত্বেও ডিরাকের তত্ত্বের একটা ত্রুটি হলো, এখানে কণাগুলির সৃষ্টি বা ধ্বংসের সম্ভাবনাকে আমল দেয়া হয়নি, যা কিনা আপেক্ষিকতা তত্ত্বের একটি মৌলিক ফলাফল। পরবর্তিতে তার তত্ত্বটাকে কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্বে রূপান্তরিত করে এই ত্রুটিটি দূর করা হয়েছে। কোয়ান্টায়িত তাড়িৎ-চৌম্বক ক্ষেত্র যোগ করলে এই তত্ত্বটি কোয়ান্টাম ইলেকট্রো-গতিবিদ্যা তত্ত্বে রূপ নেয়। তাছাড়া ডিরাক সমীকরণটি কেবল ধনাত্মক শক্তিযুক্ত কণার আচরণ ব্যাখ্যা করতে পারে, ঋণাত্মক শক্তির কণাকে ব্যাখ্যা করতে পারে না।
স্পিন ৩/২ কণার জন্য অনুরূপ সমীকরণটির নাম হলো রারিটা-শুইঙ্গার সমীকরণ।