রুডল্ফ ফিরখো
একজন জার্মান চিকিৎসক / From Wikipedia, the free encyclopedia
রুডল্ফ লুডভিগ কার্ল ফিরখো (জার্মান: Rudolf Ludwig Karl Virchow;১৩ অক্টোবর ১৮২১-৫ সেপ্টেম্বর ১৯০২) একজন জার্মান চিকিৎসক, নৃবিজ্ঞানী, রোগবিজ্ঞানী, জীববিজ্ঞানী, লেখক,সম্পাদক ও রাজনীতিক ছিলেন। তিনি আধুনিক রোগবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও তিনি সামাজিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা। তার সহকর্মীরা তাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সম্রাট বা পোপ অব মেডিসিন অভিহিত করেন।[1][2][3] ১৮৯২ সালে তিনি রয়েল সোসাইটির কপলি পদক লাভ করেন। তিনি রাজকীয় সুইডিশ বিজ্ঞান একাডেমির একজন বিদেশি সদস্য ছিলেন। তিনি প্রুশীয় বিজ্ঞান একাডেমিরও সদস্য ছিলেন। কিন্তু নিজেকে "ফন ফিরখো" নামে পরিচয় দিতে তিনি সংকোচ বোধ করতেন।
রুডল্ফ ফিরখো | |
---|---|
জন্ম | (১৮২১-১০-১৩)১৩ অক্টোবর ১৮২১ |
মৃত্যু | ৫ সেপ্টেম্বর ১৯০২(1902-09-05) (বয়স ৮০) |
সমাধি | অল্টার সেন্ট ম্যাথিয়াস কার্শশফ, শোনেবুর্গ ৫২.২৮° উত্তর ১৩.২২° পূর্ব / 52.28; 13.22 |
জাতীয়তা | প্রুশীয় |
শিক্ষা | ফ্রেডরিখ ভিলহেলম বিশ্ববিদ্যালয় (এমডি, (১৮৪৩) |
পরিচিতির কারণ | কোষতত্ত্ব কোষ রোগবিজ্ঞান জীবসৃজন ফিরখোস ট্রায়াড |
দাম্পত্য সঙ্গী | ফার্দিনান্দ রোজালি মেয়ার(রোজ ফিরখো) |
পুরস্কার | কপলি পদক (১৮৯২) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | চিকিৎসা নৃতত্ত্ব |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | শারিতে উর্জবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় |
অভিসন্দর্ভের শিরোনাম | De rheumate praesertim corneae (১৮৪৩) |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | ইয়োহানেস পিটার মুলার |
অন্যান্য উচ্চশিক্ষায়তনিক উপদেষ্টা | রবার্ট ফ্রোরিয়েপ |
উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী | আর্নস্ট হেকেল এডউইন ক্লেবস ফ্রাঞ্জ বোয়াস অ্যাডলফ কুসমাউল ফ্রেডরিখ ড্যানিয়েল ফন রেকলিঙ্গার ম্যাক্স ভেস্তেনহোফার উইলিয়াম অসলার উইলিয়াম ওয়েলখ |
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেন | এদুয়ার্দ হিটজিগ চার্লস স্কট শেরিংটন পল ফার্মার |
স্বাক্ষর | |
ফিরখো ইয়োহানেস পিটার মুলারের অধীনে ফ্রেডরিখ ভিলহেলম বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি শারিতে হাসপাতালে রবার্ট ফ্রোরিপ এর অধীনে কাজ করেন। পরবর্তীতে উক্ত হাসপাতালে ব্যবচ্ছেদকরণ প্রদর্শক (প্রোসেক্টর) হিসেবে তিনি ফ্রোরিপের স্থলাভিষিক্ত হন। ১৮৪৭-১৮৪৮ সালে তিনি ঊর্ধ্ব সিলেসিয়া অঞ্চলে টাইফাস জ্বরের মড়ক নিয়ে গবেষণা করেন। এটি জার্মানিতে জনস্বাস্থ্যের ভিত্তি গড়ে দেয়। এসময়ই ফিরখো