আল-কায়েদা
১৯৮৮-এ প্রতিষ্ঠিত আন্তঃদেশীয় সালাফিবাদ সংগঠন / From Wikipedia, the free encyclopedia
আল-কায়েদা অথবা তানজিম কায়েদাতুল জিহাদ (আরবি: تنظيم قاعدة الجهاد ; রোমান: al-Qāʿida; অর্থ: বেস বা সেনা ঘাঁটি) হল সালাফি জিহাদবাদের নেতৃত্বে সংগঠিত একটি সুন্নি সর্ব-ইসলামবাদী বৈশ্বিক জিহাদি সংগঠন, যারা মুসলিম বিশ্বকে খিলাফত নামী একটি সুপার ন্যাশনাল ইসলামি রাষ্ট্রের অধীনে একত্র করার জন্য বিশ্বব্যাপী একটি ইসলামি বিপ্লবের নেতৃত্ব দিচ্ছে। [41][42][43] দলটির সদস্যদের বেশিরভাগই আরবদের সমন্বয়ে গঠিত; তবে এটি অন্যান্য জাতির লোককেও অন্তর্ভুক্ত করে।[44] প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আল-কায়েদা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক ও বেসামরিক সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে: ১৯৯৮ সালের মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলা, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হামলা ও ২০০২ সালের বালি বোমা হামলা। সংগঠনটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা (ন্যাটো) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একটি জিহাদি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে মনোনীত হয়েছে।
আল-কায়েদা | |
---|---|
تنظيم قاعدة الجهاد | |
নেতা | ওসামা বিন লাদেন † (১৯৮৮–২০১১) আয়মান আল-জাওয়াহিরি † (২০১১–২০২২) সাইফ আল-আদেল (দে ফাক্তো, ২০২২–বর্তমান) |
অপারেশনের তারিখ | ১৯৮৮–বর্তমান |
গোষ্ঠী | তালিকা
|
সক্রিয়তার অঞ্চল | তালিকা
|
মতাদর্শ | |
আকার | তালিকা
|
মিত্র | |
বিপক্ষ | বিরোধী রাষ্ট্র: |
খণ্ডযুদ্ধ ও যুদ্ধ | তালিকা
|
যার দ্বারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে মনোনীত | তালিকা দেখুন |
পূর্বসূরী মাকতাবাতুল খিদমাহ (MAK) |
সংগঠনটি ১৯৮৮ সালে পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত একাধিক বৈঠকে প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে ড. আব্দুল্লাহ আজ্জাম, ওসামা বিন লাদেন, মুহাম্মদ আতেফ , আয়মান আল জাওয়াহিরি এবং সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের অন্যান্য প্রবীণ মুজাহিদিন উপস্থিত ছিলেন।[45] মাকতাবাতুল খিদমাহ নেটওয়ার্কের উপর ভিত্তি করে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদস্যরা জিহাদের একটি বৈশ্বিক প্লাটফর্ম হিসাবে কাজ করার জন্য আল-কায়েদা নামে একটি সংগঠন তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন।[46] প্রতিষ্ঠাকালীন সোভিয়েত বিরোধী গ্রুপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করায় এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সোভিয়েত ইউনিয়ন বিরোধী ব্লগের সমর্থন পায়। আফগান যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরোধী গ্রুপগুলিকে ব্যাপক সমর্থন ও সহায়তা করে।[46]
১৯৮৯ সালে সোভিয়েতদের প্রত্যাহারের পর ১৯৯০–৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে ইরাকী সেনাদের বিপক্ষে সৌদি আরবের হয়ে লড়াই করার জন্যে উসামা বিন লাদেন সৌদি রাজাকে মুজাহিদদের সমর্থনের প্রস্তাব দেন। তার প্রস্তাব সৌদি সরকার প্রত্যাখ্যান করে এবং এর পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সাহায্য চায়। সৌদি আরবের ভূমিতে মার্কিন সেনাদের অবস্থান বিন লাদেন সৌদি রাজপরিবারের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করতে প্ররোচিত করে। এই কাজটিকে তিনি তাকফির-যোগ্য ( ইসলাম থেকে ধর্মত্যাগী) বলে নিন্দা করেন। ১৯৯২–১৯৯৬ সময়কালে আল-কায়েদা ১৯৯৬ সালে বহিষ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত সুদানে সদর দফতর প্রতিষ্ঠা করে। এরপর তারা তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে ঘাঁটি স্থানান্তরিত করে এবং পরবর্তীতে বিশ্বের অন্যান্য অংশে; প্রাথমিকভাবে মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বিস্তৃত হয়।
