মানাগুয়া
নিকারাগুয়ার রাজধানী / From Wikipedia, the free encyclopedia
মানাগুয়া (স্পেনীয় উচ্চারণ: [maˈnaɣwa]) নিকারাগুয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। শহরটি মানাগুয়া হ্রদের দক্ষিণ-পশ্চিম তীরে, বেশ কিছু ছোট ছোট অভিঘাত খাদের হ্রদের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। মানাগুয়া সমুদ্র সমতল থেকে ৮২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। মূল শহরের আয়তন প্রায় ২৬৭ বর্গকিলোমিটার এবং এখানে প্রায় ১০ লক্ষ ৪২ হাজার লোক বাস করে।[4] এছাড়া শহরটি পার্শ্ববর্তী নিন্দিরি, সিউদাদ সান্দিনো, এল ক্রুসেরো, তিকুয়ানতেপে এবং তিপিতাপা শহরগুলির সাথে একত্রে মানাগুয়া মহানগর এলাকা গঠন করেছে, যার জনসংখ্যা ১৪ লক্ষের কিছু বেশি।[5] শহরের জলবায়ু ক্রান্তীয় আর্দ্র ও শুষ্ক ধরনের। শহরের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা এপ্রিল মাসে ৩৪ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ডিসেম্বর মাসে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অধিক বৃষ্টিপাত হয়।[6]
মানাগুয়া Leal Villa de Santiago de Managua | |
---|---|
উপর থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে: মানাগুয়ার দৃশ্য; ওল্ড ক্যাথেড্রাল এবং নতুন ক্যাথেড্রাল; জাতীয় প্রাসাদ; পাসেও জলোটলান; এবং এর ভিউ মানাগুয়া হ্রদ | |
ডাকনাম: নোবিয়া দে খোলোতলান (Novia del Xolotlán)
"খোলোতলানের বধূ"[1] | |
স্থানাঙ্ক: ১২°৮′১১″ উত্তর ৮৬°১৫′৫″ পশ্চিম | |
দেশ/রাষ্ট্র | নিকারাগুয়া |
জেলা | মানাগুয়া |
পৌরসভা | মানাগুয়া |
প্রতিষ্ঠা | ১৮১৯ |
সরকারের আসন | ১৮৫২ |
জাতীয় রাজধানী | ১৮৫২[2][3] |
সরকার | |
• নগরপাল | ডেইজি তোররেস |
• উপ-নগরপাল | রেইনা রুয়েদাস |
আয়তন[4] | |
• শহর | ২৬৭.১৭ বর্গকিমি (১০৩.১৫ বর্গমাইল) |
উচ্চতা[4] | ৮২.৯৭ মিটার (২৭২.২১ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১৬-র প্রাক্কলন)[4] | |
• শহর | ১০,৪২,৬৪১ |
• জনঘনত্ব | ৩,৯০০/বর্গকিমি (১০,০০০/বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা | ১০,৩৩,৬২২ |
• মহানগর | ১৪,০১,৬৮৭ |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | NI-MN |
ওয়েবসাইট | http://www.managua.gob.ni/ |
মানাগুয়াতে বহু শতাব্দী আগেই স্থানীয় আদিবাসী আমেরিকান জাতির লোকেরা একটি শহরের পত্তন করেছিল। ১৬শ শতক থেকে ১৯শ শতকের শুরু পর্যন্ত স্পেনীয়রা এলাকাটি শাসন করে। সেসময় শহরটির তেমন গুরুত্ব ছিল না। এটিকে আদিবাসী অধ্যুষিত শহর হিসেবেই গণ্য করা হত। তুলনামূলকভাবে লেওন ও গ্রানাদা নামের স্পেনীয়-অধ্যুষিত শহরগুলির গুরুত্ব বেশি ছিল। ১৮২১ সালে নিকারাগুয়া একটি স্বাধীন দেশে পরিণত হয়। তখন লেওন ও গ্রানাদার মধ্যে কোন্ শহরটি নিকারাগুয়ার রাজধানী হবে, তা নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত শুরু হলে ১৮৫৭ সালে স্থায়ী সমাধান হিসেবে মানাগুয়াকে দেশটির রাজধানী বানানো হয়।
১৯৩১ সালের ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড ও ১৯৭২ সালে আরেকটি ভূমিকম্পের কারণে মানাগুয়া প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। প্রত্যেকবার নতুন করে শহরটিকে নির্মাণ করা হয়। ১৯৭২ সালের ভূমিকম্পের পরে শহরের বাণিজ্যিক এলাকাটিকে আদি শহরকেন্দ্র থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে সরিয়ে নেওয়া হয়। ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে, ১৯৭৮-৭৯ সালে আনাস্তাসিও সোমোসা দেবাইলের সরকারের সমর্থক সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী সান্দিনিস্তা বাহিনীর মধ্যে যে গৃহযুদ্ধ হয়, তার অন্যতম রণমঞ্চ ছিল এই মানাগুয়া, বিশেষ করে এর বস্তি এলাকাগুলি। ১৯৯৮ সালে হারিকেন মিচ নামের ঘূর্ণিঝড়ে মানাগুয়ার বহু বাড়ি, খামার ও সড়কের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
মানাগুয়া নিকারাগুয়ার শিক্ষাব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু। এখানে বেশ কিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের মধ্যে মানাগুয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশেষ খ্যাত। এটি ১৯৫২ সালে নিকারাগুয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশে পরিণত হয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় আমেরিকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ও ১৯৭৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাপ্রাপ্ত নিকারাগুয়া বহু-কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত রেদেম্পতোরিস মাতের নিকারাগুয়া ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।
দারিও উদ্যান শহরের একটি দর্শনীয় স্থান; এখানে কবি রুবেন দারিওর একটি স্মৃতিস্তম্ভ আছে। এছাড়া জাতীয় প্রাসাদ, ২০শ শতকে নির্মিত মহাগির্জা (ক্যাথেড্রাল), কার্লোস ফোনসেকা স্মরণিকা, গণতন্ত্র বুরূজ, ইত্যাদি আরও কিছু দর্শনীয় স্থান।
মানাগুয়া নিকারাগুয়ার ব্যবসা ও শিল্পোৎপাদন খাতের কেন্দ্র। শহরের বহু লোক সরকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিদ্যালয় ও হাসপাতালে কাজ করে থাকে। মানাগুয়াতে অনেক ক্ষুদ্র শিল্পকারখানা আছে, যেখানে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য (মাংস), আসবাবপত্র, পোশাক, ধাতব দ্রব্য ও রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন করা হয়। এখানে খনিজ তেল পরিশোধনাগারও আছে। মানাগুয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট কৃষি অঞ্চলটিতে মূলত কফি, ভুট্টা ও তুলার চাষ হয়। অতীতে ধান, আখ, জোয়ার, গবাদি পশু ও ঘোড়া পালন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল, তবে বর্তমানে এগুলির গুরুত্ব অনেক হ্রাস পেয়েছে।
শহরটি রেলপথ ও মহাসড়কের মাধ্যমে লেওন ও গ্রানাদা শহর ছাড়াও প্রশান্ত মহাসাগরের বন্দর শহর কোরিন্তো-র সাথে সংযুক্ত। এছাড়া সর্ব-আমেরিকান মহাসড়ক ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে এটি উত্তর আমেরিকা ও মধ্য আমেরিকার অন্যান্য শহরের সাথেও সংযুক্ত।