প্রুটেনীয় তালিকা
From Wikipedia, the free encyclopedia
প্রুটেনীয় তালিকা (ইংরেজি ভাষায়: Prutenic Tables, লাতিন ভাষায়: Tabulae prutenicae, জার্মান ভাষায়: Prutenische oder Preußische Tafeln) মধ্যযুগের একটি তারা তালিকা বা এফিমেরিস যা এরাসমুস রাইনহোল্ড ১৫৫১ সালে প্রকাশ করেন। একে অনেক সময় প্রুশিয়ার ডিউক আলবার্টের নামে প্রুশীয় তালিকা বলা হয়। আলবার্ট তালিকাটি নির্মাণ ও প্রকাশের ব্যাপারে রাইনহোল্ডকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন। রাইনহোল্ড এই তালিকাটি তৈরি করেছিলেন নিকোলাউস কোপের্নিকুসের যুগান্তকারী গ্রন্থ De revolutionibus orbium coelestium (১৫৪৩) অনুসারে যা সৌরকেন্দ্রিক মতবাদের মূলভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ডিউকের জন্মদিন অর্থাৎ ১৪৯০ সালের ১৭ই মে শনি গ্রহ যে অবস্থানে ছিল সেটিকেই রাইনহোল্ড নমুনা বিন্দু হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তার উদ্দেশ্য ছিল প্রুটেনীয় তালিকার মাধ্যমে পূর্বতন আলফোনসীয় তালিকা প্রতিস্থাপন করা। তালিকাটি এমনভাবে করেছিলেন যাতে আলফোনসীয় তালিকার সাথে পরিচিত আলমানাক নির্মাতারা খুব সহজেই প্রুটেনীয় তালিকা দিয়ে আরও ভালভাবে কাজ চালিয়ে নিতে পারেন।
প্রুশীয় তালিকা প্রকাশের পর আলফোনসীয় তালিকার উপর ভিত্তি করে আরও কিছু এফিমেরিস মুক্তি পেয়েছিল। আর তখনও ইউরোপ জুড়ে কোপের্নিকুসের সৌরকেন্দ্রিক মডেল গ্রণযোগ্যতা পায়নি। কিন্তু জাতিগত অহংকারের কারণে প্রুটেনীয় তালিকা জার্মানভাষী দেশগুলোতে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। আর প্রুটেনীয় তালিকা যেহেতু কোপের্নিকুসের গাণিতিক পদ্ধতির মাধ্যমেই গ্রহ-তারার অবস্থান চিহ্নিত করে সেহেতু এই সুযোগে কোপের্নিকুসের পদ্ধতির সাথে সমগ্র ইউরোপ পরিচিত হয়ে ওঠে। টলেমির বিপরীতে কোপের্নিকুসও যে একজন সুদক্ষ গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ তা সমগ্র পুণ্য রোমান সম্রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রুটেনীয় তালিকার বিশেষ ভূমিকা ছিল। এক সময় ৩০০ বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসা আলফোনসীয় তালিকা প্রুটেনীয় তালিকা দিয়ে সম্পূর্ণ প্রতিস্থাপিত হয়ে যায়।
পোপ গ্রেগরি ১৩-র অধীনে ক্রিস্টোফার ক্লাভিয়ুস বর্ষপঞ্জি সংস্কার করতে গিয়ে রাইনহোল্ডের প্রুটেনীয় তালিকা এবং কোপের্নিকুসের গবেষণাকেই ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। নাবিক ও সমুদ্র অভিযাত্রীরাও এই তালিকা প্রচুর ব্যবহার করতেন। এরও কয়েক দশক পরে বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগ শহরে ট্যুকো ব্রাহে এবং ইয়োহানেস কেপলার ব্রাহের সারা জীবনের পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে রুডলফীয় তালিকা প্রণয়ন করেন। তখন রুডলফীয় তালিকাই হয়ে উঠে সবচেয়ে নিখুঁত ও গ্রহণযোগ্য তালিকা। কেপলার ব্রাহের কাজ সম্পূর্ণ করে ১৬২৭ সালে প্রকাশ করেছিলেন।
আধুনিক যুগে ওয়েন জিঞ্জারিশ কোপের্নিকুসের De revolutionibus বইয়ের একটি সংষ্করণ হাতে পান যা রাইনহোল্ড নিজে ব্যবহার করেছিলেন। এতে রাইনহোল্ডের লেখা অনেক মন্তব্য সংযুক্ত ছিল। এই বইয়ের মাধ্যমেই জিঞ্জারিশ কোপের্নিকুসের প্রকাশনার পর কয়েক দশকে কীভাবে তা ইউরোপের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়েছিল সে নিয়ে গবেষণা করতে সক্ষম হন। তিনি এই গবেষণার কাহিনী ও ফলাফল এবং কোপের্নিকুসের মতবাদ ও পদ্ধতি প্রচারে রাইনহোল্ডের প্রুটেনীয় তালিকার ভূমিকা বিস্তারিত লেখেন তার The Book Nobody Read: Chasing the Revolutions of Nicolaus Copernicus (২০০৪) নামক বইয়ে।