শহর
বড় মানব বসতি / From Wikipedia, the free encyclopedia
শহর বা নগর (স্ত্রীলিঙ্গ: নগরী) বলতে এক নির্দিষ্ট আকারের মানব বসতিকে বোঝায়। বিশ্বজুড়ে "শহর" বলতে বিভিন্নরকম বসতিকে বোঝায় এবং কিছু অঞ্চলে শহরের আকার অনেক ছোট। আবার, কিছু অঞ্চলে শহর বলতে কোনো বড় বসতিকে বোঝালেও বসতির আকার কতটুকু হলে তাকে শহর বলা যায়, এ ব্যাপারে কোনও বৈশ্বিক মানদণ্ড নেই।[1][2] আরও সংকীর্ণ অর্থে শহর বলতে কোনো স্থায়ী ও ঘনবসতিপূর্ণ মানব বসতিকে বোঝাতে পারে, যার এক নির্দিষ্ট প্রশাসনিক সীমানা রয়েছে এবং যার সদস্যরা মূলত কৃষিকাজ ব্যতীত অন্যান্য জীবিকায় ব্যস্ত।[3] সাধারণত কোনো শহরে বাসস্থান, পরিবহন, আবর্জনা ব্যবস্থাপনা, ভূমির ব্যবহার, পণ্য উৎপাদন, যোগাযোগ, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে নিজস্ব নিয়মকানুন ও ব্যবস্থা থাকে।[4][5] শহরের বিকাশ মানুষ এবং ব্যবসার প্রসার ঘটাতে সহায়তা করে। শহর প্রায়শই গ্রাম দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। এখানে চাকরির সুযোগ-সুবিধাও বেশি থাকে। কালক্রমে একটি বর্ধনশীল শহরের আশেপাশের এলাকাগুলোও ঐ শহরের ভিতরে অন্তর্ভুক্ত হতে শুরু করে।
ঐতিহাসিকভাবে, শহরবাসীদের মোট জনসংখ্যা সমগ্র বিশ্ব জনসংখ্যার তুলনায় নগণ্য বা কম হয়ে থাকে, কিন্তু দুই শতাব্দী ধরে নজিরবিহীন ও দ্রুতবেগে নগরায়নের ফলে বিশ্ব জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ শহরে বসবাস করে, যা বৈশ্বিক দীর্ঘস্থায়িত্বের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে।[6][7][8][9][10] আধুনিক শহরগুলো সাধারণত কোনো বৃহত্তর পৌরপিণ্ড বা মহানগর এলাকার কেন্দ্র গঠন করে, যার ফলে নগরকেন্দ্রে জীবিকা, মনোরঞ্জন ও শিক্ষার জন্য নিত্যযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দ্রুতহারে বিশ্বায়নের ফলে সমস্ত শহর বিভিন্ন মাত্রায় নিজস্ব পৌর এলাকার বাইরে বৈশ্বিকভাবে সংযুক্ত। এর ফলে শহর বৈশ্বিক সমস্যায় যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু প্রভাব ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা। এই প্রভাবের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১১-এর মাধ্যমে টেকসই শহরে বিনিয়োগ করছে। পরিবহনের দক্ষতা ও ক্ষুদ্র জমির ব্যবহারের ফলে ঘনবসতিপূর্ণ শহরের বাস্তুতান্ত্রিক পদচিহ্ন আরও কম জনবহুল স্থানের তুলনায় অনেক কম থাকতে পারে।[11][12] এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলার জন্য অনেকসময় কম্প্যাক্ট সিটির কথা উল্লেখ করা হয়।[13][14][15] তবে ঘনবসতির ফলে গুরুত্বপূর্ণ কুপ্রভাবও পড়তে পারে, যেমন হিট আইল্যান্ড, ঘনীভূত দূষণ এবং পানি ও অন্যান্য সম্পদ সরবরাহে টান দেখা দেয়।
শহরে বসবাসের অনেক অসুবিধা যেমন আছে (যেমন কোলাহল, দূষণ, ভিড়, অপরাধ, ফুটপাথ দখল, ইত্যাদি), তেমনি গ্রামের তুলনায় শহরে বসবাস করা অনেক দিক থেকেই সুবিধাজনক। যখন অনেক মানুষ শহরের মতো একটি ক্ষুদ্র এলাকাতে গুচ্ছবদ্ধ হয়ে বাস করতে ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড করতে শুরু করে, তখন তাকে পিণ্ডীভবন (agglomeration) বলে। এর ফলে হাজার হাজার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের জন্য বিরাট দূরত্ব পাড়ি দেবার অসুবিধা কমে যায়। আদর্শ দৃষ্টিকোণ থেকে শহর হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণের নিশ্চয়তা প্রাপ্তির একটি স্থান যেখানে মানুষ বসবাস, চিকিৎসাসেবা, শিক্ষার সুব্যবস্থা, কর্মের সুযোগ, সামাজিক যোগাযোগ ও খেলাধুলা-বিনোদনের জন্য সুবিধাজনক একটি স্থান। শহরে গণপরিবহনের ব্যয় কম, আর অবকাঠামোর খরচও এককভাবে ব্যাঙ্ক লোন নিয়ে বা পরিচিতদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়, যে ব্যাপারটিকে "পিণ্ডীভবনের অর্থনীতি" বলে। এটি একটি নগর স্থাপত্য উৎপত্তির অন্যতম মূল কারণ। নগর জীবনের সুবিধা ও অর্থনৈতিক লাভের কারণে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে সিংহভাগ নাগরিক শহরে বাস করে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার ৯৫% জনগণই কোনও না কোনও শহরে বাস করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]