১৯৯৬ এবং ১৯৯৮ সালে বিন লাদেন মার্কিন সৈন্যদের সৌদি আরব ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে দুইটি ফতওয়া জারি করেছিলেন। আল-কায়েদা কেনিয়া ও তানজানিয়ায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে ১৯৯৮ সালে বোমা হামলা চালায় এবং এতে ২২৪ জন নিহত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান এবং সুদানে অবস্থিত আল কায়েদার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে অপারেশন ইনফিনিট রিচ চালু করে সেই হামলার প্রতিশোধ নেয়। ২০০১ সালে আল-কায়েদা ১১ ই সেপ্টেম্বরের হামলা চালায়, যার ফলে প্রায় ৩,০০০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়াও এতে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বাজারের ক্ষতি হয়। এই হামলার জবাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং স্বাধীন আফগানিস্তানে আক্রমণ করে ক্ষমতাসীন তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং আল কায়েদাকে ধ্বংস করতে বেসামরিক আফগান জনগণের ওপর ব্যাপক বোমা বর্ষণ শুরু করে। একটি রিপোর্ট মতে, মার্কিন জোটের বাহিনী আফগানিস্তানে বোমা হামলা করে প্রায় ৪৭ হাজার বেসামরিক লোক হত্যা করেছে। এছাড়া আফগান জাতীয় বাহিনী এবং তালেবানের লক্ষাধিক সেনাসদস্য নিহত হয়েছে।[47]
২০০৩ সালে একটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ইরাকে আক্রমণ করে আগ্রাসন চালিয়ে বার্থবাদী শাসনকে উৎখাত করে, যা আল-কায়েদার সাথে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ তুলে ভুলভাবে অন্যায় আক্রমণ করা হয়। এরপরের বছর ২০০৪ সালে আল-কায়েদা তার ইরাকি আঞ্চলিক শাখা চালু করে। প্রায় এক দশক ধরে তাকে অনুসরণ করার পরে মার্কিন সামরিক বাহিনী ২০১১ সালের মে মাসে পাকিস্তানে বিন লাদেনকে হত্যা করে।
আল কায়েদার সদস্যরা বিশ্বাস করে যে, একটি ইহুদি- খ্রিস্টান জোট (যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে) ইসলাম ও মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে।[48][49] সালাফি জিহাদি হিসেবে আল-কায়েদার সদস্যরা বিশ্বাস করে যে, অ-যোদ্ধাদের হত্যা করা ধর্মীয়ভাবে অনুমোদিত। আল-কায়েদা মানবসৃষ্ট সংবিধান বা আইনের বিরোধিতা করে এবং সেগুলিকে একচেটিয়াভাবে একটি কঠোর শরিয়া (ইসলামী ধর্মীয় আইন, যা ঐশ্বরিক আইন হিসাবে বিবেচিত) দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে চায়।[50] কায়েদা বৈশিষ্ট্যগতভাবে আক্রমণ সংগঠিত করে; যেমন: আত্মঘাতী হামলা ও একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে একযোগে বোমা হামলা করা।
আল-কায়েদার ইরাক শাখা, যা পরে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্টে রূপান্তরিত হয় এটি ইরাকি বিদ্রোহ চলাকালীন ইরাকি শিয়াদের বিরুদ্ধে অসংখ্য সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য দায়ী ছিল।[51][52] আল-কায়েদা মতাদর্শীরা মুসলিম দেশগুলিতে সমস্ত বিদেশী ও ধর্মনিরপেক্ষ প্রভাবের হিংসাত্মক অপসারণের দাবি করে এবং তারা এদের দুর্নীতির বিচ্যুতি হিসাবে নিন্দা করে।[53][54][55][56] ২০১১ সালে বিন লাদেনের মৃত্যুর পর আল কায়েদা তার হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল। উসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর ২০২২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই দলটির নেতৃত্বে ছিলেন মিশরীয় ইসলামপন্থী নেতা ডা. আয়মান আল-জাওয়াহিরি।[57]
২০২২ সালের ৩১ জুলাই আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় আয়মান আল-জাওয়াহিরি মৃত্যু বরণ করেন। তবে তালেবান সরকার আফগানিস্তানে আল কায়েদা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরির উপস্থিতির বিষয় অস্বীকার করেছিল।[58] জাওয়াহিরির মুত্যুর পর তার দুই ঘনিষ্ঠ সাইফ আল আদেল ও আব্দুর রহমান আল মাগরেবির মধ্যে একজন আল কায়েদার সম্ভাব্য প্রধান নেতা নির্বাচিত হতে পারেন বলে ধারণা করা হয়। তবে স্বাভাবিকভাবে এটি বিশ্বাস করা হয় যে, সাইফ আল আদেলকে আল কায়েদার বর্তমান আমির নির্বাচিত করা হয়েছে।[59]