পরিগণনামূলক রসায়ন
রসায়নের শাখা যেখানে গণনযন্ত্র (কম্পিউটার)-এর সাহায্যে কোনো রাসায়নিক সমস্যার সমাধান খোঁজা হয় / From Wikipedia, the free encyclopedia
রসায়নের যে শাখায় পরিগণক যন্ত্র তথা কম্পিউটারের সাহায্যে কোনও রাসায়নিক সমস্যার উত্তর খোঁজা হয় তাকে পরিগণনামূলক রসায়ন (ইংরেজি: Computational chemistry) বলে। এই বিজ্ঞান তাত্ত্বিক রসায়নের পদ্ধতিসমূহ দক্ষ কম্পিউটার প্রোগ্রাম-এর মাধ্যমে কার্যকর করে অণু এবং কঠিন পদার্থের গঠন ও ধর্ম গণনা করে। যেহেতু হাইড্রোজেন আয়ন সংক্রান্ত কিছু সাম্প্রতিক গবেষণা বাদে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান-এ বহু-বস্তু তত্ত্বের কোনো বিশ্লেষণাত্মক সমাধান নেই, তাই পরিগণনামূলক রসায়ন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারা। সাধারণত পরিগণনামূলক ফলাফল রাসায়নিক পরীক্ষার মাধ্যমে অধিকৃত ফলাফলের পূরক হিসাবে কাজ করলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি অভূতপূর্ব রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের পূর্বাভাস দিয়েছে। নতুন নতুন ওষুধ এবং নতুন পদার্থ তৈরিতে এটি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ হয়।
এরকম কিছু ধর্ম হল গঠন (যেমন পদার্থের উপাদানের পরমাণুগুলির অবস্থান), চরম এবং আপেক্ষিক শক্তি, ইলেক্ট্রন তড়িতাধান ঘনত্ব বিন্যাস, দ্বিমেরু ও উচ্চতর বহুমেরু ভ্রামক, আণবিক কম্পনের কম্পনাঙ্ক, বিক্রিয়াপ্রবণতা এবং অন্যান্য বর্ণালিবীক্ষণ সংলগ্ন বৈশিষ্ট্য, এবং অন্য কণার সাথে বিক্ষেপ প্রস্থচ্ছেদ।
এই পদ্ধতিটি স্থিতি ও গতি সংক্রান্ত সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এই সব ক্ষেত্রেই সিস্টেমের আয়তন বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রয়োজনীয় কম্পিউটার সময়-এর পাশাপাশি স্মৃতি-স্থান ও ডিস্ক-স্থান-ও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। একটি অণু, একাধিক অণু বা কঠিন পদার্থ দিয়ে এই সিস্টেম গঠিত। পরিগণনামূলক রাসায়নিক পদ্ধতি খুব আনুমানিক থেকে শুরু করে অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও নির্ভুল হতে পারে, - কেবলমাত্র খুব ছোটো সিস্টেম-এর ক্ষেত্রেই শেষেরটা সম্ভব। এব-ইনিশিও পদ্ধতির ভিত্তি কেবল কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান এবং প্রাথমিক কিছু ভৌত ধ্রুবকের মান। অন্যান্য পদ্ধতিগুলি পরীক্ষালব্ধ (এম্পিরিকাল) বা অংশত-পরীক্ষালব্ধ (সেমি-এম্পিরিকাল) কারণ এগুলিতে কিছু অতিরিক্ত পরীক্ষালব্ধ প্যারামিটার ব্যবহৃত হয়।
এব-ইনিশিও বা পরীক্ষালব্ধ- দুই পদ্ধতিতেই আসন্নায়ন প্রয়োজন। এই আসন্নায়ন প্রাথমিক মূলনীতি সমীকরণগুলির সরলীকৃত সংস্করণ যার সমাধান অপেক্ষাকৃত সহজ, কিংবা সিস্টেমের আয়তন ছোটো করা (যেমন পর্যাবৃত্ত সীমা শর্ত) থেকে শুরু করে মৌলিক সমীকরণগুলির সমাধানের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আসন্নায়ন-ও হতে পারে। যেমন বেশিরভাগ এব-ইনিশিও গণনায় বর্ন-ওপেনহাইমার আসন্নায়ন ব্যবহার হয়। গণনার সময় নিউক্লিয়াস স্থির থাকে এই আসন্নায়ন ব্যবহার করার দরুন এতে শ্রোডিঙার সমীকরণ-এর ব্যাপক সরলীকরণ সম্ভব।খাতায় কলমে মৌলিক সমীকরণগুলির আসন্নায়ন ধীরে ধীরে হ্রাস করলে এব-ইনিশিও পদ্ধতি সঠিক সমাধানের দিকে অগ্রসর হয়। কিন্তু বাস্তবে কিছু ত্রুটি থেকে যায় কারণ সমস্ত আসন্নায়ন বর্জন করা অসম্ভব। গণনার জটিলতা সাধ্যগত সীমার মধ্যে রেখে এই ত্রুটি ক্ষুদ্রতর করাই পরিগণনামূলক রসায়নের প্রধান লক্ষ্য।
কিছু ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রনিক গঠনের খুঁটিনাটি বিবরণের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ দশা-স্থানে অণুর দীর্ঘ সময় ব্যাপী আচরণ। প্রোটিনের কনফর্মেশন বা প্রোটিন-লিগান্ড বন্ধনের তাপগতিবিদ্যায় এই ঘটনা ঘটে। আণবিক গতিবিদ্যার দীর্ঘ সিমুলেশন-এর জন্য বিভব শক্তি-তলের ক্লাসিকাল আসন্নায়ন ব্যবহার হয় কারণ এটি পরিগণনামূলক কম জটিল। অন্যদিকে রসায়ন-ইনফরমেটিক্স -এ ভৌতরাসায়নিক ধর্মের উপর ভিত্তি করে যন্ত্র-শিক্ষনের মত অধিকতর পরীক্ষালব্ধ ও পরিগণনামূলক সহজ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। রসায়ন-ইনফরমেটিক্স -এর একটি আদর্শ সমস্যার উদাহরণ হল কোনো লক্ষ্যবস্তুর সাথে ঔষধ অণুর বন্ধন প্রবণতা।