মুঘল সাম্রাজ্য
দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশের একটি সাম্রাজ্য / From Wikipedia, the free encyclopedia
মুঘল সাম্রাজ্য (আরবী: سَلْطَنَة اَلْهِنْدِيَّة সালতানাতাল হিন্দিয়া,[11] ঐতিহাসিক হিন্দী: ہِنْدوسْتان হিন্দস্তান,[12] ফার্সি: بلادِ هِنْدوسْتان বিলাদ-ই-হিন্দুস্তান[13]) ছিল ভারত উপমহাদেশের একটি সাম্রাজ্য।[14][15] প্রায় দুই শতাব্দী ধরে সাম্রাজ্য পশ্চিমে সিন্ধু অববাহিকার বাইরের প্রান্ত, উত্তর-পশ্চিমে আফগানিস্তান এবং উত্তরে কাশ্মীর, পূর্বে বর্তমান আসাম ও বাংলাদেশের উচ্চভূমি এবং দক্ষিণ ভারতের ডেকান মালভূমির উপভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। মুঘল সাম্রাজ্য মূলত পারস্য ও মধ্য এশিয়ার ভাষা, শিল্প ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল।[16][17]
হিন্দুস্তান সাম্রাজ্য বিলাদ-ই-হিন্দুস্তান | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১৫২৬–১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ | |||||||||||||
আওরঙ্গজেবের আমলে আনু. ১৭০০-এর দিকে সাম্রাজ্য শীর্ষে ছিল | |||||||||||||
অবস্থা | সাম্রাজ্য | ||||||||||||
রাজধানী |
| ||||||||||||
প্রচলিত ভাষা |
| ||||||||||||
ধর্ম | রাষ্ট্রধর্ম:
| ||||||||||||
সরকার | সংঘবদ্ধ কাঠামোর অধীনে একক নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র
| ||||||||||||
সম্রাট[lower-alpha 1] | |||||||||||||
• ১৫২৬–১৫৩০ | বাবর (প্রথম) | ||||||||||||
• ১৮৩৭–১৮৫৭ | দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ (শেষ) | ||||||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | প্রাক-আধুনিক | ||||||||||||
২১ এপ্রিল | |||||||||||||
১৭ মে ১৫৪০–২২ জুন ১৫৫৫ | |||||||||||||
৫ নভেম্বর ১৫৫৬ | |||||||||||||
• মুঘল–আফগান যুদ্ধ | ১৫২৬–১৭৫২ | ||||||||||||
১৬৮০–১৭০৭ | |||||||||||||
• নাদের শাহের ভারত আক্রমণ | ১০ মে ১৭৩৮–১৭৪০ | ||||||||||||
• দিল্লি অবরোধ | ২১ সেপ্টেম্বর | ||||||||||||
• মুঘল সম্রাটকে বার্মায় নির্বাসন | ১৮৫৮ | ||||||||||||
আয়তন | |||||||||||||
১৬৯০[6][7] | ৪০,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (১৫,০০,০০০ বর্গমাইল) | ||||||||||||
জনসংখ্যা | |||||||||||||
• ১৬৫০[8] | ১,৪৫,০০,০০০০ | ||||||||||||
মুদ্রা | রুপি, টাকা, দাম[9]:৭৩–৭৪[10] | ||||||||||||
| |||||||||||||
বর্তমানে যার অংশ | আফগানিস্তান বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান |
পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইবরাহিম লোদির বিরুদ্ধে বাবরের জয়ের মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা হয়।[18] মুঘল সম্রাটরা ছিলেন মধ্য এশিয়ার তুর্কো-মঙ্গোল বংশোদ্ভূত। তারা চাঘতাই খান ও তৈমুরের মাধ্যমে চেঙ্গিস খানের বংশধর। ১৫৫৬ সালে আকবরের ক্ষমতারোহণের মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের ধ্রূপদী যুগ শুরু হয়।[19] আকবর ও তার ছেলে জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ভারতে অর্থনৈতিক প্রগতি বহুদূর অগ্রসর হয়। আকবর অনেক হিন্দু রাজপুত রাজ্যের সাথে মিত্রতা করেন। কিছু রাজপুত রাজ্য উত্তর পশ্চিম ভারতে মুঘলদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জারি রাখে কিন্তু আকবর তাদের বশীভূত করতে সক্ষম হন। মুঘল সম্রাটরা মুসলিম ছিলেন তবে জীবনের শেষের দিকে শুধুমাত্র সম্রাট আকবর ও তার পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীর নতুন ধর্ম দীন-ই-ইলাহির অনুসরণ করতেন।[20]
