ইলেকট্রন ক্যাপচার
From Wikipedia, the free encyclopedia
ইলেক্ট্রন ক্যাপচার (কে-ইলেক্ট্রন ক্যাপচার, কে-ক্যাপচার, বা এল-ইলেক্ট্রন ক্যাপচার, এল-ক্যাপচার) হলো এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ পরমাণুর প্রোটন সমৃদ্ধ নিউক্লিয়াস সাধারণত কে বা এল শক্তিস্তর থেকে একটি অভ্যন্তরীণ পারমাণবিক ইলেক্ট্রন গ্রহণ করে। এই প্রক্রিয়া, একটি পারমাণবিক প্রোটনকে নিউট্রনে রূপান্তরিত করে এবং একই সাথে একটি ইলেক্ট্রনের নিউট্রিনোর নির্গমন ঘটায়।
যেহেতু নির্গত একক নিউট্রিনোটি পুরো অবক্ষয় শক্তি বহন করে, তাই এতে এই একক বৈশিষ্ট্যযুক্ত শক্তি থাকে। একইভাবে, প্রতিপদার্থ নিঃসরণের ভরবেগ অপত্য পরমাণুটিকে একক বৈশিষ্ট্যযুক্ত ভরবেগ দিয়ে প্রতিক্ষিপ্ত করে।
ফলস্বরূপ, অপত্য নিউক্লাইড যদি উত্তেজিত অবস্থায় থাকে তবে এটি নিম্ন শক্তিস্তরে পরিবর্তীত হয়। সাধারণত, এই রূপান্তরকালে একটি গামা রশ্মি নির্গত হয় তবে, এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ রূপান্তরের মাধ্যমে পারমাণবিক অব-উত্তেজিতকরণও ঘটতে পারে।
পরমাণু থেকে একটি অভ্যন্তরীণ ইলেক্ট্রন ক্যাপচারের পরে, একটি বহি:স্থ ইলেক্ট্রন, ক্যাপচারকৃত ইলেক্ট্রনটিকে প্রতিস্থাপন করে এবং এক বা একাধিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত এক্স-রে ফোটন নির্গত করে। মাঝে মধ্যে অগার ক্রিয়ার ফলেও ইলেক্ট্রন ক্যাপচার সংঘটিত হয় যেখানে, পরমাণুর ইলেক্ট্রনগুলির মধ্যে কম শক্তিস্তরে যাওয়ার প্রবণতায় সৃষ্ট পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার কারণে পরমাণুর শক্তিস্তর থেকে একটি ইলেকট্রন বের হয়ে যায়।
ইলেক্ট্রন ক্যাপচারের ফলে, পারমাণবিক সংখ্যা এক হ্রাস পায়, নিউট্রন সংখ্যা এক বৃদ্ধি পায় এবং ভর সংখ্যা অপরিবর্তীত থাকে। সাধারণ ইলেকট্রন ক্যাপচার নিজে থেকেই একটি নিরপেক্ষ পরমাণু তৈরী করে যেখানে, ইলেকট্রনের শক্তিস্তর থেকে ইলেক্ট্রনের ক্ষয় ধনাত্মক পারমাণবিক আধান ক্ষয় দ্বারা সাম্যাবস্থা পায়। তবে, পরবর্তীকালে অগার ইলেকট্রন নিঃসরণের মাধ্যমে একটি ধনাত্মক পারমাণবিক আয়ন সৃষ্ট হতে পারে।
ইলেকট্রন ক্যাপচার দুর্বল নিউক্লিয় বলের অর্থাৎ চারটি মৌলিক বলের একটির উদাহরণ।
ইলেক্ট্রন ক্যাপচার হলো নিউক্লিয়াসে প্রোটনের আপেক্ষিক অতি প্রাচুর্য সম্পন্ন আইসোটোপগুলির প্রধান অবক্ষয় প্রণালী, তবে আইসোটোপ এবং এর সম্ভাব্য অপত্যের (একটি কম ধনাত্মক আধান সম্পন্ন আইসোবার) মধ্যে শক্তির পার্থক্য একটি নিউক্লাইড ক্ষয় করে পজিট্রন নিঃসরণের জন্য পর্যাপ্ত নয়। ইলেক্ট্রন ক্যাপচ্যার হলো তেজস্ক্রিয় আইসোটোপগুলির জন্য বিকল্প অবক্ষয় প্রণালী যা পজিট্রন নিঃসরণের মাধ্যমে অবক্ষয়ের জন্য পর্যাপ্ত শক্তি সম্পন্ন। ইলেক্ট্রন ক্যাপচারকে কখনও কখনও এক ধরনের বিটা ক্ষয় হিসাবে ধরা করা হয় কেননা, দুর্বল নিউক্লিয় বল দ্বারা মধ্যস্থতাকৃত প্রক্রিয়াদ্বয়ের প্রাথমিক পারমাণবিক প্রক্রিয়া একই। নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানে বিটা ক্ষয় এক ধরনের তেজস্ক্রিয় ক্ষয় যেখানে একটি পারমাণবিক নিউক্লিয়াস থেকে একটি বিটা কণিকা (স্থির শক্তিযুক্ত ইলেক্ট্রন বা পজিট্রন) এবং একটি নিউট্রিনো নির্গত হয়। ইলেক্ট্রন ক্যাপচারকে কখনও কখনও বিপরীত বিটা ক্ষয় বলা হয়,[1] যদিও এই শব্দটি সাধারণত একটি প্রোটনের সাথে একটি ইলেক্ট্রন প্রতিপদার্থের মিথস্ক্রিয়াকে বোঝায়।[2]
মাতৃ পরমাণু এবং অপত্য পরমাণুর শক্তি পার্থক্য ১.০২২ এর চেয়ে কম হলে, পজিট্রন নির্গমন প্রতিষিদ্ধ হয়ে যায় কারণ এক্ষেত্রে ক্ষয় করার জন্য পর্যাপ্ত অবক্ষয় শক্তি পাওয়া যায় না এবং এভাবে ইলেকট্রন ক্যাপচার হলো শুদ্ধ অবক্ষয় প্রণালী। উদাহরণস্বরূপ, রুবিডিয়াম-৮৩ (৩৭ টি প্রোটন, ৪৬ টি নিউট্রন) ইলেকট্রন ক্যাপচারের মাধ্যমে শুদ্ধভাবে ক্রিপটন-৮৩ তে (৩৬ টি প্রোটন, ৪৭ টি নিউট্রন) ক্ষয়ে যায় (শক্তির পার্থক্য বা অবক্ষয় শক্তি প্রায় ০.৯ MeV)।