হরিয়ানা
ভারতের একটি রাজ্য / From Wikipedia, the free encyclopedia
হরিয়ানা (হিন্দি: हरियाणा হরিয়াণা, গুরুমুখী: ਹਰਿਆਣਾ হরিআণা, /hʌriˈɑːnə/; হিন্দুস্তানি: [ɦəɾɪˈjɑːɳɑː]) উত্তর ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য। সুদূর অতীতে বর্তমান হরিয়ানা ভূখণ্ডটি উত্তর ভারতের কুরু রাজ্যের অন্তর্গত ছিল।[2][3][4] খ্রিষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে অপভ্রংশ লেখক বিবুধ শ্রীধরের রচনায় হরিয়ানা নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়।[5] এই রাজ্যের উত্তরে পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশ এবং পশ্চিমে ও দক্ষিণে রাজস্থান অবস্থিত। পূর্বে যমুনা নদী উত্তরাখণ্ড ও উত্তরপ্রদেশ রাজ্যদ্বয়ের সঙ্গে হরিয়ানার সীমানা নির্ধারিত করেছে। দিল্লিকে উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ – এই তিন দিক থেকে বেষ্টন করে রয়েছে হরিয়ানা। এই কারণে হরিয়ানা রাজ্যের একটি বৃহৎ অংশ ভারতের জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের অন্তর্গত। হরিয়ানার রাজধানী চণ্ডীগড় একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং পাঞ্জাব রাজ্যেরও রাজধানী। সংস্কৃত ভাষায় হরিয়ানা শব্দের অর্থ ঈশ্বরের নিবাস; এই শব্দটির ব্যুৎপত্তি সংস্কৃত হরি (বিষ্ণুর অপর নাম) ও অয়ণ (নিবাস) শব্দদুটি থেকে। অপর একটি মতে, সংস্কৃত হরিৎ (সবুজ) শব্দ থেকে এই নামের উৎপত্তি; হরিয়ানা নামটি আসলে এই রাজ্যের বৃহৎ হরিৎ তৃণক্ষেত্রের দ্যোতক।[6]
হরিয়ানা हरियाणा ਹਰਿਆਣਾ | |
---|---|
ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল | |
উপর থেকে, বাম থেকে ডানে: গুরুগ্রামের সাইবার সিটি, পিঞ্জোর গার্ডেন, শাহ কুলি খানের সমাধি ও অর্জুন কুরুক্ষেত্র, আসিগড় ফোর্ট, ঘগ্গর নদী, সুরজকুন্ড হ্রদ। | |
ভারতের মানচিত্রে হরিয়ানার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক (চণ্ডীগড়): ৩০°৪৪′ উত্তর ৭৬°৪৭′ পূর্ব | |
রাষ্ট্র | ভারত |
অঞ্চল | উত্তর |
প্রতিষ্ঠা | ১ নভেম্বর ১৯৬৬ |
রাজধানী | চণ্ডীগড় |
বৃহত্তম শহর | ফরিদাবাদ |
জেলার সংখ্যা | ২১ |
সরকার | |
• শাসক | হরিয়ানা বিধানসভা |
• রাজ্যপাল | জগন্নাথ পাহাড়িয়া |
• মুখ্যমন্ত্রী | ভূপিন্দর সিং হুদা (ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস) |
• আইনসভা | এককক্ষীয় (৯০ আসন) |
• লোকসভা আসন | ১০ |
• হাইকোর্ট | পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট |
আয়তন | |
• ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল | ৪৪,২১২ বর্গকিমি (১৭,০৭০ বর্গমাইল) |
এলাকার ক্রম | ২০শ |
• বনাঞ্চল | ১,৬৮৪ বর্গকিমি (৬৫০ বর্গমাইল) |
• জলাভূমি | ৩,৫৫০ বর্গকিমি (১,৩৭০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল | ২,৫৩,৫৩,০৮১ |
• ক্রম | ১৬শ |
• জনঘনত্ব | ৫৭৩/বর্গকিমি (১,৪৮০/বর্গমাইল) |
• ঘনত্বের ক্রম | ১১শ |
• পৌর এলাকা | ৮৮,২১,৫৮৮ |
• গ্রামীণ | ১,৬৫,৩১,৪৯৩ |
ভাষা | |
• সরকারি | হিন্দি, পাঞ্জাবি[1] |
• আঞ্চলিক | হরিয়ানভি |
রাজ্য প্রতীক | |
• পাখি | ব্ল্যাক ফ্র্যাঙ্কোলিন |
• পশু | নীলগাই |
• ফুল | পদ্ম |
• গাছ | অশ্বত্থ |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | IN-HR |
যানবাহন নিবন্ধন | HR-xx |
মানব উন্নয়ন সূচি | ০.৬৪৪ (medium) |
মানব উন্নয়ন সূচি স্থান | ১৭শ (২০১১) |
