শুক্রাণু
জীবের পুংজননকোষ / From Wikipedia, the free encyclopedia
শুক্রাণু (ইংরেজি: Sperm) হলো পুংজননকোষ বা গ্যামেট যা যৌন জননের অ্যানাইসোগ্যামি প্রকারে দেখা যায় (যে প্রকারের জননে পুং গ্যামেট আকারে ছোটো কিন্তু সক্রিয় এবং স্ত্রী গ্যামেট আকারে বড়ো কিন্তু নিস্ক্রিয় হয়)। প্রাণীরা স্পার্মাটোজোয়া নামক চলনশীল শুক্রাণু তৈরি করে যার সাথে ফ্ল্যাজেলাম নামক একটি লেজ থাকে। অন্যদিকে, কিছু লাল শৈবাল এবং ছত্রাক চলনহীন শুক্রাণু কোষ তৈরি করে যা স্পার্মেশিয়া নামে পরিচিত।[1] সপুষ্পক উদ্ভিদের পরাগের পরাগরেণুতে চলনহীন শুক্রাণু থাকে, আবার ফার্নের মতো আরও কিছু মূলগত উদ্ভিদ এবং কিছু জিমনোস্পার্মে চলনশীল শুক্রাণু থাকে।[2]
শুক্রাণু কোষগুলি স্পার্মাটোজেনেসিস প্রক্রিয়া চলাকালে তৈরি হয়, যা অ্যামনিওটে (সরীসৃপ এবং স্তন্যপায়ী) শুক্রাশয়ের সেমিনিফেরাস নালিকায় সংঘটিত হয়।[3] এই প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত বেশ কয়েকটি শুক্রাণু কোষের পূর্বসূরীর উৎপাদন জড়িত। এর শুরু হয় স্পার্মাটোগোনিয়ার মধ্য দিয়ে যা পৃথকীকৃত হয়ে স্পার্মাটোসাইটে পরিণত হয়। স্পার্মাটোসাইটগুলি তারপর মিয়োসিসের মধ্য দিয়ে যায় এবং তাদের ক্রোমোসোমের সংখ্যা অর্ধেক কমে যায় যা স্পার্মাটিড তৈরি করে। স্পার্মাটিডগুলি তখন পরিণত বয়স্ক হয় এবং, প্রাণীদের মধ্যে, একটি লেজ বা ফ্ল্যাজেলাম তৈরি করে যার ফলে অবশেষে পরিণত, চলনহীন শুক্রাণু কোষের গঠন সম্পন্ন হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি ক্রমাগত ঘটে এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় ৩ মাস সময় লাগে।
শুক্রাণু কোষগুলি বিভাজিত হতে পারে না এবং তাদের একটি সীমিত জীবনকাল থাকে। কিন্তু নিষিক্তকরণের সময় ডিম্বাণু কোষের সাথে মিলিত হওয়ার পরে একটি নতুন জীব বিকাশ লাভ করে, যা একটি টোটিপোটেন্ট জাইগোট হিসাবে শুরু হয়। মানব শুক্রাণু হ্যাপ্লয়েড কোষ অর্থাৎ এতে ক্রোমোসোমের সংখ্যা এর উৎপাদক কোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক। মানব শুক্রাণুতে ২৩টি ক্রোমোসোম থাকে যা ডিম্বাণুর ২৩টি ক্রোমোসোমের সাথে যুক্ত হয়ে ৪৬টি ক্রোমোসোম বিশিষ্ট ডিপ্লয়েড কোষ সৃষ্টি করে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে শুক্রাণু এপিডিডিমিসে সঞ্চিত থাকে এবং শিশ্ন থেকে বীর্যস্খলনের সময় বীর্য নামের তরলের মাধ্যমে নির্গত হয়।
শুক্রাণুর ইংরেজি প্রতিশব্দ স্পার্ম (Sperm) গ্রীক শব্দ σπέρμα, স্পার্মা, থেকে এসেছে, যার অর্থ "বীজ"।