চিন্তাকেন্দ্র
নীতিনির্ধারণ বিষয়ে গবেষণা সম্পাদন ও সুপারিশকারী বিশেষজ্ঞ দল / From Wikipedia, the free encyclopedia
চিন্তাকেন্দ্র বলতে এমন এক ধরনের আন্তঃশাস্ত্রীয় গবেষক দল বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে বোঝায়, যাতে উচ্চশিক্ষায়তন ও পেশাদারি ক্ষেত্র থেকে আগত অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞরা সামাজিক নীতি, রাজনৈতিক কৌশল, পরিবেশ, অর্থনীতি, সামরিক বাহিনী বা জাতীয় নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির মতো বিষয়গুলির বিষয়ে বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলির উপরে সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিশ্লেষণী গবেষণা সম্পাদন করেন, এগুলি সংক্রান্ত জননীতির লক্ষ্যসমূহ নির্মাণ করেন, সেগুলি সুপারিশ করেন ও সেগুলির সপক্ষে প্রবক্তার ভূমিকা পালন করেন। সব মিলিয়ে একটি চিন্তাকেন্দ্রে ৫ থেকে ৫০ জন গবেষক ও কর্মচারী থাকতে পারে। চিন্তাকেন্দ্রকে ইংরেজি পরিভাষায় "থিংক ট্যাংক" (Think tank) বলা হয়। তাছাড়া এগুলিকে কখনও কখনও নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (Policy Research Institute) নামেও ডাকা হতে পারে।
এই নিবন্ধটি অন্য একটি ভাষা থেকে আনাড়িভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। এটি কোনও কম্পিউটার কর্তৃক অথবা দ্বিভাষিক দক্ষতাহীন কোনো অনুবাদক কর্তৃক অনূদিত হয়ে থাকতে পারে। |
চিন্তাকেন্দ্রগুলি সমাজের উচ্চস্তরের ক্ষমতাবান ব্যক্তিদেরকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের প্রশ্নে নির্দিষ্ট পথ অনুসরণে রাজি করানোর চেষ্টা করে কিংবা তাদেরকে নির্দিষ্ট বিষয়ে পরামর্শ দান করে। চিন্তাকেন্দ্রগুলি জননীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়াতে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তারা দাবী করে যে তাদের কাজ জননীতি সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও জনগণের সার্বিক কল্যাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চিন্তাকেন্দ্রগুলির গবেষকদের পেশাদারি মনোভাব ও বিশেষজ্ঞ জ্ঞান তাদের গবেষণার ফলাফলগুলিকে এক ধরনের বৈধতা ও নির্ভরযোগ্যতা প্রদান করে। তারা জননীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণাপত্র, গ্রন্থ ও প্রতিবেদন প্রকাশনা, সম্মেলন, প্রশিক্ষণমূলক আলোচনাসভা বা সেমিনার ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত করার মতো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। কদাচিৎ তারা আইনের খসড়াও প্রস্তুত করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে শীর্ষস্থানীয় পত্রপত্রিকায় মতামত কলামে প্রকাশিত নিবন্ধের সংখ্যা ও মার্কিন আইনসভার শুনানিতে বিশেষজ্ঞ সাক্ষ্যপ্রদানের সংখ্যাও একটি চিন্তাকেন্দ্রের সাফল্য নির্ধারণ করে থাকে। এছাড়া চিন্তাকেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা টেলিভিশন ও অন্যান্য গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার প্রদান করতে পারেন। বিশ শতকের শেষে এসে চিন্তাকেন্দ্রগুলি প্রধান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে। তারা উচ্চশিক্ষায়তনিক অঙ্গন, রাষ্ট্র, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বৃহৎ ও শক্তিশালী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজের মধ্য মধ্যস্থতাকারী একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক অবস্থান দখল করেছে। তারা সরকার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের গ্রহণযোগ্য সীমা বা তাত্ত্বিক পরিকাঠামো নির্ধারণে সক্রিয় ও আধিপত্যমূলক ভূমিকা রাখে। তবে একই সাথে তারা তাদের গবেষণার প্রকৃতি স্বাধীন ও বস্তুনিষ্ঠ দাবী করে নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক নির্ভরযোগ্যতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। কোনও দেশের চিন্তাকেন্দ্রের সংখ্যা ও বৈচিত্র্য সেই দেশের সমাজের নতুন ধ্যানধারণা শোনার উন্মুক্ত মনোভাব ও দেশটির প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্যের একটি সূচক।
বেশিরভাগ চিন্তাকেন্দ্রই বেসরকারী সংস্থা হয়ে থাকে, তবে কিছু চিন্তাকেন্দ্র সরকার, আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা বিশেষ রাজনৈতিক দল, ব্যবসা বা সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত থাকতে পারে।[1] চিন্তাকেন্দ্রগুলি সাধারণত ধনী ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত অনুদান নিয়ে তহবিল গঠন করে; এছাড়া চুক্তি, মরণোত্তর অনুদান, প্রতিবেদন বিক্রয়, ইত্যাদিও এগুলির আয়ের উৎস। এগুলি ব্যক্তি, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারের জন্যও কাজ করতে পারে।[2] সরকারের জন্য তারা সামাজিক নীতি পরিকল্পনা ও জাতীয় নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলিতে পরামর্শ প্রদান করে। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এগুলি নতুন প্রযুক্তি বা নতুন পণ্যের উদ্ভাবন ও পরীক্ষণের ব্যাপারে পরামর্শ দান করে। চিন্তাকেন্দ্রগুলি সাধারণত রাজনৈতিক দল ও সরকার থেকে স্বাধীন হলেও এগুলির রাজনৈতিক পক্ষপাত থাকতে পারে।
চিন্তাকেন্দ্রের ইংরেজি পরিভাষা "থিংক ট্যাংক" (Think tank) মূলত ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় উদ্ভাবিত একটি সামরিক বিভাষা, যা দিয়ে সামরিক পরিকল্পনা ও সমরকৌশল আলোচনার নিরাপদ স্থান বোঝানো হত। ১৯৬০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটি দ্বারা বেসরকারি ব্যক্তিমালিকানাধীন অলাভজনক নীতি গবেষণা সংস্থাগুলিকে নির্দেশ করতে এই পরিভাষাটির ব্যবহার শুরু হয়। এর বহু আগে ১৯শ শতকের শেষভাগে যুক্তরাজ্যের ফাবিয়ান সোসাইটি নামক সংগঠনটি জননীতির পরিবর্তনের লক্ষ্যে একই রকম ভূমিকা পালন করেছিল। বহু বছর ধরে কেবলমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই এই রকমের চিন্তাকেন্দ্রগুলির বিকাশ ঘটে, কেননা সেখানে সরকারি তহবিলের পরিবর্তে বেসরকারি তহবিলের অর্থায়নে এই ধরনের প্রতিষ্ঠান গঠনের জন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূল ছিল। পরবর্তীতে ইংরেজিভাষী অন্যান্য দেশ যেমন যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াতেও এগুলির বিকাশ ঘটে। ২১শ শতকের শুরুতে এসে চিন্তাকেন্দ্রগুলির সিংহভাগই মূলত উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত হলে আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে এগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৭ সালে সারা বিশ্বে প্রায় ৫ হাজার চিন্তাকেন্দ্র ছিল, যার মধ্যে ৬১% মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত ছিল। এশিয়া মহাদেশে সেসময় প্রায় ৬০০ চিন্তাকেন্দ্র ছিল।