মাপ্পিলা মুসলিম
মুসলিম সম্প্রদায় / From Wikipedia, the free encyclopedia
মাপ্পিলা মুসলিম যাদের সংক্ষেপে মাপিলা নামে ডাকা হয়, পূর্বে মোপলা/মোপলা নামে অভিহিত করা হতো এবং ঐতিহাসিকভাবে জোনাকা/চোনাকা মাপিলা বা মালয়ালাম মুর নামে পরিচিত, ভারতের কেরালা ও লাক্ষাদ্বীপে বসবাসকারী একটি প্রাচীনতম মুসলিম জাতিগোষ্ঠী।[2][8] মাপ্পিলারা কেরালা রাজ্যের মুসলিম জনসংখ্যার ২৬.৫৬% (২০১১) এবং ধর্মীয় জাতিগোষ্ঠী হিসাবে তারা হিন্দুদের ( ৫৪.৭৩%) পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী। [9] কেরালার অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মতো মাপিলারাও মালয়ালম ভাষায় কথা বলে থাকে।[10][11] মাপ্পিলা শব্দ দ্বারা কখনো সকল মুসলিমকে বোঝানো হয় এবং তখন এই শব্দটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে নির্দেশ করে না; বরং মাপ্পিলা ও মুসলিম শব্দ সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কখনো মাপ্পিলা শব্দ দ্বারা ভারতের প্রথম যুগের মুসলিমদের বোঝানো হয়।[10]
মোট জনসংখ্যা | |
---|---|
আনু. '৯ মিলিয়ন (২০১১)[1][2] | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
কেরালা, লাক্ষাদ্বীপ,[3] টুলু নাড়ু,[4] কোডাগু, নীলগিরি[5] | |
ভাষা | |
মালয়ালাম (আরবি মালয়লাম)[6][7] | |
ধর্ম | |
সুন্নি ইসলাম | |
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী | |
বিয়ারি, কোদাভা ম্যাপলে, মালয়ালি, মারাক্কার, তামিল মুসলিম, শ্রীলঙ্কান মুর |
কিছু ঐতিহাসিকের মতে মাপিলারা দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম বসতিস্থাপনকারী স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়। [2] [12] সাধারণভাবে একজন মাপ্পিলা হয়তো ইসলামে ধর্মান্তরিত কোনো আদিবাসীর বংশধর বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো আরব বা পারস্যিকের মিশ্র বংশধর। [13] [14] মাপ্পিলারা কেরালার মুসলিম জনসংখ্যা গঠনকারী অনেক সম্প্রদায়ের একটি উল্লেখ্যযোগ্য সম্প্রদায়। [15] মাপিলা সম্প্রদায়ের উৎপত্তি প্রাথমিকভাবে কেরলের সাথে পশ্চিম এশিয়ার যোগাযোগের ফলে হয় এবং এ যোগাযোগ মূলত বাণিজ্যের ( মশলা বাণিজ্য) উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[16]
স্থানীয় ঐতিহ্য অনুসারে ইসলাম ৭ম শতাব্দীর প্রথম দিকে মালাবার উপকূলে পৌঁছেছিল এবং এ অঞ্চলটি তখন কেরালা রাজ্যের একটি অংশ ছিল। [10] মশলা বাণিজ্য ইউরোপীয়দের দ্বারা দখল হওয়ার আগে মাপ্পিলারা একটি সমৃদ্ধ ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ছিল। তারা প্রধানত কেরালার উপকূলীয় নগর-কেন্দ্রগুলিতে বসতি স্থাপন করেছিল। মধ্যপ্রাচ্যের সাথে মাপ্পিলাদের ক্রমাগত মিথস্ক্রিয়া তাদের জীবন, রীতিনীতি ও আচার সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব তৈরি করেছে এবং এর ফলে কেরালার সংস্কৃতি, সাহিত্য, শিল্প,খাদ্য, ভাষা ও সঙ্গীতে একটি অনন্য ইন্দো-ইসলামি সংশ্লেষণ তৈরি হয়েছে। [10] [12]
কেরালার অধিকাংশ মুসলমান শাফিঈ মাযহাবের অনুসরণ করে এবং একটি বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সালাফিবাদ অনুসরণ করে।[17] [18] একটি জনপ্রিয় ভুল ধারণার বিপরীতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য অংশের মতো বর্ণপ্রথা কেরলের মুসলমানদের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে বলে অনেকে ধারণা করে থাকে। যদিও সমস্ত মুসলমানকে কেরালার সকল মসজিদে নামাজ পরার অনুমতি দেওয়া হয়; তবে নাপিত ও জেলে সম্প্রদায়ের লোকেদের তুলনায় নিম্ন মর্যাদায় রাখা হয় বলে কিছু হিন্দু পণ্ডিত মনে করেন। [19] এটি মূলত হিন্দুধর্মের বর্ণপ্রথার সমর্থন বা তাকে হালকা করার উদ্দেশ্যে বলা হয়ে থাকতে পারে।[20] তবে মুসলিমরা এমন বর্ণপ্রথার প্রচলন থাকা অস্বীকার করে। অনেক ইসলামি পণ্ডিত দাবি করেন যে, এ ভেদাভেদ মূলত সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় হয়ে থাকে এবং তা বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলে বিদ্যমান এবং প্রতিটি সমাজে নিম্নশ্রেণীর সাথে উচ্চ এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দূরত্ব বজায় থাকে এবং এটিও তার অংশ হতে পারে।[21]