মুঘল সাম্রাজ্যর কাঠামো, যাইহোক, কখনও কখনও বাবরের নাতি আকবরএর শাসনের তারিখ ১৬০০ থেকে ধরা হয়।[21] এই সাম্রাজ্যিক কাঠামো ১৭২০ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়, শেষ প্রধান সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।[22] তার রাজত্বকালে সাম্রাজ্যতার সর্বোচ্চ ভৌগোলিক ব্যাপ্তি অর্জন করে। পরবর্তীতে হ্রাস, বিশেষ করে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসনামলে, পুরাতন দিল্লি এবং তার আশেপাশের অঞ্চলে, ১৮৫৭ সালের ভারতীয় বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ রাজ দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে সাম্রাজ্য ভেঙ্গে যায়।
মুঘল সাম্রাজ্য স্থানীয় সমাজে হস্তক্ষেপ করত না তবে প্রশাসনিকভাবে এসববের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হত।[23][24] অনেক বেশি কাঠামোগত, কেন্দ্রীভূত শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। মুঘল শাসনামলে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন গোষ্ঠী যেমন মারাঠা, রাজপুত ও শিখরা সামরিক শক্তি অর্জন করে।
শাহজাহানের যুগে মুঘল স্থাপত্য এর স্বর্ণযুগে প্রবেশ করে। তিনি অনেক স্মৃতিসৌধ, মাসজিদ, দুর্গ নির্মাণ করেন যার মধ্যে রয়েছে আগ্রার তাজমহল, মোতি মসজিদ, লালকেল্লা, দিল্লি জামে মসজিদ। আওরঙ্গজেবের শাসনামলে মুঘল সাম্রাজ্যের সীমানা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছায়। শিবাজী ভোসলের অধীনে মারাঠাদের আক্রমণের ফলে সাম্রাজ্যের অবনতি শুরু হয়। আওরঙ্গজেবের সময় দক্ষিণ ভারত জয়ের মাধ্যমে ৩.২ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটারের বেশি অঞ্চল মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হয়। এসময় সাম্রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল ১৫০ মিলিয়নের বেশি যা তৎকালীন পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ এবং জিডিপি ছিল ৯০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।[25][26]
১৮শ শতাব্দীর মধ্যভাগ নাগাদ মারাঠারা মুঘল সেনাবাহিনীর বিপক্ষে সফলতা লাভ করে এবং দক্ষিণাত্য থেকে বাংলা পর্যন্ত বেশ কিছু মুঘল প্রদেশে বিজয়ী হয়। সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার দুর্বলতার কারণে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ সৃষ্টি হয় যার ফলে বিভিন্ন প্রদেশ কার্যত স্বাধীন হয়ে পড়ে। ১৭৩৯ সালে কারণালের যুদ্ধে নাদির শাহের বাহিনীর কাছে মুঘলরা পরাজিত হয়। এসময় দিল্লি লুন্ঠিত হয়। পরের শতাব্দীতে মুঘল শক্তি ক্রমান্বয়ে সীমিত হয়ে পড়ে এবং শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের কর্তৃত্ব শুধু শাহজাহানাবাদ শহরে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। সিপাহী বিদ্রোহের সমর্থনে তিনি একটি ফরমান জারি করেছিলেন। সিপাহী বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার বিরুদ্ধে রাজদ্রোহীতার অভিযোগ এনে কারাবন্দী করেছিল। শেষে তিনি রেঙ্গুনে নির্বাসিত হন এবং সেখানেই মারা যান।