পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব
From Wikipedia, the free encyclopedia
পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব হচ্ছে মহাবিশ্বের এমন একটি গোলাকার অঞ্চল যার অন্তর্গত বস্তুসমূহ পৃথিবী থেকে বর্তমান সময়ে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। মহাজাগতিক প্রসারণের শুরু থেকে কেবল এই অঞ্চলে অবস্থিত বস্তুসমূহের নির্গত তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ পৃথিবীতে পৌঁছানোর সময় পেয়েছে। সারা পৃথিবীর মোট বালুকণার সংখ্যার চেয়েও বেশি তারা[7][8][9] সহ অন্তত দুই লক্ষ কোটি ছায়াপথ পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে অবস্থিত[10][11]। মহাবিশ্ব সর্বত্র প্রতিসম ধরে নিলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের সীমানা সবদিকেই প্রায় সমান দূরত্বে বিদ্যমান। অর্থাৎ পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব হচ্ছে পর্যবেক্ষক-কেন্দ্রিক একটি গোলাকার ক্ষেত্র। মহাবিশ্বের প্রতিটি স্থানের নিজস্ব পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব রয়েছে, যা পৃথিবী-কেন্দ্রিক এলাকাটির সাথে অধিক্রমণ করতে পারে।
ব্যাস | ৮.৮×১০২৬ মিটার (২৮.৫ গিগাপারসেক বা ৯৩×১০৯ আলোকবর্ষ)[1] |
---|---|
আয়তন | ৪×১০৮০ ঘনমিটার[2] |
ভর (সাধারণ পদার্থ) | ১০৫৩ কিলোগ্রাম[3] |
ঘনত্ব | ৯.৯×১০-৩০ গ্রাম/ঘনসেন্টিমিটার (প্রতি ঘনমিটারে ৬টি প্রোটন এর সমতুল্য)[4] |
বয়স | ১৩.৭৯৯±০.০২১×১০৯ বছর[5] |
গড় তাপমাত্রা | ২.৭২৫৪৮ কেলভিন[6] |
উপাদান | সাধারণ (ব্যারিয়নিক) পদার্থ (৪.৯%) গুপ্ত পদার্থ (২৬.৮%) কৃষ্ণশক্তি (৬৮.৩%) |
এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণযোগ্য শব্দটি দ্বারা কোন বস্তুর আলোক বা অন্যান্য তথ্য শনাক্ত করার সম্ভাব্যতা বা আদৌ পর্যবেক্ষণের মত কিছু উপস্থিত কিনা তা বোঝায় না, বরং আলোর গতি থেকে উদ্ভূত প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতাকেই নির্দেশ করে। যেহেতু কোন সংকেতই আলোর চেয়ে দ্রুত গতিতে ভ্রমণ করতে পারে না, সেহেতু মহাবিশ্বের বয়সের সময়কালে (২০১৫ সালে আনুমানিক ১৩.৭৯৯×১০৯ বছর[5]) আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে, তার অধিক দূরত্বে অবস্থিত বস্তুুসমূহ কোন উপায়েই পৃথিবী হতে শনাক্ত করা যাবে না। তাছাড়া সম্ভবত কিছু বহির্জাগতিক বস্তু আলোর অধিক গতিতে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, এজাতীয় বস্তুগুলোও পৃথিবী থেকে শনাক্ত করা যাবে না।
কার্যত পর্যবেক্ষণযোগ্যতার সীমা মহাবিশ্বের বয়স অনুসারে ১৩.৭৯৯×১০৯ আলোকবর্ষ নয়, যার কারণ দুইটি[12]। প্রথমত, স্থানের সম্প্রসারণের কারণে এমন অনেক বস্তুর আলো শনাক্ত করা যায়, যা বর্তমানে প্রায় ৪৫৭ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত, কিন্তু অতীতে কোন এক সময় যথেষ্ট নিকটবর্তী ছিল[12]। আর দ্বিতীয়ত, মহাবিশ্বের সমন্মীকরণকালে (বিগ ব্যাং এর প্রায় ৩৮০,০০০ বছর পরে) মহাবিশ্ব একরকম অস্বচ্ছ প্লাজমা দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল, এবং ফোটনগুলো দ্রুত অন্যান্য কণা দ্বারা শোষিত হয়ে যেত, যে কারণে আলো বা তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণের সাহায্যে এই সময়ের পূর্বের কোন বস্তু শনাক্ত করা সম্ভব নয়। তবে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ এবং নিউট্রিনো পটভূমি এভাবে প্রভাবিত হয় না। এ সময়-পরবর্তী সবচাইতে পুরাতন ফোটনগুলোই বর্তমানে মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছে। অনাগত ভবিষ্যত প্রযুক্তির দ্বারা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ (যা আলোর গতিতে প্রবাহিত হয়) এবং নিউট্রিনো পটভূমি বিশ্লেষণ করে আরও অতীতে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হতে পারে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কখনো কখনো সমন্মীকরণকাল পরবর্তী তথ্য নিয়ে দৃশ্যমান মহাবিশ্ব এবং মহাজাগতিক প্রসারণকাল (সনাতন মহাবিশ্বতত্ত্বে বিগ ব্যাং ও আধুনিক মহাবিশ্বতত্ত্বে স্ফীতিযুগ) পরবর্তী তথ্য নিয়ে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বকে পৃথকভাবে গণনা করেন। গণনামতে, অনুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের উৎস কণিকাগুলোর বর্তমান সরল দূরত্ব (যা দৃশ্যমান মহাবিশ্বের ব্যাসার্ধের প্রতিনিধিত্ব করে) হল ১.৪×১০১০ পারসেক বা ৪.৫৭×১০১০ আলোকবর্ষ। অপরদিকে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের প্রান্তের বর্তমান সরল দূরত্ব ১.৪৩×১০১০ পারসেক বা ৪.৬৫×১০১০ আলোকবর্ষ[13], যা ২% বৃহত্তর। অতএব পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের আনুমানিক ব্যাসার্ধ ৪.৬৫×১০১০ আলোকবর্ষ[14][15] এবং ব্যাস বা বিস্তার ৯.৩×১০১০ আলোকবর্ষ (২.৮৫×১০১০ পারসেক বা ৮.৮×১০২৩ কিলোমিটার)[16]। সংকট ঘনত্ব ও পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের ব্যাস ব্যবহার করে মোট সাধারণ পদার্থের ভর হিসাব করা যায় প্রায় ১.৫×১০৫৩ কিলোগ্রাম।[17]