জেরুসালেমের মর্যাদা
From Wikipedia, the free encyclopedia
মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহাসিক শহর জেরুসালেমের মর্যাদা আন্তর্জাতিক আইন এবং কূটনৈতিক আচার ও রীতির ক্ষেত্রে একটি বিতর্কিত প্রসঙ্গ।[1][2][3] সংঘাতের মূল দুই পক্ষ ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন উভয়েই জেরুসালেম শহরকে তাদের রাজধানী শহর হিসেবে দাবি করে আসছে।[4] এই বিবাদ ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতের সবচেয়ে দুর্বশ্য একটি প্রশ্ন হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।[5] শহরের উপর বা এর কোন্ অংশের উপর কোন্ পক্ষের সার্বভৌম অধিকার আছে, এবং শহরের পবিত্র ধর্মীয় স্থানগুলিতে প্রবেশের পথ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, এ নিয়ে উভয়পক্ষের পরস্পর-বিরোধী দাবী রয়েছে।
বর্তমানে পূর্ব জেরুসালেমের আইনি মর্যাদা, বিশেষ করে পুরাতন জেরুসালেম শহরের আইনি মর্যাদা এই বিবাদের প্রধান বিষয়বস্তু। এর বিপরীতে পশ্চিম জেরুসালেমে ইসরায়েলের অবস্থিতির ব্যাপারে সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।[1] ২০১৭ সালের জুন মাসে রাশিয়া সরকারিভাবে পশ্চিম জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর আগে ১৯৮৮ সালে রাশিয়া পূর্ব জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।[6][7] অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিকভাবে জেরুসালেমে একটি আন্তর্জাতিক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সমর্থন জানালেও ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্ত্বাধীন মার্কিন সরকার সরকারিভাবে জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দান করে।[8][9] তবে বহু রাষ্ট্র মার্কিন সিদ্ধান্তের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করে।[10] ভবিষ্যতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয়ের অংশীদারীমূলক রাজধানী হিসেবে জেরুসালেমের মর্যাদার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমর্থন বৃদ্ধি পাচ্ছে।[11] এ ব্যাপারে জাতিসংঘ[12][13] এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়েই তাদের সমর্থন জ্ঞাপন করেছে।[14][15]
জাতিসংঘের সিংহভাগ সদস্যরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সংস্থাই পূর্ব জেরুসালেমের উপরে ইসরায়েলের সার্বভৌম কর্তৃত্ব স্বীকার করে না। এর আগে ১৯৬৭ সালে সংঘটিত ছয় দিনের যুদ্ধশেষে পূর্ব জেরুসালেম এলাকাটি ইসরায়েলের সামরিক নিয়ন্ত্রণে আসে। তারা ১৯৮০ সালে জেরুসালেম আইন নামক ইসরায়েলের ঘোষণাটিকেও স্বীকার করে না, যেখানে "সম্পূর্ণ ও একীভূত" জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করা হয়।[16] এর ফলশ্রুতিতে বেশির ভাগ রাষ্ট্রই ইসরায়েলে তাদের বৈদেশিক দূতাবাসগুলিকে জেরুসালেমের পরিবর্তে হয় তেল আভিভ বা তার শহরতলীতে স্থাপন করেছে। জাতিসংঘের অনেক সদস্যরাষ্ট্র সরকারিভাবে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবের সাথে একমত যে প্রস্তাব অনুসারে জেরুসালেমকে একটি আন্তর্জাতিক নগরীর মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে (জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ১৮১(২) নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী)।[17] ইউরোপীয় ইউনিয়নও এ ব্যাপারে জাতিসংঘের নীতিই অনুসরণ করেছে; তারা জেরুসালেমকে "কর্পাস সেপারাটাম" ("পৃথক দেহ") অর্থাৎ জাতিসংঘের শাসনাধীন একটি আন্তর্জাতিক শহরের মর্যাদা দিতে বলেছে।[18][19] কিন্তু জাতিসংঘ নিজেই আবার আপাত-স্ববিরোধী হয়ে পূর্ব জেরুসালেমকে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের মর্যাদা দিয়েছে।[20] রাশিয়ার পাশাপাশি চীনও পূর্ব জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।[21]