তেলাপোকা
ব্লাটোডা পর্বের পোকা / From Wikipedia, the free encyclopedia
তেলাপোকা বা আরশোলা হল আর্থোপ্রোডা পর্বের পোকা, যাতে উই পোকারাও আছে। মানুষের বাসস্থানের সাথে সম্পর্কিত আছে এমন তেলাপোকার প্রজাতি রয়েছে ৪৬০০ প্রজাতির মধ্যে প্রায় ৩০টি। আরশোলা এক ধরনের অমেরুদণ্ড প্রাণী। আমাদের ঘরে, ঘরের আশপাশে কিংবা বন-জঙ্গলে এদের অবাধ বিচরণ দেখা যায়। পৃথিবীতে প্রায় ৪ হাজার ৬০০ প্রজাতির তেলাপোকা থাকলেও মাত্র ৩০ প্রজাতি মানুষের আশপাশে ঘরবাড়িতে থাকে এবং এদের মধ্যে মাত্র ৪ প্রজাতি প্রধানত মানুষের জন্য ক্ষতিকর। আরশোলা যে কোনো জায়গায় খুবই সহজে অভিযোজিত হতে পারে। এমনকি বেশিরভাগ প্রাণীর মাথা কেটে ফেলার পরপরই মারা গেলেও তেলাপোকা সপ্তাহখানেক বেঁচে থাকতে পারে। মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে শুরু করে খাদ্যগ্রহণ কিংবা রক্তচাপ সবকিছু মাথা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হলেও তেলাপোকার ক্ষেত্রে ভিন্ন। আরশোলার খাদ্যাভ্যাস কিংবা রক্তচাপ শুধু মাথার সঙ্গে সংযুক্ত নয়। এমনকি হৃদযন্ত্রও মাথা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয় না। তাই মাথা কাটার পরও এক সপ্তাহ পর্যন্ত বেঁচে থাকে। তবে মাথা কেটে গেলে সেখানে পিঁপড়া, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া কিংবা অন্য কোনো তেলাপোকার আক্রমণে মাথাকাটা তেলাপোকা মৃত্যুমুখে পতিত হয়। [1][2] প্রায় চারটি প্রজাতিকে ক্ষতিকর হিসেবে ধরা হয়।
তেলাপোকা সময়গত পরিসীমা: ক্রিটেশিয়াস–বর্তমান | |
---|---|
Blaberus giganteus | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী |
পর্ব: | সন্ধিপদী |
শ্রেণী: | পতঙ্গ |
উপশ্রেণী: | Pterygota |
অধঃশ্রেণী: | Neoptera |
মহাবর্গ: | Dictyoptera |
বর্গ: | Blattodea or Blattaria |
Families | |
Blaberidae |
তেলাপোকা এক ধরনের ক্ষতিকর পোকা।[3] যাবতীয় ময়লা আবর্জনা ও অন্ধকারে বাস, এর পূর্বপুরুষরা ৩০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে বসবাস করতো।[4]
তেলাপোকারা বহু পুরনো দলভুক্ত পোকা, এদের প্রায় ৩২০ মিলিয়ন বছর পুরনো কার্বনিফেরাস যুগেও পাওয়া গিয়েছিল। তেলাপোকার পূর্বপুরুষদের মধ্যে বর্তমান তেলাপোকায় বিদ্যমান অভ্যন্তরিন ovipositor ছিল না। তেলাপোকা হল কিছু অংশে সাধারণ পোকার মতই যাদের বিশেষ চোষ্য মুখাংশ (এফিড বা অন্য সত্যিকার পোকার যেমন থাকে) নেই; বরং তাদের আছে চর্বন মুখাংশ যা প্রাচীন নিওপ্টিরান পোকার মত। এদের যততত্র দেখা যায় এবং তারা খুব কঠিন ধরনের পোকা। এরা যে কোন পরিবেশে টিকতে পারে যেমন মেরু অঞ্চলের ঠান্ডা থেকে শুরু করে ট্রপিকালের তীব্র উষ্ণ পরিবেশ। উষ্ণ অঞ্চলের তেলাপোকারা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের চেয়ে আকারে বড় হয়।
তেলাপোকার সব থেকে পরিচিত প্রজাতি হল Periplaneta americana[5], যেটি প্রায় ৪ সে.মি. লম্বা, জার্মান তেলাপোকা, Blattella germanica প্রায় ১.৫ সেণ্টিমিটার লম্বা, এশিয়ান তেলাপোকাও দেড় সেমি লম্বা। বিলুপ্ত তেলাপোকা Carboniferous Archimylacris ও Permian Apthoroblattina এর থেকে কয়েকগুণ বড় ছিল।[6] তেলাপোকাকে তাদের বিরক্তিকর স্বভাবের জন্য পেস্ট/ক্ষতিকর হিসেবে গণ্য করা হয়।
কিছু প্রজাতি যেমন জার্মান গ্রেগারিয়াস তেলাপোকার বিস্তৃত সামাজিক গঠন রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে একই বাসস্থান ব্যবহার, সামাজিক নির্ভরতা, তথ্য স্থানান্তর এবং আত্মীয় চিনতে পারা ইত্যাদি। মানব সংস্কৃতিতে তেলাপোকার অস্তিত্ব অনেক পুরনো। সারা পৃথিবীতে তাদেরকে নোংরা ক্ষতিকর প্রাণী হিসেবে দেখা হয়, যদিও বেশিরভাগ প্রজাতিই অহিংস এবং সারা পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবেশে এদের বাস করতে দেখা যায়। দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়্যাদর দেশে আরশোলা বা তেলাপোকা কে দিয়ে দৌড়বাজি করানো হয়, এবং এটি এক ধরনের মনোরঞ্জক খেলা, স্থানীয় আমেরিকানদের জন্য। এর জন্য ইকুয়াদরকে স্বর্গরাজ্য বলে।