জার্মেনিয়াম
রাসায়নিক মৌল / From Wikipedia, the free encyclopedia
জার্মেনিয়াম হলো ৩২ পারমাণবিক সংখ্যা বিশিষ্ট একটি মৌল যার প্রতীক Ge। এটি কার্বন শ্রেণীর একটি উজ্জ্বল, শক্ত-ভঙ্গুর, ধূসরাভ-সাদা ধাতুকল্প রাসায়নিক উপাদান। রাসায়নিকভাবে একই গ্রুপের সিলিকন ও টিনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সিলিকনের মতোই জার্মেনিয়াম অর্ধপরিবাহিতা প্রদর্শন করে। সিলিকনের মতোই জার্মেনিয়াম প্রকৃতিতে অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে যৌগ উৎপন্ন করে।
প্রকৃতিতে একসাথে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পাওয়া না যাওয়ায় রসায়নের ইতিহাসে জার্মেনিয়াম অপেক্ষাকৃত অনেক পরে আবিষ্কৃত হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রাপ্য সহজলভ্য মৌলের মধ্যে জার্মেনিয়ামের অবস্থান ৫০তম। ১৮৬৯ সালে দিমিত্রি ম্যান্ডেলিভ তার পর্যায় সারণীতে অবস্থান থেকে জার্মেনিয়ামের কিছু রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করেন ও মৌলের অস্তিত্ব সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী করেন। তিনি মৌলটিকে একাসিলিকন নামে অভিহিত করেন। প্রায় দুই দশক পরে ১৮৮৬ সালে ক্লিমেন্স উইঙ্কলার আর্গাইরোডাইট নামের একটি দুর্লভ খনিজে রূপা ও গন্ধকের সাথে একটি নতুন মৌল আবিষ্কার করেন। আপাতদৃষ্টিতে নতুন আবিষ্কৃত মৌলটি আর্সেনিক ও অ্যান্টিমনির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ মনে হলেও, রাসায়নিক যৌগের সংযুক্তি বিশ্লেষণ করে মৌলটিকে ম্যান্ডেলিভের ভবিষ্যদ্বাণীমতো সিলিকনের সাথে সম্পর্কিত বলে মত দেন। উইঙ্কলার তার দেশ জার্মানির নামানুসারে যৌগের নাম রাখেন জার্মেনিয়াম। বর্তমানে, দস্তার প্রাথমিক আকরিক স্ফালেরাইট থেকে জার্মেনিয়াম নিষ্কাশিত হয়, তবে বাণিজ্যিকভাবে রূপা, সীসা ও তামার আকরিক থেকেও জার্মেনিয়াম পুনরুদ্ধার করা হয়।
জার্মেনিয়াম মৌল অর্ধপরিবাহী হিসেবে ট্রানজিস্টরে ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়। ঐতিহাসিকভাবে অর্ধপরিবাহী ইলেকট্রনিক্সের প্রথম দশক সম্পূর্ণরূপে জার্মেনিয়ামের ওপর নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে জার্মেনিয়ামের প্রধান ব্যবহার অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবস্থা, অবলোহিত ফাইবার, সৌর কোষ ও এলইডিতে। পলিমারকরণ বিক্রিয়ার প্রভাবক হিসেবে এবং সাম্প্রতিককালে ন্যনোওয়্যার উৎপাদনে জারমেনিয়াম যৌগ ব্যবহৃত হয়। এই মৌলটি টেট্রাইথাইলজার্মেনিয়ামের মতো বেশ কয়েকটি জৈব-জার্মেনিয়াম যৌগ গঠন করে, যা জৈব-ধাতব রসায়নে তাৎপর্যপূর্ণ। জার্মেনিয়ামকে প্রযুক্তির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ মৌল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জীব দেহের জন্য জার্মেনিয়ামকে অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয় না। জার্মেনিয়ামের কিছু জটিল জৈব যৌগ ঔষধ শিল্পের জন্য পরীক্ষা করা হচ্ছে, যদিও এ পর্যন্ত সাফল্য পাওয়া যায় নি। সিলিকন ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো প্রাকৃতিক জার্মেনিয়াম যৌগসমূহ পানিতে সাধারণত অদ্রবণীয় এবং এ কারণে মুখে প্রবেশে সামান্য বিষাক্ততা প্রদর্শন করে। তবে কৃত্রিমভাবে সংশ্লেষিত দ্রবণীয় জারমেনিয়াম লবণসমূহ বৃক্কে বিষাক্ততা প্রদর্শন করে। হ্যালোজেন ও হাইড্রোজেনযুক্ত কৃত্রিম সংশ্লেষিত রাসায়নিক সক্রিয় জার্মেনিয়াম যৌগসমূহ বিষাক্ত।