নানচিং গণহত্যা
From Wikipedia, the free encyclopedia
নানচিং গণহত্যা,[টীকা 1] যা ইতিহাসে নানচিং ধর্ষণ নামেও পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ চলাকালে ১৯৩৭–৩৮ সালে রাজকীয় জাপানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত একটি গণহত্যা। এই গণহত্যা পরিচালনা করা হয়েছিল তৎকালীন চীনের রাজধানী নানচিং (১৯১২–৪৯) এর জনগণের উপর। ৬ সপ্তাহব্যাপী এই গণহত্যা শুরু হয় ১৯৩৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর। এই সময়ে জাপানের রাজকীয় সেনাবাহিনী ৪০,০০০ থেকে ৩,০০,০০০ নিরীহ চীনা জনগনকে হত্যা করে[7][8] এবং ব্যাপক লুটপাট ও ধর্ষণ করে[9][10]।
নানচিং গণহত্যা (নানচিং-এর ধর্ষণ) | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ | |||||||
কিনহুয়া নদীর তীরে নানচিং হত্যাকাণ্ডে নিহতদের মৃতদহের কাছে দণ্ডায়মান এক জাপানি সেনা | |||||||
|
মার্কো পোলো সেতু ঘটনার পর চীন–জাপান যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় এবং ১৯৩৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর বহু দিন অবরোধের পর প্রায় দেড় লক্ষ জাপানি সৈন্য চীনা শহর নানচিং দখল করে নেয়। এরপর প্রায় কয়েক সপ্তাহ ধরে শহরটিতে এক অবিশ্বাস্য মাত্রার গণহত্যা সংঘটিত হয়। জাপানি সৈন্যরা কখনও পরিকল্পিতভাবে, কখনও কেবল আনন্দের উদ্দেশ্যে অনির্দিষ্টভাবে শহরটির চীনা লোকদেরকে হত্যা ও ধর্ষণ করা শুরু করে। সম্ভবত ৪,০০,০০০ (চার লক্ষ) চীনাকে হত্যা করা হয়, আর সেই সাথে ধর্ষিত হন নানচিং-এর হাজার হাজার নারী।
গণহত্যার এই ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পরও জাপানি সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ও সম্রাট হিরোহিতোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। যুদ্ধ শেষ হবার পর এই গণহত্যার সাথে জড়িত বেশির ভাগ সামরিক নেতার কোন বিচার বা শাস্তি হয়নি। দূর প্রাচ্য আন্তর্জাতিক সেনা অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বেশ কয়েকজনকে এই যুদ্ধাপরাধের জন্য সাজা দেয়া হলেও মূল পরিকল্পনাকরী জাপানি যুবরাজ আসাকাকে শাস্তি দেয়া যায়নি। তাছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের পূর্বে এ সম্পর্কিত সকল প্রমাণাদি ধ্বংস করে ফেলা হয়। ১৯৪৬ সালে টোকিওতে গঠিত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভাষ্য মতে এই গণহত্যায় ২,০০,০০০ এর অধিক চীনা জনগণকে হত্যা করা হয়[11]। ১৯৪৭ সালে চীনে গঠিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভাষ্য মতে ৩,০০,০০০ এর অধিক মানুষকে হত্যা করা হয়।
জাপান সরকার ও সে সময়কার যে সকল সেনাসদস্য নানচিং অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের অনেকেই স্বীকার করেছেন যে সেখানে এই ধরনের বর্বর গণহত্যাসহ ধর্ষণ ও লুটপাটের মত যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছিল[12][13]।