পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুধর্ম
পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ / From Wikipedia, the free encyclopedia
পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ২০২১ সালের হিসেবে অনুযায়ী, এই রাজ্যে মোট ৭ কোটি ৫ লক্ষ জনের মতো হিন্দু (মোট জনসংখ্যার ৬৮.৩%) হিন্দু বসবাস করেন। [2] পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই বাঙালি। এঁদের অধিকাংশ শাক্ত মতাবলম্বী হলেও বাংলায় বৈষ্ণব ও শৈব সম্প্রদায়ভুক্ত হিন্দুরাও জংসংখ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গে বহু অবাঙালি হিন্দুও বসবাস করেন। এঁরা মূলত মারোয়াড়ি, বিহারি, ওডিয়া, ভারতীয় গোর্খা ও বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত হিন্দু।
মোট জনসংখ্যা | |
---|---|
৭০,৫৫৩,৫৫০ (২০২১)[1] সামগ্রিক জনসংখ্যার ৬৮.৩% | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলা ছাড়া সব জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ | |
ভাষা | |
বাংলা, নেপালি ও বিভিন্ন উপজাতি ভাষা |
খ্রিস্টপূর্ব ১৬শ শতাব্দীর আগে থেকেই বৃহত্তর বাংলা ভূখণ্ডে হিন্দুধর্মের অস্তিত্ব ছিল। খ্রিস্টীয় ৩য় শতাব্দীর মধ্যে বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মও এই অঞ্চলে জনপ্রিয়তা লাভ করে।[3] গৌড় ছিল বাংলার প্রথম সার্বভৌম হিন্দু রাজ্য। আনুমানিক ৬০০ থেকে ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে শৈব রাজা শশাঙ্ক কর্তৃক স্থাপিত এই রাজ্যের রাজধানী ছিল অধুনা মুর্শিদাবাদ জেলার কর্ণসুবর্ণে।[4][5] খ্রিস্টীয় ১২শ শতাব্দীতে সেন রাজবংশের শাসনকালে বাঙালি হিন্দু সমাজের বর্তমান কাঠামোটি গড়ে ওঠে। অধুনা পশ্চিমবঙ্গ ভূখণ্ড চৈতন্য মহাপ্রভু, রাজা রামমোহন রায়, রামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী প্রণবানন্দ, অরবিন্দ ঘোষ ও পরমহংস যোগানন্দ প্রমুখ বিশিষ্ট হিন্দু ধর্মগুরুদের কর্মস্থল। মধ্যযুগ থেকে হিন্দু সমাজে ক্রমসঞ্চারিত সতীদাহ প্রথা, পণপ্রথা, বর্ণবৈষম্য ও অস্পৃশ্যতার মতো কুসংস্কারগুলি দূর করে হিন্দু সমাজ সংস্কারে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেই সঙ্গে বাংলায় হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থানেও তাদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের প্রধান ভাষা বাংলা। বহু শতাব্দী ধরে চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী, বৈষ্ণব পদাবলি, মঙ্গলকাব্য, শাক্ত পদাবলি, ব্রতকথা ও পাঁচালি এবং হিন্দু দার্শনিক ও সাহিত্যিকদের রচনাবলি বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে।
কালী ও চণ্ডী পশ্চিমবঙ্গে সর্বাধিক পূজিত দুই দেবী। বৈদিক-পৌরাণিক ও তান্ত্রিক দেবদেবীদের মধ্যে দুর্গা, শিব, সরস্বতী, লক্ষ্মী, তারা, জগদ্ধাত্রী, অন্নপূর্ণা ও কৃষ্ণের পূজাও পশ্চিমবঙ্গে বহুল প্রচলিত। এছাড়া মনসা, শীতলা, রাজবল্লভী, বাশুলী, ষষ্ঠী, সুবচনী, বিপত্তারিণী, ধর্মঠাকুর, ঘণ্টাকর্ণ, পঞ্চানন, ত্রিনাথ, দক্ষিণরায় প্রমুখ লৌকিক ও লৌকিক-পৌরাণিক দেবদেবীর পূজাও এই রাজ্যে বিশেষ জনপ্রিয়।
দুর্গাপূজা পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই উৎসবের পরেই এই রাজ্যে কালীপূজার ব্যাপকতা। অন্যান্য প্রধান উৎসবগুলি হল কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, দোলযাত্রা, জগদ্ধাত্রী পূজা, রথযাত্রা, সরস্বতী পূজা, পয়লা বৈশাখ, বিশ্বকর্মা পূজা, গাজন, পৌষ পার্বণ ইত্যাদি।