ক্যারেকটার্স অফ শেকসপিয়র’স প্লেজ
From Wikipedia, the free encyclopedia
ক্যারেকটার্স অফ শেকসপিয়র’স প্লেজ (ইংরেজি: Characters of Shakespear's Plays) হল ১৮১৭ সালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ-গ্রন্থ। বইটির রচয়িতা ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের বিশিষ্ট ইংরেজ প্রাবন্ধিক তথা সাহিত্য সমালোচক উইলিয়াম হ্যাজলিট এবং এটির বিষয়বস্তু ছিল শেকসপিয়রীয় নাট্যসাহিত্যের সমালোচনা। গ্রন্থটি রচিত হয়েছিল স্যামুয়েল জনসন প্রমুখের নব্য-ক্ল্যাসিক দৃষ্টিভঙ্গিতে শেকসপিয়র মূল্যায়নের প্রতিক্রিয়া রূপে। জার্মান সমালোচক অগস্ট ভিলহেম শ্লেগেল সমালোচনার যে পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন, সেই পদ্ধতিক্রমে ইংরেজি ভাষায় প্রথম প্রকাশিত শেকসপিয়র নাট্য-সমালোচনাগুলির অন্যতম ছিল এই বইটি। স্যামুয়েল টেলর কোলরিজের রচনাবলির সঙ্গে এই গ্রন্থটিও শেকসপিয়রের মেধা মূল্যায়নের পথ সুগম করে দেয় এবং তা ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগের সাহিত্য সমালোচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায়। বইটি লেখা হয়েছিল সাধারণ পাঠকের সহায়িকা হিসাবে এবং এটিই প্রথম বই যাতে শেকসপিয়রের সব ক’টি নাটক আলোচিত হয়।
লেখক | উইলিয়াম হ্যাজলিট |
---|---|
দেশ | ইংল্যান্ড |
ভাষা | ইংরেজি |
ধরন | সাহিত্য সমালোচনা |
প্রকাশক | রোল্যান্ড হান্টার (সঙ্গে চার্লস ও জেমস ওলিয়ার) |
প্রকাশনার তারিখ | ৯ জুলাই, ১৮১৭ |
মিডিয়া ধরন | মুদ্রণ |
পূর্ববর্তী বই | দ্য রাউন্ড টেবল |
পরবর্তী বই | আ ভিউ অফ দি ইংলিশ স্টেজ |
এই গ্রন্থ রচনার অব্যবহিত পূর্বেই হ্যাজলিট নাট্য সমালোচক হিসাবে পরিচিতি অর্জন করেছিলেন এবং সাহিত্যের অঙ্গ হিসাবেই নাটকের উপর অধিক পরিমাণে আলোকপাত করছিলেন। সেই সঙ্গে এডিনবরা রিভিউ সহ বিভিন্ন অগ্রণী পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা সাহিত্য সমালোচনামূলক বিভিন্ন রচনাও প্রকাশিত হচ্ছিল। ক্যারেকটার্স অফ শেকসপিয়র’স প্লেজ গ্রন্থটিই তাঁর প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত সাহিত্য পর্যালোচনা। যে পঁয়ত্রিশটি নাটককে হ্যাজলিট যথার্থ অর্থে শেকসপিয়রের লেখা নাটক মনে করতেন, সেগুলিকেই এই গ্রন্থে তিনি বত্রিশটি অধ্যায়ে আলোচনা করেন। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত অন্যান্য নিবন্ধ ও সমালোচনা থেকেও নতুন উপাদান সংগ্রহ করে হ্যাজলিট তাঁর গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। বইটির মুখবন্ধে শেকসপিয়র সৃষ্ট চরিত্রগুলির অনন্যতা প্রসঙ্গে তাঁর প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলিকে উপস্থাপনা করার পাশাপাশি তিনি আলোচনা করেন পূর্ববর্তী শেকসপিয়র সমালোচনার কথাও। পরিশেষে "শেকসপিয়রের অনিশ্চিত নাটকসমূহ" ও "কবিতা ও চতুর্দশপদী" বিষয়ে দু’টি অধ্যায়ের মাধ্যমে তিনি বইটি সম্পূর্ণ করেন।
এই বইতে শেকসপিয়র সৃষ্ট চরিত্রগুলির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন হ্যাজলিট। চরিত্রগুলিকে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে এবং এই ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন স্মরণীয় সব শব্দগুচ্ছ ("ইট ইজ উই হু আর হ্যামলেট")। এই ব্যাখ্যায় প্রযুক্ত মনস্তাত্ত্বিক অন্তদৃষ্টি পরবর্তীকালে শেকসপিয়র সমালোচনার ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। প্রকাশের পর প্রথম দিকে বইটি তেমন