বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারী
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ ব্যাধির মহামারীর বিবরণ / From Wikipedia, the free encyclopedia
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস রোগের মহামারী বলতে বাংলাদেশে এটির প্রাদুর্ভাব ও দ্রুত বিস্তারের চলমান ঘটনাটিকে নির্দেশ করে, যা বর্তমানে চলমান বিশ্বজুড়ে মহামারীর একটি অংশ। করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯ (কোভিড-১৯) নামক একটি রোগ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণে এই বৈশ্বিক মহামারীটির সৃষ্টি হয়েছে। গুরুতর তীব্র শ্বাসযন্ত্রীয় রোগলক্ষণসমষ্টি সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস ২ (সার্স-কোভ-২) নামক সংক্রামক ধরনের একটি জীবাণুই প্রকৃতপক্ষে, মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়ে মানবদেহে এই রোগটি সৃষ্টি করে।
এই নিবন্ধটিতে সাম্প্রতিক রোগের বৈশ্বিক মহামারী সম্পর্কিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। ঘটনার অগ্রগতির সাথে সাথে এই ঘটনাটি সম্পর্কিত তথ্যগুলি খুব দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে। যদিও এই নিবন্ধটি বেশ দ্রুত হালনাগাদ করা হবে, কিন্তু এটি এই বিষয়টি নিশ্চিত করে না যে এখানে রোগের বৈশ্বিক মহামারী সম্পর্কিত সর্বশেষ সকল তথ্য পাওয়া যাবে। |
২০২০ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী | |
---|---|
রোগ | কোভিড-১৯ |
ভাইরাসের প্রজাতি | সার্স-কোভ-২ |
প্রথম সংক্রমণের ঘটনা | |
আগমনের তারিখ | ৮ মার্চ ২০২০[3] (৪ বছর, ২ মাস ও ৫ দিন) |
উৎপত্তি | উহান, হুবেই প্রদেশ, চীন |
নিশ্চিত আক্রান্ত | ১৭,৩১,৫২৪[4] |
সুস্থ | ১৫,৬০,০০৬[4] |
মৃত্যু | ২৮,২৭৩[4] |
মৃত্যুর হার | ১.৬৩% |
অঞ্চল | |
প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট | |
corona |
চীন থেকে প্রথম উৎপত্তি হওয়ার পর; বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কথা প্রথম জানা যায় ৮ই মার্চ, ২০২০ সালে (৪ বছর, ২ মাস ও ৫ দিন আগে) এবং প্রথম মৃত্যুটি ঘটে ১৮ই মার্চ, ২০২০ সালে।[3] এরপরের দুই মাস দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ৩ অংকের মধ্যে ছিল যা বাড়তে বাড়তে জুলাই মাসে সর্বোচ্চতে পৌঁছেছিল। ২ জুলাই তারিখে সর্বোচ্চ ৪০১৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল।[4]
ধারণা করা হয়েছিল শীতকালে এ ভাইরাসের প্রকোপ আরও বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে এর বিপরীত অবস্থাই দেখা গিয়েছিল। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে সংক্রমণের গ্রাফ কিছুটা ওপরের দিকে উঠলেও ডিসেম্বর মাস থেকে সেটা দ্রুত নিচের দিকে নামতে থাকে। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে সংক্রমণের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে এসেছিল আর দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩০০ জনেরও কম।[4]
বাংলাদেশ সরকার প্রথম দিকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল ১৭ মার্চ ২০২০ হতে, যা পরবর্তিতে ১ বছরেরও বেশি সময় বন্ধ ছিল। ২২ মার্চ ২০২০ হতে, ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল যা পরবর্তীকালে সাত দফা বাড়িয়ে ৩০ই মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল যা ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে খুলে দেয়া হয় [4] কিন্তু করোনা ভাইরাস এর নতুন রূপ ওমিক্রন এর বিস্তার এর কারনে ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী থেকে ২১ ফেব্রুয়ারিত পর্যন্ত ২ দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর ছুটি বাড়ানো হয়