বলেন, "চিকিৎসাবিজ্ঞান একটি সামাজিক বিজ্ঞান এবং রাজনীতি একটি বৃহৎ পরিসরের চিকিৎসাবিজ্ঞান ছাড়া আর কিছুই নয়।" ফিরখো ১৮৪৮ সালের বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেন। যার ফলে পরবর্তী বছর তিনি শারিতে থেকে বহিষ্কৃত হন। তিনি অতঃপর ডাই মেডিজিনিশ্চে রিফর্ম (চিকিৎসাবিজ্ঞান সংক্রান্ত সংস্কার) নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি ১৮৪৯ সালে ভুর্জবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রোগবৈজ্ঞানিক শারীরবিদ্যা বিভাগের প্রথম সভাপতি হন। পাঁচ বছর পরে শারিতে হাসপাতাল তাকে সদ্য প্রতিষ্ঠিত রোগবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়। তিনি "ডয়েচে ফোর্টরিশপার্টেই"(প্রগ্রেস পার্টি) নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রুশীয় হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের সদস্যপদে নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি রাইখস্ট্যাগে একটি আসনে জয়লাভ করেন। অটো ফন বিসমার্কের অর্থনৈতিক নীতির প্রতি তার বিরোধিতা "সসেজ সংঘাত" বা সসেজ ডুয়েলে রূপ নেয়। বিসমার্ককে ক্যাথলিকবিরোধী প্রচারণায় অবশ্য তিনি সাহায্য করেন, যাকে তিনি "কুলটুরকাম্ফ" বা সাংস্কৃতিক যুদ্ধ নাম দেন।[4]
তিনি একজন যশস্বী লেখক, যিনি প্রায় ২০০০ এর উপর রচনা প্রকাশ করেন।[5] তার কোষীয় রোগবিজ্ঞান (১৮৫৮) গ্রন্থ আধুনিক রোগবিজ্ঞানের মূল পরিগণিত হয়। ঐ বইয়ে তিনি কোষতত্ত্বের তৃতীয় মতবাদ প্রদান করেন। সেটি হলো- অমনিস সেলুলা ই সেলুলা (কোষ থেকেই কোষের উৎপত্তি হয়)। [6] তিনি ১৮৪৯ সালে ফিজিকালিশ্চ মেডিসিনিশে গেসেলশাফট ও ১৮৯৭ সালে ডয়েচে গেসেলশাফট ফুর প্যাথলজি সহ-প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৮৪৭ সালে প্রথম বেনো রেইনহার্ডের সঙ্গে আর্কাইভ ফুর প্যাথোলজিশ্চে অ্যানাটমি উন্ড ফিজিওলজি উন্ড ফুর ক্লিনিশে মডার্ন ও জাইটশ্রুফট ফুর এথনোলজি পত্রিকা বের করেন।[7] দ্বিতীয় পত্রিকাটি জার্মান নৃতত্ত্ব সমিতি ও বার্লিন নৃতত্ত্ব, এথনোলজি ও প্রাক-ইতিহাস সমিতি এখনো প্রকাশ করে। তিনি ঐ সমিতিগুলোরও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
তিনি লিউকেমিয়া, কর্ডোনা, অকরোনোসিস, এমবোলিজম ও থ্রম্বোসিসসহ বিভিন্ন রোগের প্রথম বর্ণনা প্রদান করেন। তিনি ক্রোমাটিন, প্যারেনকাইমা,অ্যাজেনেসিস, নিউরোগলিয়া, অস্টিয়েডসহ বিভিন্ন শব্দ প্রবর্তন করেন। ফিরখোস নোড, ফিরখো রবিন স্থান, ফিরখো সেকেল সিন্ড্রোম,ফিরখোর ট্রায়াডের নামকরণ তার নামে করা হয়েছে। তিনি Trichnella spiralis নামক গোলকৃমির জীবনচক্রের বর্ণনা দেন, যা মাংস পর্যবেক্ষণকে (Meat inspection) প্রভাবিত করে। ফিরখো ময়নাতদন্তের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।[8]