লিঙ্গ অনুপাত | ৮৩৩♀/ ১০০০ ♂ |
সাক্ষরতা হার | ৭৬.৬৪ % |
লিঙ্গানুপাত | ৮৭৭ |
গড় আয়ু | ৬৬.২ |
জিডিপি | ₹৩,০৯৩.২৬ বিলিয়ন (২০১১-১২) |
মাথাপিছু জিডিপি | ₹১০৯,২২৭ (২০১১-১২) |
আর্থিক বৃদ্ধি | ৮.১ % |
ওয়েবসাইট | www |
সুপ্রাচীন কালে এই রাজ্যের ভূখণ্ডটি অধুনালুপ্ত সরস্বতী নদীর তীরে বিকশিত সিন্ধু সভ্যতা ও বৈদিক সভ্যতার একটি অংশ ছিল। ভারত-ইতিহাসের অনেক দিকনির্ণায়ক যুদ্ধ এই অঞ্চলেই সংঘটিত হয়। এগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখনীয় মহাভারতে উল্লিখিত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ও পানিপথের তিনটি যুদ্ধ। ব্রিটিশ আমলে হরিয়ানা ছিল ব্রিটিশ পাঞ্জাব প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৬৬ সালে ভাষার ভিত্তিতে ভারতের সপ্তদশ রাজ্য হিসেবে হরিয়ানার আবির্ভাব ঘটে। বর্তমানে এই রাজ্য দেশের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য ও দুগ্ধ উৎপাদক। সমতল উর্বর জমি এবং গভীর নলকূপ ও সুপ্রসারিত সেচখাল ব্যবস্তার মাধ্যমে জলসেচের সুবিধা থাকায় কৃষি এই রাজ্যের বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা। ১৯৬০-এর দশকে ভারতে সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা আনার প্রয়াসের ক্ষেত্রেও হরিয়ানা রাজ্যের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
হরিয়ানা ভারতের অন্যতম ধনী রাজ্য। এই রাজ্যের মাথাপিছু আয় ৬৭,৮৯১ টাকা;[7] যা ভারতে তৃতীয় সর্বাধিক। এছাড়া দেশের সর্বাধিক সংখ্যক গ্রামবাসী কোটিপতি এই রাজ্যে বাস করেন।[8] ১৯৭০-এর দশক থেকেই এই রাজ্যে কৃষি ও শিল্পে বিশেষ উন্নতিসাধনের সূত্রপাত ঘটে। বর্তমানে হরিয়ানা শুধু ভারতেই নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সম্পদশালী অঞ্চল হিসেবে পরিগণিত হয়।[9] ভারতে যাত্রীবাহী গাড়ি, দ্বিচক্রযান ও ট্রাক্টরের বৃহত্তম উৎপাদক হল হরিয়ানা।[10] ২০০০ সাল থেকে এই রাজ্যের মাথাপিছু বিনিয়োগ দেশে সর্বাধিক।[11] গুরগাঁও শহরটি বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি ও অটোমোবাইল শিল্পকেন্দ্র হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে। ভারতের বৃহত্তম অটোমোবাইল উৎপাদক মারুতি উদ্যোগ ও বিশ্বের বৃহত্তম দ্বিচক্রযান উৎপাদক হিরো হন্ডার প্রধান কেন্দ্র গুরগাঁওতে অবস্থিত। পানিপথ, পঞ্চকুলা যমুনানগর ও ফরিদাবাদও রাজ্যের অন্যতম শিল্পকেন্দ্র। পানিপথ রিফাইনারি দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম রিফাইনারি। এছাড়াও এই রাজ্যে পুরনো কিছু ইস্পাত ও বস্ত্রশিল্পকেন্দ্র বিদ্যমান।
হরিয়ানার অধিবাসী প্রধান জাতিগোষ্ঠীটি হল জাট।[12][13][14][15] হরিয়ানার রাজনীতিও জাট জাতির দ্বারাই মূলত পরিচালিত হয়ে থাকে।[16] এরাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি হল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় লোক দল, হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেস, ভারতীয় জনতা পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। রাজ্যে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আহীর, পাঞ্জাবি, গুজ্জর, আগরওয়াল, রোর, ব্রাহ্মণ, রাজপুত ও সাইনি।[15] হরিয়ানার জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ হিন্দু, ৬.২ শতাংশ শিখ, ৪.০৫ শতাংশ মুসলমান এবং ০.১ শতাংশ খ্রিষ্টান।[15]