মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র
From Wikipedia, the free encyclopedia
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র একটি ঐতিহাসিক দলিল যা ৪ জুলাই ১৭৭৬ পেনসিলভানিয়া প্রাদেশিক আইনসভায় অনুষ্ঠিত ২য় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের সভায় গৃহীত হয়। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সাথে যুদ্ধরত তেরটি মার্কিন উপনিবেশ[2] নিজেদের ব্রিটিশ শাসনের বাইরে স্বাধীন ও সার্বভৌম হিসেবে ঘোষণা করে এবং যুক্তরাষ্ট্র নামে নতুন রাষ্ট্র গঠন করে। পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি কংগ্রেসে ভোটাভুটির জন্য আগেই আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার একটি খসড়া প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। "স্বাধীনতার ঘোষণা" এই শব্দটি আসল দলিলে উল্লেখ নেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র | |
---|---|
তৈরি | জুন-জুলাই ১৭৭৬ |
অনুমোদন | ৪ জুলাই ১৭৭৬ |
অবস্থান | চূড়ান্ত প্রতিলিপি: ন্যাশনাল আর্কাইভস অমার্জিত খসড়া: লাইব্রেরি অব কংগ্রেস |
স্বাক্ষরকারী | ২য় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের ৫৬ জন প্রতিনিধি |
উদ্দেশ্য | গ্রেট ব্রিটেন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘোষণা ও ব্যাখ্যা[1] |
জন অ্যাডামস দলিলটির মূল খসড়া প্রণয়নের জন্য থমাস জেফারসন কে নির্বাচিত করতে কমিটির কাছে তদবির করেন[3]।যেটা কংগ্রেস সম্পাদন করে চূড়ান্ত সংস্করণ প্রস্তুত করবে। মার্কিন বিপ্লবী যুদ্ধ শুরুর ১ বছরেরও বেশি সময় পরে কেন ২ জুলাই কংগ্রেস গ্রেট ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য ভোট দান করে তার একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা এই ঘোষণা। পরবর্তী দিন জন অ্যাডামস তার স্ত্রী আবিগালিকে লিখেন,"১৭৭৬ সালের জুলাই এর দ্বিতীয় দিন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে স্মরণীয় দিন হবে"[4]। কিন্তু আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয় জুলাইয়ের ৪ তারিখ, যে তারিখে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদিত হয়।
৪ তারিখে অনুমোদনের পর কংগ্রেস বেশ কয়েকটি ফর্মে(আকারে) স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি প্রকাশ করে। প্রাথমিকভাবে এটি মুদ্রিত(ডানল্যাপ ব্রডসাইড) আকারে প্রকাশিত হয়। এই সংস্করণটি ব্যাপকভাবে বিতরণ ও প্রচার করা হয়। মুদ্রণে ব্যবহৃত মূল কপিটি হারিয়ে গেছে, সম্ভবত এটি জেফারসনের হাতের কপি ছিল[5]।
জন অ্যাডামস ও বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন কর্তৃক সাধিত পরিবর্তনসমূহ এবং কংগ্রেস কর্তক সাধিত পরিবর্তনের উপর জেফারসনের টিকা সংবলিত জেফারসনের মূল খসড়াটি লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে সংরক্ষিত আছে।
ঘোষণাপত্রের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট এবং সাক্ষরকৃত সংস্করণ যেটি দাপ্তরিক সংস্করণ হিসেবে অধিক পরিচিত সেটি ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল আর্কাইভসে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। এই নিবিষ্ট কপিটি ১৯ জুলাইয়ে কংগ্রেস কর্তৃক চাওয়া হয় এবং এটি প্রাথমিকভাবে ২ আগস্টে সাক্ষরকৃত হয়[6][7]।
ঘোষণাটির উৎস ও ব্যাখ্যা পন্ডিতদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু। ঘোষণাটি যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় জর্জের বিরুদ্ধে অনুযোগসমূহ এবং কতিপয় সহজাত ও আইনগত অধিকার(যেমন- বিপ্লবের অধিকার) বর্ণনার মাধ্যমে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার যথার্থতা প্রমাণ করে।
ঘোষণাপত্রটি স্বাধীনতা ঘোষণার মৌলিক উদ্দেশ্য পূরণ করে এবং পরবর্তী বছরগুলোতে বিভিন্ন প্রসঙ্গে এটি রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আব্রাহাম লিংকন ঘোষণাপত্রটিকে তার বিখ্যাত ভাষণ(যেমনটি গেটিসবু্র্গ ভাষণে) ও নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেন। তারপর থেকে ঘোষণাটি বিশেষ করে এর দ্বিতীয় বাক্যটি[8] মানবাধিকারের উপর একটি সুপরিচিত উক্তিতে পরিনত হয়। এটিকে ইংরেজি ভাষার সবচেয়ে সুপরিচিত উক্তিসমূহের মধ্যে একটি বলা হয়ে থাকে[9] যা আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ও অনুবর্তী শব্দসমূহ ধারণ করে[10]। বাক্যটি একটি নৈতিক মান নির্দেশ করে বলে ধরে নেয়া হয় যা অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সর্বাত্নক সংগ্রাম করতে হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি আব্রাহাম লিংকন কর্তৃক উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসার লাভ করে যিনি ঘোষণাপত্রটিকে তার রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেন এবং যুক্তি দেখান যে ঘোষণাটিতে বিবৃত নীতিমালার আলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ব্যাখ্যা করা উচিত[11]। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বিভিন্ন দেশের আরো অনেক সমশ্রেণীর দলিল প্রণয়নে অনুপ্রেরণা যোগায় এবং এর ধারণাসমূহ পরবর্তী সময়ে ক্যারিবিয়ান, স্প্যানিশ আমেরিকা, বলকান, পশ্চিম আফ্রিকা, মধ্য ইউরোপ সহ অন্যান্য দেশে ১৮৪৮ সাল পর্যন্ত অনুসৃত হয়[12]