ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়
দ্রুত ঘূর্ণায়মান ঝড় / From Wikipedia, the free encyclopedia
ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় হল একটি দ্রুত ঘূর্ণমান ঝড় যাতে থাকে একটি নিম্নচাপ কেন্দ্র, নিকটবর্তী নিম্ন-স্তরের দ্রুতবেগে প্রদক্ষিণরত বায়ু, ঝড়ো বাতাস, সর্পিল বিন্যাসের বজ্রঝড় যা প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। অবস্থান এবং শক্তির ভিত্তিতে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়কে বিভিন্ন নামে উল্লেখ করা হয়। নামগুলোর মধ্যে রয়েছে হারিকেন (/ˈhʌrɪkən,
হারিকেন হল আটলান্টিক মহাসাগর এবং উত্তর-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়। অন্যদিকে টাইফুন হল উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর বা ভারত মহাসাগরে এই ঝড়গুলোকে কেবল ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় বা তীব্র সাইক্লোনিক ঝড় হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[3]
ক্রান্তীয় শব্দটি এই ঝড়গুলোর ভৌগোলিক উৎপত্তিস্থল নির্দেশ করে যা হল সাধারণভাবে ক্রান্তীয় [en] সমুদ্র। "সাইক্লোন" শব্দটি ঝড়ের বাতাসের বৃত্তাকার ঘূর্ণন বুঝায়।[4] ঘূর্ণিঝড়ে বাতাস উত্তর গোলার্ধের ক্ষেত্রে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধের ক্ষেত্রে ঘড়ির কাঁটার দিকে কেন্দ্রীয় চোখের চারপাশে ঘুরতে থাকে। বিপরীত ঘূর্ণন কোরিওলিস প্রভাবের কারণে হয়। ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলি সাধারণত অপেক্ষাকৃত উষ্ণ জলের সাগরে গঠিত হয়। এগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পানির বাষ্পীভবনের মাধ্যমে শক্তি অর্জন করে, যা ঘণীভূত হয়ে মেঘে পরিণত হয় এবং বৃষ্টিপাত ঘটায় যখন আর্দ্র বাতাস শীতল হয়ে সম্পৃক্ত হয়। এই শক্তির উৎসটি মধ্য অক্ষাংশের ঘূর্ণিঝড়গুলোর [en] থেকে ভিন্ন যেগুলো প্রাথমিকভাবে আনুভূমিক তাপমাত্রা বৈষম্য দ্বারা চালিত হয়। ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলির ব্যাস সাধারণত ১০০ এবং ২,০০০ কিমি (৬২ এবং ১,২৪৩ মা) এর মধ্যে হয়।
ঘূর্ণিঝড়ের দ্রুত ঘূর্ণায়মান বাতাস কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণশীলতার ফলাফল। ঝড়গুলোর নিরক্ষরেখার ৫° এর মধ্যে তৈরি হওয়ার ঘটনা দূর্লভ।[5] শক্তিশালী উইন্ড শিয়ার [en] এবং দুর্বল ইন্টারট্রপিক্যাল কনভারজেন্স জোনের [en] কারণে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলো দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে প্রায় অপরিচিত।[6] এছাড়াও আফ্রিকান পূর্বদিকস্থ জেট [en] এবং বায়ুমন্ডলীয় অস্থিতিশীল অঞ্চলসমূহ যা আটলান্টিক মহাসাগর ও ক্যারিবিয়ান সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম দেয়, সাথে এশিয়ার মৌসুমী বায়ু, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় ওয়ার্ম পুল উত্তর গোলার্ধ এবং অস্ট্রেলিয়ার বৈশিষ্ট্য।
উপকূলীয় অঞ্চল দ্বীপ অঞ্চলের তুলনায় ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই ঝড়গুলোর প্রাথমিক শক্তিউৎস হল উষ্ণ মহাসাগরের পানি, সে কারণে সাগরের উপরে বা নিকটে এগুলো সাধারণত শক্তিশালী হয় এবং ভূমির উপরে কিছুটা দ্রুত দুর্বল হতে থাকে। উপকূলীয় অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতি প্রবল বাতাস, বৃষ্টিপাত, উঁচু ঢেউয়ের কারণে হতে পারে। ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় একটি বড় অঞ্চল থেকে বাতাস টেনে নেয় — যা অত্যন্ত বৃহৎ অঞ্চল হতে পারে অধিকাংশ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে — এবং সেই বাতাসে থাকা জলীয় অংশকে (বায়ুমণ্ডলীয় আর্দ্রতা ও বাষ্পীভবন থেকে সৃষ্ট আর্দ্রতা) একটি ছোট অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত করে। নতুন আর্দ্র বাতাস কর্তৃক আর্দ্র বাতাসের এই পুনঃপ্রতিস্থাপন উপকূলের ৪০ কিলোমিটার (২৫ মা) এর মধ্যে অতি ভারী বৃষ্টিপাত এবং বন্যা ঘটাতে পারে।
মানব জনগোষ্ঠীতে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের ফলাফল বিধ্বংসী হলেও, এগুলো খরা পরিস্থিতি লাঘব করে। এছাড়াও এগুলো ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে তাপশক্তি বহন করে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে নিয়ে যেতে পারে, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক জলবায়ুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।