দেশজুড়ে 'লকডাউন' কার্যকর করার আগ পর্যন্ত আক্রান্ত বাড়ি, প্রয়োজনে জেলা, উপজেলা ইত্যাদি লকডাউন করা হয়েছিল। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ২৯টি জেলা সম্পূর্ণ এবং ১৯টি জেলা আংশিকভাবে লকডাউন করা হয়েছিল। সারা দেশে সন্ধ্যা ৬টার থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বাইরে বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। একইসাথে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় চলাচল বন্ধের জন্যও প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করেছিল।[4] লকডাউন অমান্যের অনেক ঘটনা জানা গিয়েছিল। লকডাউন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে না পারায় অনেক সমালোচনাও করা হয়েছিল।
৬ জুন ২০২০ সালে প্রকাশিত দি ইকোনমিস্ট এর একটি প্রতিবেদনে, বাংলাদেশের আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক জন ক্লেমেনস দাবি করেছেন যে, শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেই তখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭.৫ লাখের'ও বেশি ব্যক্তি।[5]
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, বাংলাদেশের 'কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি' জানিয়েছিল যে, তারা এই রোগের সংক্রমনের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন।[6]
১২ জুন ২০২১ সালে প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকল্পের (সিজিএস) প্রতিবেদনে দাবী করা হয়েছে, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুও বেড়েছে। ২২ মার্চ ২০২০ থেকে ৮ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত করোনার ন্যায় উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ২,৩০২ জনের।
৭ জুলাই ২০২১ তারিখে, আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন দাবী করেছেন যে বাংলাদেশ মহামারী সংক্রমনের আরেকটি পিকের (শীর্ষ চূড়া) দিকে যাচ্ছে।[7]
বাংলাদেশে শুরুতে, সংবাদপত্র ও সামাজিক মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর লক্ষণসহ অনেকসংখ্যক রোগীর মৃত্যুসংবাদ এসেছে যার মধ্যে কিছুসংখ্যক ভুয়া এবং ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বলে প্রমাণিত হয়েছে। মৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে স্থানীয় জেলা হাসপাতালে আইসোলেশনে রেখে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল তবে কয়েকজনকে চিকিৎসা দিতেও অস্বীকৃতি জানানো হয় যদিও যাচাই নিশ্চিত করতে কোনই পরীক্ষা করা হয়নি।[8] দীর্ঘ সময় যাবত পরীক্ষা প্রক্রিয়াকে শুধুমাত্র রাজধানীর 'আইইডিসিআর' এ কেন্দ্রীভূত করা হয়েছিল, যদিও কোভিড-১৯ এর লক্ষণসহ রোগীর খোঁজ সারাদেশেই পাওয়া গিয়েছিল।[9]
'আইইডিসিআর' কর্তৃক একগুচ্ছ হটলাইন নাম্বার, ই মেইল অ্যাড্রেস এবং তাদের ফেসবুক পাতা জনগণের জন্য সরবরাহ ও নিশ্চিত করা হয়েছিল যাতে তারা দরকারি তথ্য বা কোভিড-১৯ সন্দেহে যোগাযোগ করতে পারেন।[10]
২২ মার্চ, বাংলাদেশ সরকার ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল যা পরবর্তীকালে ৭ বার বর্ধিত করে ৩০ই মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। বাংলাদেশে 'লকডাউন' প্রয়োগের সময়টিকে সরকারিভাবে 'সাধারণ ছুটি' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।[11] 'সাধারণ ছুটি'র মধ্যে; সারা দেশেই জরুরি সেবা, পণ্য পরিবহন, চিকিৎসা ইত্যাদি অতি-প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো ছাড়া গণপরিবহনও অবরুদ্ধ করা হয়েছিল। দেশজুড়ে অবরুদ্ধকরণ (লকডাউন) আরোপ করার আগ পর্যন্ত; আক্রান্ত বাড়ি, প্রয়োজনে জেলা, উপজেলা ইত্যাদি অবরুদ্ধকরণ করা হয়েছিল। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ২৯টি জেলা সম্পূর্ণ এবং ১৯টি জেলা আংশিকভাবে অবরুদ্ধ করা হয়েছিল।[12] বিভিন্ন দেশের মত[13][14] দেশজুড়ে অবরুদ্ধকরণ না হলেও সারা দেশেই অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মুক্তভাবে চলাচলের উপর বাধা আরোপ করা হয়েছিল। সারা দেশে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বাইরে বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একইসাথে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় চলাচল বন্ধের জন্যও প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করেছিল।