কাতালুনিয়া
স্পেনের একটি স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল / From Wikipedia, the free encyclopedia
কাতালুনিয়া[টীকা 1] (কাতালান: Catalunya, আ-ধ্ব-ব: [kətəˈɫuɲə]; স্পেনীয়: Cataluña, আ-ধ্ব-ব: [kataˈluɲa]; অক্সিতঁ: Catalonha, আ-ধ্ব-ব: [kataˈluɲɔ]) স্পেনের একটি স্বায়ত্তশাসিত মণ্ডলী, যা স্বায়ত্তশাসনের সংবিধি দ্বারা একটি জাতীয়তা হিসাবে মনোনীত।[lower-alpha 4][11]
কাতালুনিয়া | |
---|---|
স্বায়ত্বশাসিত মণ্ডলী | |
সঙ্গীত: এলস সেগাদরস (কাতালান) "দ্য রিপারস" | |
স্পেনে কাতালুনিয়ার অবস্থান (লাল) | |
স্থানাঙ্ক: ৪১°৫০′১৫″ উত্তর ০১°৩২′১৬″ পূর্ব | |
দেশ | স্পেন |
অবস্থা | স্বায়ত্বশাসিত সম্প্রদায় (জাতীয়তা হিসাবে শৈলী) |
গঠন | ৮০১ (বার্সেলোনার কাউন্টি) ১১৩৭ (আরাগনের সাথে ইউনিয়ন) ১২৮৩ (কাতালান সংবিধান) ১৫১৬ (প্রথম চার্লস এর অধীনে কাস্তিলে ও আরাগনের ইউনিয়ন) ১৭১৬ (নুয়েভা প্লান্তা) |
স্বায়ত্তশাসনের বিধি | ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ ১৮ই সেপ্টেম্বর ১৯৭৯ ৯ আগস্ট, ২০০৬ (বর্তমান সংস্করণ) |
রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর | বার্সেলোনা ৪১°২৩′ উত্তর ২°১১′ পূর্ব |
প্রদেশসমূহ | বার্সেলোনা, হিরোনা, ইয়েইদা, তার্রাগোনা |
সরকার | |
• ধরন | সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের অধীনে সরকার পরিচালিত |
• শাসক | কাতালুনিয়ার হেনেরালিতাত |
• রাষ্ট্রপতি | পেরে আরাহোনেস |
• সংসদের স্পিকার | আলবা ভার্জেস |
• আইনসভা | কাতালুনিয়া সংসদ |
• ডেপুটি কংগ্রেস | ৪৮ সংসদ সদস্য (৩৫০ জনের মধ্যে) |
• স্পেনের উচ্চ আইনসভা | ২৪ সিনেটর (২৬৫ জনের মধ্যে) |
আয়তন[1] | |
• মোট | ৩২,১১৩.৮৬ বর্গকিমি (১২,৩৯৯.২৩ বর্গমাইল) |
এলাকার ক্রম | স্পেনে ৬ষ্ঠ |
জনসংখ্যা (২০২০) | |
• মোট | ৭৭,২৭,০২৯[2] |
• ক্রম | স্পেনে ২য় (১৬%) |
• জনঘনত্ব | ২৪১/বর্গকিমি (৬২০/বর্গমাইল) |
বিশেষণ | কাতালান বা কাতালানিয়ান català, -ana (ca) catalán, -ana (es) catalan, -a (oc) |
স্থূঅউ (নামমাত্র; ২০১৮)[3] | |
• মোট | €২২৬ বিলিয়ন |
• মাথা পিছু | €৩২,৮০০ |
স্থূঅউ (ক্রক্ষস; ২০১৭)[4] | |
• মোট | $৩৪৩ বিলিয়ন |
• মাথা পিছু | $৪৬,০২৪ |
সময় অঞ্চল | সিইটি (ইউটিসি+১) |
• গ্রীষ্মকালীন (দিসস) | কেইগ্রীস (ইউটিসি+০২:০০) |
এলাকা কোড | +৩৪ ৯৩ (বার্সেলোনা এলাকা) +৩৪ ৯৭ (কাতালুনিয়ার বাকি অংশ) |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | ES-CT |
দাপ্তরিক ভাষা |
|
রক্ষাকর্তা সাধু | সেন্ট জর্জ (Sant Jordi), মন্টসেরাটের ভিরজিন |
মাউস (২০১৯) | ০.৯১৬[9] খুব উচ্চ · ৪র্থ |
ওয়েবসাইট | gencat.cat |
জিরোনা, বার্সেলোনা, তারাগোনা এবং ইয়েইদা নামক চারটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত কাতালুনিয়ার আয়তন প্রায় ৩২,১১৩ বর্গকিলোমিটার (বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশের কিছু বেশি)।
কাতালুনিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চল (ভাল দি'আরান বাদে) ইবেরীয় উপদ্বীপের উত্তর-পূর্বে পিরিনীয় পর্বতমালার দক্ষিণে অবস্থিত। কাতালুনিয়া প্রশাসনিকভাবে চারটি প্রদেশে বিভক্ত: বার্সেলোনা, জিরোনা, লেইদা এবং তারাগোনা। রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর বার্সেলোনা স্পেনের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল পৌরসভা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পঞ্চম-সবচেয়ে জনবহুল নগর এলাকা।[12] বর্তমান সময়ের কাতালুনিয়া মধ্যযুগীয় ও প্রারম্ভিক আধুনিক কাতালুনিয়ার অধিকাংশ রাজ্য নিয়ে গঠিত(বাকি রাউসিলনের সহ যা এখন ফ্রান্সের পিরিনীয়-ওরিয়েন্টালের অংশ)। এর উত্তরে ফ্রান্স(অক্সিতান) এবং অ্যান্ডোরা, পূর্বে ভূমধ্যসাগর এবং পশ্চিমে আরাগোনের স্পেনীয় স্বায়ত্তশাসিত সম্প্রদায় এবং দক্ষিণে ভালেনসিয়া রয়েছে। কাতালুনিয়ার দাপ্তরিক ভাষা হল কাতালান, স্পেনীয় এবং অক্সিতঁর আরানেজ উপভাষা।[7]
৮ম শতাব্দীর শেষের দিকে পূর্ব পিরেনিস জুড়ে বিভিন্ন প্রদেশ ফ্রাঙ্কীয় সাম্রাজ্য দ্বারা মুসলিম আক্রমণের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিবন্ধক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১০ম শতকে বার্সেলোনা প্রদেশ ধীরে ধীরে স্বাধীন হয়ে ওঠে।[13] ১১৩৭ সালে বার্সেলোনা এবং আরাগোন সাম্রাজ্য আরাগোনের ক্রাউনের অধীনে বিবাহের মাধ্যমে একত্রিত হয়েছিল। ক্রাউনের মধ্যে কাতালান প্রদেশগুলি একটি সাধারণ রাজনীতি গ্রহণ করে, কাতালুনিয়ার রাজত্ব তার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার বিকাশ করে, যেমন আদালত, সাধারণতন্ত্র এবং সংবিধান, ক্রাউনের ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্য এবং সম্প্রসারণবাদের ভিত্তি হয়ে উঠেছে। পরবর্তী মধ্যযুগে কাতালান সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। ১৪৬৯ সালে আরাগোনের রাজা এবং ক্যাস্তিলের রাণী বিবাহিত হয়েছিলেন এবং তাদের সমস্ত স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান এবং আইন বজায় রেখে তাদের রাজ্য একসাথে শাসন করেছিলেন।
ফ্রাঙ্কো-স্পেনীয় যুদ্ধের সময়(১৬৪৫-১৬৫৯) কাতালোনিয়া বিদ্রোহ করেছিল(১৬৪০-১৬৫২) রাজকীয় সেনাবাহিনীর একটি বিশাল এবং প্রকট উপস্থিতির বিরুদ্ধে, সংক্ষিপ্তভাবে ফরাসি সুরক্ষার অধীনে একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়েছিল যতক্ষণ না এটি স্পেনীয় সেনাবাহিনী দ্বারা পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল। পাইরেনিস চুক্তির (১৬৫৯) মাধ্যমে রুসিয়নের অধিকাংশ অঞ্চলসহ কাতালুনিয়ার উত্তরাঞ্চল ফ্রান্সের কাছে হস্তান্তর করা হয়। স্পেনীয় উত্তরাধিকারের যুদ্ধের সময়(১৭০১-১৭১৪) আরাগোনের ক্রাউন বোরবন স্পেনের পঞ্চম ফিলিপের বিরুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, কিন্তু ১১ সেপ্টেম্বর ১৭১৪ সালে বার্সেলোনার পতনের সাথে কাতালানরা পরাজিত হয়। পঞ্চম ফিলিপ পরবর্তীকালে স্পেন জুড়ে একটি ঐক্যবদ্ধ প্রশাসন আরোপ করে নুয়েভা প্লান্তা দেক্রি প্রণয়ন করেন, যা আরাগোনের ক্রাউনের অন্যান্য রাজ্যের মতো কাতালান প্রতিষ্ঠান ও অধিকারকে দমন করে। ফলস্বরূপ সরকার ও সাহিত্যের ভাষা হিসাবে কাতালান ভাষা স্পেনীয় দ্বারা গ্রহণ করা হয়েছিল। ১৮শ শতাব্দী জুড়ে কাতালুনিয়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্বাক্ষী ছিলো।
১৯শ শতাব্দীতে কাতালুনিয়া নেপোলিয়নীয় এবং কার্লিস্ট যুদ্ধ দ্বারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। শতাব্দীর দ্বিতীয় তৃতীয়াংশে এটি শিল্পায়নের অভিজ্ঞতা লাভ করে। শিল্প সম্প্রসারণ থেকে সম্পদ বৃদ্ধির সাথে সাথে এটি একটি সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ দেখেছিল যার সাথে প্রারম্ভিক জাতীয়তাবাদ দেখা দেয় এবং বেশ কয়েকটি শ্রমিক আন্দোলন দেখা দেয়। দ্বিতীয় স্পেনীয় প্রজাতন্ত্র (১৯৩১–১৯৩৯) প্রতিষ্ঠার সাথে সাধারণতন্ত্র একটি কাতালান স্বায়ত্তশাসিত সরকার হিসাবে পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল। স্পেনের গৃহযুদ্ধের পরে ফ্রাঙ্কোইস্ট একনায়কত্ব দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে কাতালান স্ব-সরকারের বিলুপ্তি এবং কাতালান ভাষার সরকারী ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। স্বৈরাচারী সময়কালের পর ১৯৫০ এর দশকের শেষ থেকে ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত কাতালুনিয়া দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখে, যা পুরো স্পেন থেকে অনেক কর্মীকে আকর্ষণ করে, যা বার্সেলোনাকে ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম শিল্প মহানগরীতে পরিণত করে এবং কাতালুনিয়াকে একটি প্রধান পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করে। গণতন্ত্রে স্পেনীয় উত্তরণের সময় (১৯৭৫-১৯৮২) কাতালুনিয়া স্ব-শাসন পুনরুদ্ধার করে এবং বর্তমানে এটি স্পেনের সবচেয়ে অর্থনৈতিকভাবে গতিশীল সম্প্রদায়গুলির মধ্যে একটি।
২০১০ এর দশক থেকে কাতালান স্বাধীনতার জন্য ক্রমবর্ধমান সমর্থন বাড়ছে। ২৭ অক্টোবর ২০১৭ সালে কাতালান সংসদ একতরফাভাবে একটি গণভোটের পরে স্বাধীনতা ঘোষণা করে যা স্পেনীয় রাষ্ট্র দ্বারা অসাংবিধানিক বলে বিবেচিত হয়েছিল। স্পেনীয় ব্যবস্থাপক সভা (সিনেট) কাতালান সরকারকে অপসারণ করে এবং একটি দ্রুত আঞ্চলিক নির্বাচন আহ্বান করে সরাসরি শাসন বলবৎ করার পক্ষে ভোট দেয়। স্পেনীয় সুপ্রিম কোর্ট কাতালান সরকারের সাতজন প্রাক্তন মন্ত্রীকে বিদ্রোহ ও গণফান্ডের অপব্যবহারের অভিযোগে কারারুদ্ধ করে, যখন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুজদেমন সহ কয়েকজন অন্য ইউরোপীয় দেশগুলিতে পালিয়ে যান। যারা কারাগারে বন্দী ছিলো[lower-alpha 5] তাদেরকে ২০২১ সালে স্পেনীয় সরকার ক্ষমা করেছিল।