ওসাইরিসের অতিকথা
প্রাচীন মিশরীয় পৌরাণিক গল্প / From Wikipedia, the free encyclopedia
ওসাইরিসের অতিকথা হল প্রাচীন মিশরীয় পুরাণে সর্বাপেক্ষা বিশদ ও প্রভাবশালী উপাখ্যান। এই অতিকথার মূল উপজীব্য বিষয়টি হল মিশরের আদ্যকালীন রাজা তথা দেবতা ওসাইরিসের হত্যাকাণ্ড ও তার পরিণতিতে ঘটা ঘটনাসমূহ। ওসাইরিসকে খুন করে তার ভাই সেত অন্যায়ভাবে সিংহাসন অধিকার করেছিলেন। অন্যদিকে ওসাইরিসের স্ত্রী আইসিস তার স্বামীর খণ্ডবিখণ্ড দেহ পুনরায় সংযুক্ত করে তাঁকে মরণোত্তর অবস্থাতেই স্ত্রীর গর্ভে সন্তান উৎপাদনে সক্ষম করে তোলেন। এর ফলে জন্ম হয় ওসাইরিস ও আইসিসের পুত্র হোরাসের। গল্পের অবশিষ্টাংশের কেন্দ্রবিন্দু হোরাস। প্রথমে তিনি ছিলেন নিজের মায়ের দ্বারা রক্ষিত এক দুর্বল শিশু; কিন্তু পরবর্তীকালে সিংহাসনের অধিকার প্রসঙ্গে সেতের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন। দু’জনের প্রবল সংগ্রামের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল হোরাসের বিজয়ের মধ্য দিয়ে। এই বিজয়ের ফলেই সেতের অন্যায় শাসনের অন্তে মিশরে মাত (মহাজাগতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা) পুনঃস্থাপিত হয় এবং ওসাইরিসের পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়াটিও সমাপ্ত হয়।
অতিকথাটি সেটির অন্তর্নিহিত জটিল প্রতীকতত্ত্ব সহ রাজপদ ও উত্তরাধিকার, শৃঙ্খলা ও বিশৃঙ্খলার দ্বন্দ্ব এবং বিশেষভাবে মৃত্যু ও পরকাল-সংক্রান্ত প্রাচীন মিশরীয় ধারণাগুলির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। সেই সঙ্গে এই অতিকথাটিতে এর কেন্দ্রীয় চার দেবদেবীর মৌলিক চরিত্র বর্ণনা করেছে। প্রাচীন মিশরীয় ধর্মে এই দেবদেবীদের পূজার অনেক উপাদানই এই অতিকথা থেকে উৎসারিত।
খ্রিস্টপূর্ব চতুর্বিংশ শতাব্দীতে অথবা তার আগেই ওসাইরিসের অতিকথাটি সেটির মূল আকারটি ধারণ করেছিল। এই অতিকথার অধিকাংশ উপাদানের উৎস মিশরীয়দের ধর্মীয় ধ্যানধারণা। কিন্তু হোরাস ও সেতের মধ্যে সংঘর্ষের ধারণাটি সম্ভবত আংশিকভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিল মিশরের আদি রাজবংশীয় বা প্রাগৈতিহাসিক যুগের আঞ্চলিক সংঘর্ষের ঘটনাগুলি থেকে। এই উপাখ্যান যে ঘটনাগুলির জন্ম দিয়েছিল তার প্রকৃতি উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছেন গবেষকগণ। কিন্তু কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি।
এই অতিকথার অংশবিশেষ বিভিন্ন ধরনের মিশরীয় গ্রন্থ, অন্ত্যেষ্টি লিপি, জাদুমন্ত্র, ছোটোগল্প ইত্যাদিতে উল্লিখিত হয়েছে। সেই জন্য এই উপাখ্যানটি অন্যান্য সকল প্রাচীন মিশরীয় অতিকথার তুলনায় অনেক বেশি বিশদ ও সুসংহত আকার ধারণ করেছিল। অথচ কোনও মিশরীয় সূত্রেই অতিকথাটির সম্পূর্ণ বিবরণ পাওয়া যায় না। উৎসসূত্রগুলির মধ্যেও ঘটনাগুলি সম্পর্কে বহু বৈচিত্র্যময় পাঠান্তর লক্ষিত হয়। গ্রিক ও রোমান সাহিত্যে, বিশেষত প্লুটার্কের আইসিস ও ওসাইরিস প্রসঙ্গে রচনাটিতে, অনেক বেশি তথ্য পাওয়া যায় বটে, কিন্তু তা সর্বত্র মিশরীয় বিশ্বাসগুলিকে যথাযথভাবে প্রতিফলিত করে না। প্রাচীন মিশরীয় ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে অধিকাংশ জ্ঞানের অবলুপ্তির পরও এই সব রচনার মধ্যে দিয়ে ওসাইরিসের উপকথাটি নিজ অস্তিত্ব বজায় রাখে এবং আজও এটি একটি সুপরিচিত কাহিনি।