উইলেম আইন্টহোভেন
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী (১৯২৪) ওলন্দাজ শারীরবিজ্ঞানী / From Wikipedia, the free encyclopedia
উইলেম আইন্টহোভেন (ওলন্দাজ: Willem Einthoven) একজন ওলন্দাজ শারীরবিদ যিনি হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ধর্মগুলি আবিষ্কারের জন্য ১৯২৪ সালে শারীরবিদ্যা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি হৃৎবিদ্যুৎলেখ নামক একটি ব্যবহারিক ডাক্তারি যন্ত্র উদ্ভাবন করে সেটির সাহায্যে তাঁর গবেষণাগুলি সম্পাদন করেন এবং হৃদরোগ নির্ণয়ে বিপ্লবের সূচনা করেন।[1][2]
উইলেম আইন্টহোভেন | |
---|---|
জন্ম | (১৮৬০-০৫-২১)২১ মে ১৮৬০ সেমারাং, ওলন্দাজ পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ (বর্তমান ইন্দোনেশিয়া) |
মৃত্যু | ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯২৭(1927-09-29) (বয়স ৬৭) |
জাতীয়তা | ওলন্দাজ |
মাতৃশিক্ষায়তন | উট্রেখট বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ |
|
পুরস্কার | চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার (১৯২৪) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | শারীরবিজ্ঞান |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয় |
আইন্টহোভেন ১৮৬০ সালের ২১শে মে তৎকালীন ওলন্দাজ পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের (বর্তমান ইন্দোনেশিয়া) জাভা দ্বীপের সেমারাং শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন সেখানকার একজন পৌর সরকারি চিকিৎসক, যদিও তার আগে তিনি সামরিক চিকিৎসকের কাজ করতেন। ছয় বছর বয়সে আইন্টহোভেনের বাবা মারা গেলে তিনি তার চার বছর পরেই তাঁর মা ও পাঁচ ভাইবোনের সাথে পরিবারের সাথে নেদারল্যান্ডসের উট্রেখট শহরে প্রত্যাবর্তন করেন। এবং সেখানে উট্রেখট বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করে ১৮৮৫ সালে ২৫ বছর বয়সে ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন। এর পরের বছরই ১৮৮৬ সালে তিনি লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং মৃত্যু অবধি এখানেই কর্মরত ছিলেন। ১৮৯৫ সালে তিনি হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক প্রবাহের ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করেন। ১৯০৩ সালে তিনি প্রথম তারের গ্যালভানোমিটার উদ্ভাবন করেন, যেটির নাম আইন্টহোভেন গ্যালভানোমিটার। এটির সাহায্যে তিনি হৃৎপিণ্ডের সংকোচনগুলির সময় বৈদ্যুতিক বিভবের ওঠানামা সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করতে সক্ষম হন। তিনি এই পদ্ধতিটির নাম দেন ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম তথা হৃৎবিদ্যুৎলেখ। আইন্টহোভেনের হৃৎবিদ্যুৎলেখ যন্ত্রটি ছিল শুরুর দিকের একটি যন্ত্র, যেখানে রোগীকে তার দুই হাত ও দুই পা লবণ-জলের দ্রবণে ডুবিয়ে রাখতে হত। যন্ত্রটি একটি লেখচিত্র কাগজে চলন্ত রেখা আঁকত। এভাবে রক্ত সঞ্চালনকারী হৃৎপিণ্ডের ছন্দটি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভবপর হয়েছিল। আইন্টহোভেনের হৃৎবিদ্যুৎলেখ যন্ত্রটি ছিল দুইটি কক্ষের সমান বড় ও এর ওজন ছিল ৬০০ পাউন্ড। সময়ের সাথে সাথে হৃৎবিদ্যুৎলেখ যন্ত্রটির আকার ও ওজন ছোট হয়ে আসে। হাত-পা ও বুকে তড়িৎদ্বার বা ইলেকট্রোড বসিয়ে একই রকম পর্যবেক্ষণের কাজ করা সম্ভব হয়। বর্তমানে হৃৎবিদ্যুৎলেখ যন্ত্রটি কাগজে নয়, বরং পরিগণক বা কম্পিউটার যন্ত্রের প্রদর্শক যন্ত্রের (মনিটর) পর্দাতে চলমান সবুজ রেখা ও পৌনঃপুনিক পিপ-পিপ ধ্বনির দ্বারা ফলাফল প্রকাশ করে। বর্তমান শরীরে পরিধানযোগ্য হৃৎবিদ্যুৎ পর্যবেক্ষণ যন্ত্রও (হল্টার মনিটর) উদ্ভাবিত হয়েছে।
আইন্টহোভেন ১৯০৮ থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত তাঁর যন্ত্রের সাহায্যে প্রাপ্ত হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক ধর্মের নথিগুলি গবেষণা করে হৃৎপিণ্ড ও তার ধমনী ও শিরাগুলির ব্যাপারে জ্ঞানের প্রভূত উন্নতিসাধন করেন। তিনি তড়িৎদ্বারগুলির বিন্যাসে বিকাশ সাধন করেন। বর্তমানে হৃৎবিদ্যুৎলিখনে যে তড়িৎদ্বার বা ইলেকট্রোডগুলি ব্যবহার করা হয়, সেগুলির তাঁর কাজের উপর ভিত্তি করেই নির্মাণ করা হয়েছে। ১৯২৪ সালে আইন্টহোভেন তাঁর অভিনব পথপ্রদর্শী গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
এরপর তিনি ব্রিটিশ চিকিৎসক স্যার টমাস লিউইসের সাথে একত্রে তাঁর যন্ত্রটির ডাক্তারি প্রয়োগের উন্নতি সাধন করেন, হৃৎবিদ্যুৎলিখন ক্ষেত্রটিতে বিপ্লব সাধন করেন এবং আধুনিক হৃদবিজ্ঞান ক্ষেত্রের মৌলিক রূপান্তর ঘটান। নোবেল বিজয়ের তিন বছর পরে ১৯২৭ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর তিনি লাইডেন শহরে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর গবেষণাকর্ম রক্তচাপ ও বৃহত্তর হৃৎ-রক্তবাহ ব্যবস্থার অধ্যয়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন হৃদরোগ নির্ণয় ও এগুলির প্রকৃতি অনুধাবনে তাঁর তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক অবদান আজও মাইলফলক হয়ে আছে।