নরওয়ের ইতিহাস
ইতিহাসের বিভিন্ন দিক / From Wikipedia, the free encyclopedia
নরওয়ের ইতিহাস নরওয়ের ভূখণ্ড এবং জলবায়ু দ্বারা বিস্ময়কর মাত্রায় প্রভাবিত হয়েছে। প্রায় ১০,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ বরফ পাতের পশ্চাদপসরণের পর, প্রথম দিকের বাসিন্দারা উত্তরের যে অঞ্চলে চলে গিয়েছিল, সেটিই হচ্ছে এখনকার নরওয়ে। তারা উপকূলীয় অঞ্চল বরাবর সোজা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছিল, উষ্ণায়িত উপসাগরীয় প্রবাহ আনুকুল্যে জীবনের কষ্ট অনেক সহনীয় ছিল। বেঁচে থাকার জন্য তারা মাছ ধরত এবং বল্গাহরিণ (এবং অন্যান্য পশু) শিকার করত। খ্রিস্টপূর্ব ৫,০০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪,০০০ এর মধ্যে প্রথম দিকের কৃষি বসতিগুলি ওসলোফোর্ডের চারপাশে গড়ে উঠেছিল। ধীরে ধীরে, খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ৫০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে, এই কৃষি বসতিগুলি নরওয়ের দক্ষিণাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে – উত্তর অঞ্চলের বাসিন্দারা শিকার ও মাছধরা চালিয়ে যেতে থাকে।
নব্যপ্রস্তরযুগ সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ থেকে শুরু হয়েছিল। অভিবাসন সময়কালে প্রথম সর্দারেরা দল নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরক্ষার প্রথম ধাপে এগোতে শুরু করে। অষ্টম শতাব্দীর শেষ দশক থেকে নরওয়েজীয়রা সমুদ্রের ওপারে প্রথমে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ এবং পরে আইসল্যান্ড এবং গ্রিনল্যান্ড পর্যন্ত চলে যায়। ভাইকিং যুগে একীকরণ দেখা গিয়েছিল। একাদশ শতাব্দীতে খ্রিস্টানীকরণ হয়েছিল এবং নিদারোস একটি আর্চডায়োসেস হয়ে ওঠে। বার্গেন মূল বাণিজ্য বন্দরে পরিণত হয়েছিল, তাকে নিয়ন্ত্রণ করত হানসিয়াটিক লীগ। ১৩৯৭ সালে, ডেনমার্ক এবং সুইডেনের সাথে, নরওয়ে কাল্মার সংগঠনে প্রবেশ করেছিল।
১৫২৩ সালে সুইডেন সংগঠন ত্যাগ করার পরে, নরওয়ে ডেনমার্ক – নরওয়ে সংগথনের কনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠে। ১৫৩৭ সালে পুনর্গঠন উপস্থাপিত হয়েছিল এবং ১৬৬১ সালে সম্পূর্ণ রাজতন্ত্র আরোপ করা হয়েছিল। ১৮১৪ সালে, ডেনমার্কের সাথে নেপোলিয়ানো যুদ্ধে পরাজিত হবার পর কিয়েলের চুক্তি অনুসারে নরওয়েকে সুইডেনের রাজার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। নরওয়ে কিন্তু তার স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং একটি সংবিধানও পরিগ্রহণ করে। কিন্তু কোনও বিদেশি শক্তিই নরওয়ের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়নি, উপরন্তু কিয়েলের চুক্তি অনুযায়ী নরওয়ের ওপর সুইডেনের দাবিকে সমর্থন করেছিল। ১৮১৪ সালে সুইডেনের সাথে একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের পর, দুটি দেশই মসের যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়। যার মধ্যে নরওয়ে সুইডেনের সাথে ব্যক্তিগত ইউনিয়ন মেনে নিয়েছিল। তারা, বিদেশী পরিষেবা কে বাদ দিয়ে, নিজেদের সংবিধান, রাজ্যসভা এবং পৃথক প্রতিষ্ঠান বজায় রেখেছিল। বিশেষ রাজ্যসভা (স্টরটিং) সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনী গ্রহণ করার পর এবং ১৮১৪ সালের ৪ঠা নভেম্বর সুইডেনের ত্রয়োদশ চার্লসকে নরওয়ের রাজা হিসাবে নির্বাচিত করে নেওয়ার পর এই ইউনিয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
১৮৪০ এর দশকে এখানে শিল্পায়ন শুরু হয়েছিল এবং ১৮৬০ এর দশক থেকে বড় আকারের দেশত্যাগ করে উত্তর আমেরিকাতে অভিবাসন হয়েছিল। ১৮৮৪ সালে, রাজা, জোহান স্বেরড্রুপকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন, এইভাবে সেখানে সংসদতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯০৫ সালে সুইডেনের সাথে ইউনিয়নটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। ১৮৮০ থেকে ১৯২০ এর দশক পর্যন্ত রুয়াল আমুনসেন এবং ফ্রিজফ নানসেন এর মতো নরওয়েবাসী একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মেরু অভিযান চালিয়েছিলেন।
জাহাজ এবং জলবিদ্যুৎ ছিল দেশের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। পরবর্তী দশকগুলিতে অর্থনীতির ওঠাপড়া এবং শ্রমিক আন্দোলনের উত্থান শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪০ এবং ১৯৪৫ সালের মধ্যে জার্মানি নরওয়ে দখল করে নিয়েছিল। এর পরে নরওয়ে ন্যাটোতে যোগদান করেছিল এবং গণ- পরিকল্পনার আওতায় দেশের পুনর্নির্মাণ শুরু হয়েছিল। ১৯৬৯ সালে এখানে জ্বালানি তেল আবিষ্কার হয়েছিল এবং ১৯৯৫ সালের মধ্যে নরওয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে এখানে সম্পদের ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটে। ১৯৮০ এর দশক থেকে নরওয়ে বিভিন্ন বিভাগে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছিল এবং এই সময় ব্যাংকিং সংকট শুরু হয়েছিল।
একবিংশ শতাব্দীর মধ্যে, নরওয়ে তেল ও গ্যাস উৎপাদন করে বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ হয়ে ওঠে, এর অর্থনীতির ২০ শতাংশ জ্বালানি বিভাগ থেকে আসে।[1] তেল থেকে আয়কে পুনঃ বিনিয়োগ করে, ২০১৭ সালে নরওয়ে বিশ্বের বৃহত্তম সার্বভৌম সম্পদশালী দেশ ছিল।[2]