রুশ–পোলিশ যুদ্ধ (১৬০৫–১৬১৮)
From Wikipedia, the free encyclopedia
রুশ–পোলিশ যুদ্ধ (১৬০৫–১৬১৮) বা পোলিশ–মাস্কোভাইট যুদ্ধ ছিল ১৬০৫ থেকে ১৬১৮ সালের মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত পোলিশ–লিথুয়ানীয় কমনওয়েলথ এবং কমনওয়েলথের অভিজাতদের ব্যক্তিগত সৈন্যবাহিনী ও ভাড়াটে সৈন্যদল কর্তৃক রাশিয়া আক্রমণ। রুশ জারতন্ত্র এসময় রাজপরিবারের ক্ষমতাসংক্রান্ত সঙ্কট ও অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার ফলে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। রাশিয়ার ইতিহাসে এই সময়কাল "সমস্যার সময়" নামে পরিচিত।
রুশ–পোলিশ যুদ্ধ (১৬০৫–১৬১৮) | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
পোলিশ-লিথুয়ানীয় কমনওয়েলথ এবং রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তের মানচিত্র। যুদ্ধের সময় জুড়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ খণ্ডযুদ্ধগুলোর সময়ে সামরিক রেজিমেন্টগুলোর অবস্থান পরস্পরাবদ্ধ তরবারি দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
পোলিশ–লিথুয়ানীয় কমনওয়েলথ |
রাশিয়া সুইডেন (১৬০৯–১৬১০) | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
তৃতীয় সিজিগমুন্ড চতুর্থ ভ্লাদিস্লাভ |
বোরিস গোদুনভ মিখাইল স্কোপিন-শুইস্কি দিমিত্রি পোঝারস্কি |
এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এবং তাদের লক্ষ্য উভয়ই বারবার পরিবর্তিত হয়। ১৬০৯ সালের আগ পর্যন্ত পোলিশ–লিথুয়ানীয় কমনওয়েলথ রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধরত ছিল না। যুদ্ধকালে রুশদের বিভিন্ন দল নিজেদের মধ্যে লড়াই করে, কমনওয়েলথ কিংবা অন্যান্য দেশের পক্ষে যোগদান করে অথবা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। পরবর্তীতে সুইডেনও এই যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে; কখনো রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করে, আবার কখনো রাশিয়ার বিপক্ষে। যুদ্ধরত পক্ষসমূহের লক্ষ্যও প্রায়ই পরিবর্তিত হতে থাকে; কখনো কমনওয়েলথ রুশ সীমান্তের কতিপয় অঞ্চল দখলের চেষ্টা করে, কখনো পোল্যান্ডের রাজাকে অথবা পোল্যান্ড-সমর্থিত প্রতারকদের রুশ সিংহাসনে বসানোর প্রচেষ্টা চালায়, আবার কখনো বা পোল্যান্ড–লিথুয়ানিয়া ও রাশিয়ার সমন্বয়ে একটি নতুন রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াস চালায়।
যুদ্ধটিকে চারটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়। যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে পোল্যান্ড–লিথুয়ানিয়ার কতিপয় অভিজাত ব্যক্তি পোল্যান্ড–লিথুয়ানিয়ার রাজা তৃতীয় সিজিগমুন্ডের অনুমতি ছাড়াই কিছু রুশ অভিজাতের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাশিয়ার দুর্বলতার সদ্ব্যবহার করার প্রয়াস পান। তারা রাশিয়ার জার বোরিস গোদুনভ ও ভ্যাসিলি শুইস্কির বিপক্ষে এবং প্রথমে নকল প্রথম দিমিত্রি ও পরে নকল দ্বিতীয় দিমিত্রির পক্ষে রাশিয়ার গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেন। ১৬০৫ সালের রাশিয়ায় প্রথম পোলিশ আক্রমণ শুরু হয় এবং ১৬০৬ সালে নকল প্রথম দিমিত্রির মৃত্যু ঘটলে এর অবসান ঘটে। যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় ১৬০৭ সালে। এসময় জার ভ্যাসিলি সুইডেনের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করলে রাজা সিজিগমুন্ড আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেন। তার উদ্দেশ্য ছিল সুইডেনের মিত্ররাষ্ট্রকে দুর্বল করা এবং রাশিয়ার কাছ থেকে বিরাট একটি অঞ্চল দখল করে নেয়া।
রুশ বাহিনীকে পরাজিত করে পোলিশ সৈন্যরা ১৬১০ সালে মস্কোয় প্রবেশ করে এবং সিজিগমুন্ডের ছেলে ভ্লাদিস্লাভ স্বল্পকালের জন্য রাশিয়ার জার নির্বাচিত হন। কিন্তু শীঘ্রই সিজিগমুন্ড নিজে রাশিয়ার সিংহাসন দখল করার সিদ্ধান্ত নেন। এর ফলে পোল্যান্ডপন্থী রুশ অভিজাতদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তারা উদারপন্থী ভ্লাদিস্লাভকে জার হিসেবে মেনে নিতে পারলেও ক্যাথলিকপন্থী ও অর্থোডক্সবিরোধী সিজিগমুন্ডকে জার হিসেবে মেনে নিতে রাজি ছিলেন না।
এর ফলে যুদ্ধের তৃতীয় পর্যায়ের সূচনা হয়। ১৬১১ সালে আবার যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় এবং ১৬১২ সালে পোলিশ সৈন্যরা মস্কো থেকে বিতাড়িত হয়। কিন্তু পোলিশ বাহিনী রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ স্মোলেনস্ক শহরটি দখল করে নিতে সক্ষম হয়। ১৬১২ থেকে ১৬১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পোল্যান্ড–লিথুয়ানিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে কোনো বড় ধরনের সামরিক সংঘর্ষ হয় নি। ১৬১৭ সালে সিজিগমুন্ড রাশিয়া জয়ের সর্বশেষ প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু তার প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় এবং ১৬১৮ সালে দেউলিনোর যুদ্ধবিরতির ফলে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। এর ফলে রাশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল পোল্যান্ড–লিথুয়ানিয়ার হস্তগত হয়, কিন্তু রাশিয়ার স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন থেকে যায়।