পুরাতন রাজত্ব (মিশর)
From Wikipedia, the free encyclopedia
মিশরের পুরাতন রাজত্ব বা প্রাচীন রাজত্ব -এর সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের এক বৃহদংশ (মোটামুটি ২৭০০ - ২২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। মিশরের প্রাচীন সভ্যতার পুরো সময়কালকে সাধারণভাবে যে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, পুরাতন রাজত্ব হল তার মধ্যে প্রাচীনতম। সাধারণভাবে ৩য় থেকে ৬ষ্ঠ রাজবংশের শাসনকালকে এই সময়কালের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। ৩য় রাজবংশের সূচনাকাল থেকে এই সময়কালের শুরু[1][2] (১ম ও ২য় রাজবংশের রাজত্বকালকে বলা হয় আদি রাজত্বের যুগ[2]; early dynastic period) ও ৬ষ্ঠ রাজবংশের শেষে ৭ম রাজবংশের শুরুতে প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন যুগের সময়ে এর শেষ।[2]
মিশরের পুরাতন রাজত্ব | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
২৭০০ খ্রিপূ–২২০০ খ্রিপূ | |||||||||
রাজধানী | মেমফিস | ||||||||
প্রচলিত ভাষা | প্রাচীন মিশরী ভাষা | ||||||||
সরকার | Divine, Absolute Monarchy | ||||||||
ফারাও | |||||||||
• c. 2686–c. 2649 BC | Djoser (first) | ||||||||
• c. 2184–c. 2181 BC | Last king depends on the scholar, Neitiqerty Siptah (6th Dynasty) or Neferirkare (7th/8th Dynasty) | ||||||||
ইতিহাস | |||||||||
• প্রতিষ্ঠা | ২৭০০ খ্রিপূ | ||||||||
• বিলুপ্ত | ২২০০ খ্রিপূ | ||||||||
|
এখানে বলে রাখা ভালো যে মিশরের প্রাচীন ইতিহাসকে এইভাবে বিভিন্ন রাজত্বের যুগে ভাগ করার ঐতিহ্য অষ্টাদশ শতাব্দীর ঐতিহাসিকদের থেকে শুরু হয়েছে। প্রাচীন মিশরের অধিবাসীদের পক্ষে এই ধরনের কোনও যুগ পরিবর্তনের আভাস জানাও সম্ভব ছিল না। সেখানে আদি রাজত্বের যুগ থেকে পুরাতন বা প্রাচীন রাজত্বের যুগে উত্তরণের মধ্যে ধারাবাহিকতায় কোনওরকম ছেদ সংঘটিত হয়নি। রাজধানী থেকে গিয়েছিল এক, এমনকি রাজার প্রাসাদও। শুধু তাই নয় আদি যুগের তথাকথিত শেষ রাজার সাথে পরবর্তী পুরাতন রাজত্বের যুগের তথাকথিত প্রথম দুই রাজার আত্মীয়তা ও সেই সূত্রে স্বাভাবিক উত্তরাধিকারের সম্পর্কও ছিল (যে কারণে এক্ষেত্রে এক যুগ থেকে আরেক যুগে উত্তরণের নির্দিষ্ট দিন, ক্ষণ, বছরের উল্লেখ সবসময়েই কিছুটা বিতর্কিত হতে বাধ্য)। অষ্টাদশ শতাব্দীর ঐতিহাসিকরা এই দুই যুগের মধ্যে ভাগ করেছিলেন মূলত বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে; সমাজ ও অর্থনীতির উপরও স্বাভাবিকভাবেই তার প্রভাবও ছিল ব্যাপক ও যুগান্তকারী।[3]
প্রাচীন মিশরের ইতিহাসে এই যুগকে পিরামিডের যুগ বা পিরামিড নির্মাতাদের যুগ বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। মিশরের তৎকালীন রাজধানী মেমফিসের নিকটবর্তী অঞ্চলে এইসময়ে একের পর এক বৃহদাকার পিরামিড নির্মিত হয়। তৃতীয় রাজবংশের সময় থেকেই এইধরনের বৃহৎ নির্মাণকার্যের সূচনা ঘটেছিল। চতুর্থ রাজবংশের আমলে তা বিশেষভাবে বিকাশ লাভ করে। মিশরের সুবিখ্যাত খুফুর পিরামিড, খাফ্রীর পিরামিড, মেনকাউরির পিরামিড, প্রভৃতি এই আমলেরই কীর্তি।[4] এই পিরামিডগুলির বিশালত্ব থেকে সহজেই অনুমেয় এইসব পিরামিডের নির্মাতা ফারাওদের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের সাংগঠনিক ক্ষমতা,যার বলে সেই যুগেও এইধরনের বিশালকায় নির্মাণের উপযোগী উপাদান ও শ্রমশক্তিকে এক জায়গায় করা সম্ভব হয়েছিল। পাশাপাশি এইসব নির্মাণগুলিকে খুঁটিয়ে দেখলে একদিকে যেমন সেই যুগের মিশরের নির্মাণকৌশল ও শিল্পের ক্রমবিবর্তন আমাদের চোখে পড়ে, অন্যদিকে বোঝা যায় মৃতকেন্দ্রিক সংস্কৃতি ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস এই যুগের মিশরীয়দের সংস্কৃতিকে কতটা গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। এইসময়ের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে লিখিত কোনও উপাদান খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। ঐতিহাসিকদের মতে তাই আক্ষরিক অর্থেই মিশরের এই যুগের ইতিহাস পাথরের ঐ সুবিশাল নির্মাণগুলির মধ্যেই লিখিত।[4] তাঁদের আরও মতে এইসময় থেকেই মিশরের রাজারা (আমরা জানি না তখন তাঁরা ফারাও বলে অভিহিত হতেন কিনা) ঈশ্বরের প্রতিনিধি ও জীবন্ত দেবতা হিসেবে পূজিত হতে শুরু করেন ও সেই হিসেবে প্রজাদের সমস্ত সেবা ও সম্পত্তির দাবিদার হিসেবে গণ্য হন।[5]