মোবুতু সেসে সেকো
From Wikipedia, the free encyclopedia
মোবুতু সেসে সেকো (Mobutu Sese Seko, ১৪ই অক্টোবর, ১৯৩০ – ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭) একজন কঙ্গোলীয় রাজনীতিবিদ ও সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি ১৯৬৫ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত মধ্য আফ্রিকার কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র নামক রাষ্ট্রের এবং তারপরে দেশটির নাম বদলের পরে ১৯৭১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত জায়ার নামক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি সর্বমোট ৩২ বছর দেশটির রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি ১৯৬৭-১৯৬৮ পর্বে আফ্রিকান ঐক্য সংস্থার প্রধান ছিলেন। কঙ্গো সংকটের সময় মোবুতু দেশটির সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন; সেসময় তিনি বেলজিয়াম ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে ১৯৬০ সালে একটি সামরিক অভ্যুথানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বামপন্থী জাতীয়তাবাদী নেতা পাত্রিস লুমুম্বার সরকারকে উৎখাত করেন। ১৯৬১ সালে মোবুতু একটি পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা করেন যেটি লুমুম্বাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে এবং ১৯৬৫ সালে দ্বিতীয় একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরাসরি ক্ষমতাদখলের আগ পর্যন্ত দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন।
মোবুতু সেসে সেকো | |
---|---|
জাইরের রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ ২৪ নভেম্বর ১৯৬৫ – ১৬ মে ১৯৯৭ | |
পূর্বসূরী | জোসেফ কাস-ভুবু |
উত্তরসূরী | লোরঁ-দেজিরে কবিলা |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | জোসেফ-ইচ্ছা মোবাউটু (১৯৩০-১০-১৪)১৪ অক্টোবর ১৯৩০ লিসালা, বেলজিয়ান কঙ্গো |
মৃত্যু | ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭(1997-09-07) (বয়স ৬৬) রাবাত, মরক্কো |
জাতীয়তা | কঙ্গোলীয় |
রাজনৈতিক দল | পপুলার মুভমেন্ট অফ টি রেভোলুশন |
দাম্পত্য সঙ্গী |
|
সন্তান | ১৪ |
সামরিক পরিষেবা | |
আনুগত্য |
|
শাখা |
|
কাজের মেয়াদ | ১৯৪৯–১৯৬৫ |
পদ | লিউটেনান্ট জেনারেল |
ইউনিট | কমান্ডার ইন চিফ অফ টি আর্মি |
মোবুতুর নিজের দেওয়া পূর্ণনাম মোবুতু সেসে সেকো কুকু এনগেবেন্দু ওয়া জা বাঙ্গা (Mobutu Sese Seko Kuku Ngbendu Wa Za Banga[lower-alpha 1])। তার জন্মনাম ছিল জোসেফ-দেজিরে মোবুতু (Joseph-Désiré Mobutu)।
ক্ষমতায় আসার পর তা কুক্ষিগত করতে তিনি ১৯৬৭ সালে কঙ্গোতে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করেন, যে দলটির নাম ছিল বিপ্লবের গণ-আন্দোলন। ১৯৭১ সালে তিনি দেশের নাম বদলে জাইর রাখেন এবং ১৯৭২ সালে নিজের নাম বদলে "মোবুতু সেসে সেকো" রাখেন। মোবুতু দাবী করেন যে তার রাজনৈতিক মতাদর্শ "বামপন্থীও নয়, ডানপন্থীও নয়"।[1] কিন্তু তিনি এমন একটি শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন যা তৎকালীন আফ্রিকান পরিস্থিতিতে অত্যন্ত স্বৈরাচারী প্রকৃতির ছিল। তিনি দেশ থেকে সমস্ত ঔপনিবেশিক সাংস্কৃতিক প্রভাব দূর করার জন্য "ওতঁতিসিতে" নামক একটি কর্মসূচির অবতারণা করেন।[2][3] মোবুতু ব্যাপকভাবে পূজনীয় এক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন[4] দীর্ঘ শাসনামলে মোবুতু অর্থনৈতিক শোষণ ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ ব্যক্তিগত ধনসম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন, ফলে কেউ কেউ তার শাসনকে চৌর্যতন্ত্র (kleptocracy) নাম দিয়েছেন।[5][6] তাঁর অধীনে কঙ্গোতে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লংঘিত হয়। এসময় দেশটি লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি, বিপুল ঋণের বোঝা ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের শিকার হয়। মোবুতু কঙ্গোতে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ৪০০ কোটি থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদ আত্মসাতের জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেন। তিনি প্রায়শই শব্দের চেয়ে বেশি দ্রুতগামী ও সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিমান কনকর্ডে চেপে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে হাতখুলে বিলাসদ্রব্য কেনাকাটার জন্য সফরে যেতেন।[7]
মোবুতু তাঁর শাসনামলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের সরকারের কাছ থেকে শক্তিশালী সামরিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন লাভ করেন। ঐ দেশগুলি মোবুতুকে ফরাসিভাষী আফ্রিকাতে সাম্যবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনে করত। এছাড়া তিনি বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকা, ইসরায়েল ও গ্রিক সামরিক জান্তা সরকারের সাথে সখ্যতা গড়েন। ১৯৭২-এর পর থেকে চীনের মাও সে তুং-ও তাকে সমর্থন দেন, মূলত তার সোভিয়েত বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য; তবে আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে একটি দল গঠনের উৎসাহও মাওয়ের সমর্থনের আরেকটি কারণ ছিল। চীন জাইরকে বিপুল পরিমাণে অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদান করে, এবং এভাবে মোবুতু পশ্চিমা সরকারগুলির উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করতে সক্ষম হন, নিজেকে একজন "পুঁজিবাদ-বিরোধী বিপ্লবী" হিসেবে চরিত্রায়িত করেন ও সাহায্যের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের দ্বারস্থ হওয়া এড়াতে সক্ষম হন।[8]
১৯৯০ সাল নাগাদ অর্থনৈতিক মন্দা ও অস্থিরতার কারণে মোবুতু বিরোধী নেতাদের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে বাধ্য হন, কিন্তু তিনি সেনাবাহিনী ব্যবহার করে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সব ধরনের পরিবর্তন প্রতিরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৭ সালের মে মাসে লোরঁ-দেজিরে কাবিলা-র নেতৃত্বে বিদ্রোহী সেনারা দেশটির ক্ষমতা দখল করে এবং ফলশ্রুতিতে মোবুতু নির্বাসনে চলে যেতে বাধ্য হন। এসময় মোবুতু বহুদিন যাবৎ প্রস্থিত গ্রন্থির কর্কটরোগে (প্রোস্টেট ক্যান্সার) ভুগছিলেন; নির্বাসনের তিন মাসের মাথায় মরক্কো রাজধানী রাবাতে তাঁর মৃত্যু ঘটে।