লোমশ ম্যামথ
From Wikipedia, the free encyclopedia
লোমশ ম্যামথ (Mammuthus primigenius) ম্যামথের একটি বিলুপ্ত প্রজাতি। এই প্রজাতিটি প্লাইস্টোসিন কালে পৃথিবীতে টিকে ছিল এবং ম্যামথ প্রজাতির মধ্যে সর্বশেষ প্রজাতি এই লোমশ ম্যামথ। পূর্ব এশিয়ার ম্যামথ অঞ্চল থেকে প্রায় ৪ লক্ষ বছর আগে লোমশ ম্যামথের উত্থান ঘটে। এশীয় হাতিকে এই লোমশ ম্যামথের দূরবর্তী আত্মীয় বলা যায়। প্রাক-ঐতিহাসিক প্রাণী প্রজাতির মাঝে লোমশ ম্যামথের প্রকৃতি ও আচরণ নিয়ে বিস্তর গবেষণা করা হয়েছে। সাইবেরিয়া ও আলাস্কায় এই ম্যামথের কঙ্কাল, দাঁত, পাকস্থলী, মল এমনকি দেহাবশেষ বরফে আচ্ছ্বাদিত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়া বিভিন্ন গুহাচিত্রেও চিত্রাঙ্কিত লোমশ ম্যামথের জীবনযাত্রা নিয়ে আভাষ পাওয়া যায়। ১৭শ শতকের দিকে ইউরোপের ম্যামথের পরিচয় পাওয়ার আরো অনেক আগে থেকেই এশিয়ায় ম্যামথের অস্তিত্ব সম্পর্কে জ্ঞাত ছিল। বিভিন্ন বিতর্ক থাকলেও ১৭৯৬ সালে জর্ক ক্যুভিয়ে হাতির বিলুপ্তপ্রাপ্ত প্রজাতি হিসেবে ম্যামথকে তালিকাভূক্ত করেন।
লোমশ ম্যামথ সময়গত পরিসীমা: মধ্য প্লাইস্টোসিন - প্রাক হলোসিন ০.০৪–০.০০০৩৭কোটি | |
---|---|
সবচেয়ে বৃহৎ ইউরোপীয় প্রাণী, একটি পুরুষ ম্যামথ। | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
মহাজগত: | সংবাহী উদ্ভিদ (ট্র্যাকিওফাইট) |
জগৎ/রাজ্য: | অ্যানিম্যালিয়া (Animalia) |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণি: | স্তন্যপায়ী (ম্যামেলিয়া) |
বর্গ: | Proboscidea |
পরিবার: | Elephantidae |
গণ: | †Mammuthus (ব্লুমেনবাখ, ১৭৯৯) |
প্রজাতি: | †M. primigenius |
দ্বিপদী নাম | |
†Mammuthus primigenius (ব্লুমেনবাখ, ১৭৯৯) | |
সংগ্রহকৃত ফসিল থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে মানচিত্রে প্লাইস্টোসিন যুগের শেষের দিকে M. primigenius এর বসতি। নীলা রঙের অংশ সেই সময়ে ভূ-অঞ্চল ছিল। | |
প্রতিশব্দ | |
তালিকা:
|
লোমশ ম্যামথ আকৃতিতে প্রায় আধুনিক আফ্রিকান হাতির ন্যায় ছিল। পুরুষ ম্যাম্থের কাঁধের উচ্চতা ২.৭ এবং ৩.৪ মি (৮ ফু ১০ ইঞ্চি এবং ১১ ফু ২ ইঞ্চি)এবং ওজন ৬ মেট্রিক টন পর্যন্ত হত। নারী ম্যামথের কাঁধের উচ্চতধেরপর্যন্ত হত। এরা ওজনের দিক দিয়ে ৪ মেট্রিক টন (প্রায়) হত। বাচ্চা ম্যাম্থের ওজন ৯০ কিলোগ্রাম (২০০ পা) হত। শেষ বরফ যুগের ঠান্ডা পরিবেশে লোমশ ম্যামথ সহজেই মানিয়ে নিয়েছিল। শরীরের লোমস বহির্ভাগ অনেকটা চাদরের মতো শীত থেকে এদের নিরাপত্তা দিত। শীতের আধিক্য থেকে রক্ষায় এদের ছোট কান ও লেজ বেশ কার্যকরী ছিল। অবশ্য লোমশ ম্যামথের গজদন্ত বিশাল আকৃতির ছিল। এদের গজদন্ত এক জীবনে প্রায় ছয় গুণ বড় হত। লোমশ ম্যামথের ব্যবহার আধুনিক হাতির ন্যায়ই ছিল। দাঁত ও শুড়ের ব্যবহার একই ভাবে যুদ্ধ এবং জিনিসপাতি ধ্বংসের কাজেও ব্যবহার করা হত। তৃণভোজী লোমশ ম্যামথ সম্ভবত ৬০ বছর আয়ুষ্কাল পেতো। উত্তর ইউরেশিয়া ও ঊত্তর আমেরিকার ম্যামথ অঞ্চলে লোমশ ম্যামথের বসতি বিরাজ করেছিল।
পশমী ম্যামথেরা আদিম মানুষের সময়ে সহাবস্থান করতো, যারা ম্যামথদের হাড় ও দাঁত অলঙ্কার, সরঞ্জাম হিসেবে ও বাসস্থান নির্মাণের জন্য ব্যবহার করত এবং খাদ্যের জন্য শিকার করত | ম্যামথেরা এদের মূল ভূখণ্ড থেকে প্লাইস্টোসিন যুগের শেষে অর্থাৎ ১০০০০ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায়, সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন এবং ফলস্বরূপ বাসস্থান সংকোচন, মানুষের দ্বারা শিকার, অথবা এই দুটি কারণের সংমিশ্রণের প্রভাবে| ম্যামথেরা বিচ্ছিন্ন সংখ্যায় ৫৬০০ বছর আগে পর্যন্ত সেন্ট পল দ্বীপে এবং ৪০০০ বছর আগে পর্যন্ত ভ্রাংগেল দ্বীপে বেঁচে ছিল। এদের বিলুপ্তির পরও, মানুষ এদের দাঁত কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করে যেতে থাকে, যার প্রচলন আজও অব্যাহত। এই প্রজাতিকে বিভিন্ন প্রকারে পুনঃনির্মিত করা যেতে পারে বলে প্রস্তাবিত হয়েছে, কিনতু এদের একটিও এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।