প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও, শেকসপিয়রের নাটকের নাটকীয় গঠনভঙ্গি, কাব্য এবং প্রতিটি নাটকের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু ও সাধারণ প্রকৃতি সম্পর্কে হ্যাজলিটের মন্তব্যগুলি পরবর্তীকালের সমালোচকবর্গের বিস্তারিত ব্যাখ্যার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল। হ্যাজলিট প্রায়শই বলেছেন যে, মঞ্চ-উপস্থাপনা শেকসপিয়রের নাটকগুলির প্রতি সুবিচার করতে পারে না। কিন্তু সেই সঙ্গে কয়েকটি নাটককে তিনি বিশেষভাবে অভিনয়যোগ্য বলেও মনে করেছেন। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে তিনি এডমন্ড কিন প্রমুখ নির্দিষ্ট কয়েকজন অভিনেতার প্রশংসাও করেছেন।
বইটি প্রথম দিকে উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিল। কবি জন কিটস প্রমুখের উপর এই বইয়ের প্রভাব ছিল তাৎক্ষণিক ও শক্তিশালী। পরবর্তীকালে এটি বিশ্রীভাবে সমালোচিত হয়। হ্যাজলিটের বইখানি লেখকের জীব্দদশায় তার প্রভাবের অধিকাংশই হারিয়ে ফেলে। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এটি পুনরায় মূলধারার শেকসপিয়র সমালোচনায় প্রবেশ করে। বইয়ের প্রথম সংস্করণ দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। ১৮১৮ সালের মধ্যভাগে দ্বিতীয় সংস্করণের বিক্রি প্রথমে দ্রুত হলেও ক্রমে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এর কারণ ছিল সমসাময়িক কালের টোরি সাহিত্য পত্রিকাগুলির অত্যন্ত প্রতিকূল, ব্যক্তি-আক্রমণমূলক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সমালোচনা। প্রাবন্ধিক হিসাবে হ্যাজলিটের রচনার প্রতি কেউ কেউ আগ্রহ দেখালেও তাঁর মৃত্যুর অনেক পরে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে পুনরায় তাঁর শেকসপিয়র ব্যাখ্যা নিয়ে উল্লেখযোগ্য আগ্রহের সঞ্চার ঘটে। বিংশ শতাব্দীতে প্রভাবশালী সমালোচক এ. সি. ব্র্যাডলে ও অপর কয়েকজন শেকসপিয়রের অনেক চরিত্র সম্পর্কে এই বইটির ব্যাখ্যাকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন। কিন্তু তারপর হ্যাজলিট ও ব্র্যাডলে উভয়েই সমালোচিত হন শেকসপিয়রীয় সমালোচনা ধারার "চরিত্র" শাখার ত্রুটিবিচ্যুতি প্রদর্শনের জন্য; প্রধানত নাটকের পাত্রপাত্রীদের বাস্তব চরিত্রের মতো করে আলোচনা করার জন্য। পুনরায় শেকসপিয়রীয় সমালোচনায় হ্যাজলিটের অবদানগুলি প্রত্যাখ্যাত হয়।
চিন্তাবিদ হিসাবে হ্যাজলিটের রচনার প্রতি আগ্রহ আবার জেগে ওঠে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে। শেকসপিয়রের নাটক সম্পর্কে তাঁর সামগ্রিক চিন্তাভাবনা (বিশেষত ট্র্যাজেডিগুলি সম্পর্কে), শাইলক, ফলস্টাফ, ইমোজেন, ক্যালিবান ও ইয়াগো প্রমুখ নির্দিষ্ট কয়েকটি চরিত্র সম্পর্কে তাঁর আলোচনা এবং নাটক ও কবিতার প্রকৃতি সম্পর্কে তাঁর সাধারণ বক্তব্য, যেমন কোরিওলেনাস-সংক্রান্ত নিবন্ধে ব্যক্ত হয়েছিল, সেগুলি নতুন করে প্রশংসিত হয় এবং অন্যান্য শেকসপিয়রীয় সমালোচনাকে প্রভাবিত করে।
অনেক নাটক সম্পর্কে হ্যাজলিটের ধ্যানধারণাগুলি তাঁর সমসাময়িক কোলরিজের বক্তব্যের চিন্তা-উদ্রেককারী বিকল্প হিসাবে মূল্যায়িত করা হয়। ক্যারেকটার্স অফ শেকসপিয়র’স প্লেজ বইটি এখন শেকসপিয়রের নাটকচর্চার অন্যতম প্রধান গ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃত। হ্যাজলিটও শেগেল ও কোলরিজের পাশাপাশি রোম্যান্টিক যুগের তিন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শেকসপিয়রীয় সমালোচকের অন্যতম হিসাবে গণ্য হন।