নমনীয়তা
ভেঙে পড়ার আগে পদার্থের তাৎপর্যপূর্ণ অস্থিতিস্থাপক বিকৃতি সহ্য করার ক্ষমতা / From Wikipedia, the free encyclopedia
নমনীয়তা বলতে বাইরে থেকে প্রযুক্ত টানজনিত বল কিংবা চাপজনিত বা সংকোচক বলের অধীনে কোনও পদার্থের (সাধারণত ধাতু ও সংকর ধাতু) ফেটে, ভেঙে বা টুকরো না হওয়া পর্যন্ত অস্থিতিস্থাপক ও স্থায়ী রূপবিকার (যেমন প্রসারিত হওয়া, বিস্তৃত হওয়া, বেঁকে যাওয়া, ইত্যাদি) প্রদর্শন করার যান্ত্রিক ধর্মটিকে নির্দেশ করা হয়। টানজনিত বলের অধীনে ঘটলে এ ধর্মটিকে প্রসার্য নমনীয়তা বা সংক্ষেপে প্রসার্যতা (ইংরেজি Ductility) বলে। আর সংকোচক বলের অধীনে ঘটলে এ ধর্মটিকে সংকোচ্য নমনীয়তা বা সংক্ষেপে সংকোচ্যতা (ইংরেজি Malleability) বলে।
কোনও কঠিন উপাদান পদার্থের উপর বল বা পীড়ন প্রযুক্ত করলে সেটিতে সাধারণত প্রথমে স্থিতিস্থাপক রূপবিকার ঘটে, যে ধর্মটিকে স্থিতিস্থাপকতা (ইংরেজি Elasticity) বলে। এক্ষেত্রে প্রযুক্ত বলটিকে সরিয়ে নিলে পদার্থ আবার তার প্রাথমিক আকার-আকৃতিতে ফেরত আসে। কিন্তু রূপবিকারের একটি নির্দিষ্ট সীমার পরে (যাকে স্থিতিস্থাপক সীমা বলে) ঐ উপাদানের রূপবিকার স্থায়ী রূপ ধারণ করে, যে ব্যাপারটিকে নমনীয় পদার্থের অস্থিতিস্থাপকতা (ইংরেজি Plasticity) বা অস্থিতিস্থাপক রূপবিকার (Plastic deformation) বলে। অন্যদিকে যেসব উপাদান নমনীয় নয়, সেগুলির উপর বহিঃস্থ বল প্রয়োগ করলে তেমন কোনও দৃশ্যমান রূপবিকার সাধিত হয় না। উত্তরোত্তর বেশি বল প্রয়োগ করতে থাকলে উপাদানভেদে একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে এইসব উপাদান হঠাৎ, তাৎক্ষণিকভাবে ও তেমন কোনও সতর্কসংকেত প্রদান না করেই ফেটে বা ভেঙে যায়। এদেরকে ভঙ্গুর পদার্থ বলে (যেমন কাচ) এবং তাদের এই ধর্মকে ভঙ্গুরতা বলে।
প্রসার্য নমনীয়তা বা প্রসার্যতা বলতে পদার্থের (বিশেষত ধাতুর) এক ধরনের যান্ত্রিক ধর্মকে বোঝায়, যা দিয়ে সাধারণত প্রযুক্ত টানজনিত বলের (যেমন টেনে তার বানানোর জন্য) অধীনে প্রসারিত হয়ে ঐ পদার্থটির অস্থিতিস্থাপক রূপবিকার প্রদর্শন করার ধর্মকে নির্দেশ করা হয়।[1] উপাদান বিজ্ঞান শাস্ত্রে প্রসার্য নমনীয়তা বা প্রসার্যতা বলতে কোনও টানজনিত পীড়নের অধীনে প্রসারিত হতে হতে ভার বহনের কাজে বিকল হয়ে পড়ার আগে কোন্ মাত্রা পর্যন্ত একটি পদার্থ ঐ পীড়ন সহ্য করে অস্থিতিস্থাপক রূপবিকার (plastic deformation) প্রদর্শন করে, সেই ব্যাপারটি নির্দেশ করা হয়।[2][3] প্রকৌশলশাস্ত্র ও শিল্পদ্রব্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রসার্য নমনীয়তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। কোনও বিশেষ শিল্পোৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য (যেমন শীতল ধাতুকর্ম) কোনও পদার্থের উপযোগিতা, সেটির অতিরিক্ত যান্ত্রিক ভার সহ্য বা শোষণ করার সামর্থ্য ও সেটির ভাঙন-দৃঢ়তা (Fracture toughness, ফাটলের উপস্থিতিতেও ভেঙে না পড়ার ক্ষমতা) সেটির নমনীয়তা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়।[4] কোনও ধাতু যত বেশি প্রসার্য হবে, সেটিকে তত সূক্ষ্ম তারের আকারে কোনও ধাতুর ছাঁচের মধ্য দিয়ে না ভেঙে টেনে নেওয়া যাবে। কিছু কিছু ধাতুকে স্বাভাবিকভাবেই প্রসার্য নমনীয় হিসেবে বর্ণনা করা হয়, যাদের মধ্যে সোনা, তামা ও প্লাটিনাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এদের মধ্যে প্লাটিনাম ধাতুটির বিশুদ্ধ রূপটি সমস্ত ধাতুর মধ্যে সবচেয়ে প্রসার্য নমনীয়।[5] তবে সব ধাতু নমনীয় বৈকল্যের শিকার হয় না, বরং কিছু কিছু ধাতু, যেমন ঢালাই লোহা, ভঙ্গুর বৈকল্যের শিকার হয়। বহুলক বা পলিমার যৌগগুলিকে সাধারণত প্রসার্য উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়, কেননা এগুলি সাধারণত পীড়ন সহ্য করে অস্থিতিস্থাপক রূপবিকার প্রদর্শন করে।[6]
প্রসার্য নমনীয়তা বা প্রসার্যতার সদৃশ আরেকটি যান্ত্রিক ধর্ম হল সংকোচ্য নমনীয়তা (ইংরেজি Malleability) বা সংকোচ্যতা। এটি দিয়ে সংকোচক পীড়নের অধীনে কোনও পদার্থের বিকল না হয়ে (না ভেঙে বা টুকরো না হয়ে) অস্থিতিস্থাপক রূপবিকার প্রদর্শন করার ক্ষমতাকে নির্দেশ করা হয়।[7][8] ঐতিহাসিকভাবে সেইসব উপাদান বা পদার্থকে সংকোচ্য বা সংকোচ্য নমনীয় বলে গণ্য করা হত, যেগুলিকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে বা বেলন দিয়ে চেপে আকৃতি পরিবর্তন করা যেত।[1] সীসা এ ধরনের একটি পদার্থ, যেটি প্রসার্য না হলেও আপেক্ষিকভাবে বেশ সংকোচ্য বা সংকোচ্য নমনীয়।[5][9]