পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা
সরীসৃপের প্রজাতি / From Wikipedia, the free encyclopedia
পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা (বৈজ্ঞানিক নাম: Dendroaspis angusticeps(Smith)) এলাপিড পরিবারভুক্ত এক প্রজাতির বিষধর সাপ। এরা কমন মাম্বা, পূর্ব আফ্রিকার সবুজ মাম্বা বা সবুজ মাম্বা বা সাদা মুখযুক্ত মাম্বা নামেও পরিচিত। মাম্বা গোত্রীয় এই গ্রিন মাম্বা প্রজাতির সাপ দীর্ঘাকার, বৃক্ষবাসী এবং উচ্চমাত্রায় বিষধর হয়। পূর্নবয়স্ক স্ত্রী গ্রিন মাম্বার আনুমানিক গড় দৈর্ঘ্য ২.০ মিটার (৬.৬ ফু) হয় তবে পুরুষদের দৈর্ঘ্য সামান্য কম হয়। ১৮৪৯ সালে একজন স্কটিশ শল্যচিকিৎসক তথা প্রানীবিদ সর্বপ্রথম এই প্রজাতির সাপের বর্ণনা দেন। পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার বসবাস মূলত পূর্ব আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তের উপকূলবর্তী অঞ্চলে। এরা পূর্ণবয়স্ক পাখী, ডিম, বাদুড় শিকার করে খায়, এছাড়াও ইঁদুর, ছোট ইঁদুর, গারবিলাস জাতীয় তীক্ষ্ণদন্ত প্রাণীরাও পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার শিকার তালিকার অন্তর্ভুক্ত। এই এলাপিড পরিবারভুক্ত সাপটি লাজুক স্বভাবের ও পলায়নপর এবং গোপন জায়গায় লুকিয়ে থাকতে দেখা যায়। পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার বৃক্ষবাসী জীবন ও শরীরের গুপ্ত রঙ এর কারণে এদেরকে পর্যবেক্ষণ বা নিরীক্ষণ করার সুযোগ খুব কম মেলে। অন্যান্য প্রজাতির মাম্বার তুলনায় গ্রিন মাম্বা অনেকাংশেই নিষ্ক্রিয় ও স্থির। এই অতি-নিষ্ক্রিয়তার কারণ হল, খাবার বা শিকারের সন্ধানে এরা এক জায়গায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে থাকে। এই নিষ্ক্রিয়তা এবং একস্থানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার অভ্যাসই পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখে। সর্প বিশারদ মাইকেল অ্যানগিলাট্টা কেনিয়ার জেড বা জিম্বার উপকূলবর্তী জঙ্গলে টানা ২৭ দিন পর্যবেক্ষণ চালিয়ে দুটি মাত্র পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার সন্ধান পেয়েছিলেন। এই তথ্য পরিষ্কার বুঝিয়ে দেয় যে অধিকাংশ ভাইপেরিডির মত দীর্ঘ অপেক্ষা এবং নিজের অস্তিত্ব গোপন রেখে আগত শিকারের উপর ভরসা রেখেই এরা চলে।
পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা | |
---|---|
পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বা (Eastern green mamba) | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
উপপর্ব: | Vertebrata |
শ্রেণী: | Reptilia |
বর্গ: | Squamata |
উপবর্গ: | Serpentes |
পরিবার: | Elapidae |
উপপরিবার: | Elapinae |
গণ: | Dendroaspis |
প্রজাতি: | D. angusticeps |
দ্বিপদী নাম | |
Dendroaspis angusticeps (A. Smith, 1849)[1] | |
Eastern green mamba geographic range | |
প্রতিশব্দ[2] | |
|
মাম্বা বর্গের অন্যান্য প্রজাতির সাপের মত, পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বাও ভয়ানক বিষধর। বিষথলি পূর্ণ অবস্থায় এর একটি কামড় যে পরিমাণ বিষ নির্গত করে তা অনেক মানুষের একসাথে মৃত্যু ঘটানোর পক্ষে যথেষ্ট। গ্রিন মাম্বার বিষের গঠনগত বিশ্লেষণে প্রি-সাইন্যাপ্টিক এবং পোস্ট-সাইন্যাপ্টিক নিউরোটক্সিন (ডেনড্রোটক্সিন), কার্ডিও টক্সিন, ক্যাকিক্লুডিন, এবং ফাস্কিক্লুডিন ইত্যাদি যৌগের উপস্থিতি দেখা যায়। এই বিষ নিম্ন আণবিক ভর সম্পন্ন হওয়ায় অত্যন্ত দ্রুততার সাথে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে মিশে যায় এবং অতি সক্রিয় ভাবে দেহতন্তুর মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিষ স্নায়ুতন্ত্র,হৃৎপিণ্ড এবং দেহকলার উপর একসাথে ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে, তাই পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ মাম্বার কামড় খাওয়া ব্যক্তির পক্ষে বেঁচে থাকার লড়াই চালানো নিতান্তই অসম্ভব। সমস্ত মাম্বা প্রজাতির সাপের ড্রেনডোয়সপিস বিষেই ডেনড্রোটক্সিনের উপস্থিতি রয়েছে যা সবচেয়ে দ্রুত ক্রিয়াশীল সাপের বিষ হিসাবে পরিচিত। ডেনড্রোটক্সিনের সর্বপ্রধান বিশেষত্ব হল, এই বিষ দেহে প্রবেশ করা মাত্রই একের পর এক প্রাণঘাতী লক্ষণ প্রকাশ পায় যথা-দংশন স্থান ফুলে ওঠা, প্রবল ঝিমুনি, বমি বমি ভাব, শ্বাস কার্যে এবং ঢোঁক গিলতে কষ্ট হওয়া, হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়া দ্রুত অচল হয়ে পড়া। এই তীব্র বিষক্রিয়া এতটাই প্রাণঘাতী যে সমীক্ষায় দেখা গেছে, গ্রিন মাম্বার কামড়ে ৩০মিনিটের মধ্যেই আক্রান্ত প্রজাতির মৃত্যু হয়। যদিও গ্রিন মাম্বা উগ্রমেজাজী ও অতিসক্রিয় সাপের দলের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং আফ্রিকাতে এই সাপের কামড়ে আক্রান্তের হার খুবই কম, তবুও এর কামড়ে মৃত্যুর হার অনেক বেশি কারণ এদের বিষ অর্থাৎ ডেনড্রোটক্সিন অতি দ্রুত ক্রিয়াশীল ও অতি সক্রিয় মারণ-বিষ, চিকিৎসার সময়টুকু দেয় না।