এইচআইভি
একটি ভাইরাস যেটির সংক্রমণে মানবদেহে এইডস রোগের সৃষ্টি হয় / From Wikipedia, the free encyclopedia
এইচ.আই.ভি. (ইংরেজি: HIV; পূর্ণরূপ: Human Immunodeficiency Virus হিউম্যান ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস) বা মানব প্রতিরক্ষা অভাবসৃষ্টিকারী ভাইরাস লেন্টিভাইরাস (Lentivirus) গোত্রের অন্তর্গত এক ধরনের ভাইরাস যার সংক্রমণে মানবদেহে এইডস (AIDS) রোগের সৃষ্টি হয়।[1][2] মূলত এইডস একটি রোগ নয়, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব জনিত ক্যান্সারসহ নানা সুযোগসন্ধানী রোগের সমাহার।[3] এইচ.আই.ভি ভাইরাস মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (অনাক্রম্যতা) নষ্ট করে দেয়, ফলে নানা সংক্রামক রোগ ও কয়েক রকম ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে রোগী মৃত্যু মুখে ঢলে পড়ে। এইচআইভি ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর অনাক্রম্যতা কমতে কমতে এইডস ঘটাবার মত অবস্থায় পৌছতে অনেক বছর লাগে। তবে শরীরে এই ভাইরাস একবার সংক্রমিত হলে তা কমানো সম্ভব হলেও সম্পূর্ণ দূর করে এখনো সম্ভব নয় তাই শেষপর্ষন্ত সেই রোগীর এইডস হওয়া বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে বিশ্বের খুব অল্প সংখক কিছু অঞ্চলের কিছু লোকেদের শরীরে কয়েকটি জীনে খুঁত থাকে যার ফলে এইডস ভাইরাস তাদের শরীরে সফল ভাবে সংক্রমণ করতে পারেনা। তাদের এইচআইভির বিরুদ্ধে জন্মগত অনাক্রম্যতা আছে বলা যায়।
ওয়ার্ল্ড হেলথ ওর্গানাইজেসন (WHO) (World Health Organization) মানবদেহে এইচ.আই.ভি ভাইরাসের সঙ্ক্রমনকে প্যান্ডেমিক (Pandemic) হিসাবে চিহ্নিত করেছে[4][5]। ১৯৮১ সালে ভাইরাসটি আবিষ্কারের পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এইডস রোগ কারণে ২কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা যায়।[6] পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.৬% এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত[6]। ২০০৫ সালে এইডস ২২ থেকে ৩৩ লক্ষ মানুষের জীবন কেড়ে নেয় যার মধ্যে ৫ লক্ষ ৭০ হাজারের ও বেশি ছিল শিশু। এই মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশ ঘটে সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা (Sub-Saharan Africa) অঞ্চলে[7] । তখন ধারণা করা হয়েছিল ভাইরাসটি আফ্রিকার প্রায় ৭ কোটি মানুষকে আক্রান্ত করবে।[8] রেট্রোভাইরাসরোধী (Antiretroviral drug) চিকিৎসা ভাইরাসটির সংক্রমনজনিত অসুস্থতা এবং মৃত্যু প্রবণতা দুটোই কমায় কিন্তু নিয়মিতভাবে এই চিকিৎসাসেবা সব দেশে পাওয়া যায় না।[9]
এইচ আই ভি |
---|
এইচ আই ভির স্ক্যানিং ছবি |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস |
|
Included groups |
|
Excluded groups |
|
ভাইরাসটি প্রধানত মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রধান কোষগুলো যেমন সাহায্যকারী টি কোষ (helper T cells) (বিশেষ করে সিডি৪+ CD4+ টি কোষ সমূহ), ম্যাক্রোফেজ এবং ডেনড্রাইটিক কোষগুলোকে আক্রমণ করে। প্রধানত ৩টি প্রক্রিয়ায় এটি সিডি৪+ কোষের সংখ্যা কমিয়ে দেয়, এগুলো হল- সরাসরি ভাইরাসের দ্বারা কোষ নিধন, দ্বিতীয়ত, সংক্রোমিত কোষগুলোর আত্নবিনাশের(Apoptosis) হার বৃদ্ধি, তৃতীয়ত, কোষ হন্তারক সিডি৮+ লসিকাকোষের (Cytotoxic CD8+ T lymphocyte) এর মাধ্যমে সংক্রোমিত কোষ নিধন, যারা সংক্রোমিত কোষগুলোকে চিনতে পারে। যখন এই সিডি৪+ কোষের সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের নিচে নেমে যায় তখন দেহের কোষীয় অনাক্রমন্যতা (Cell-mediated immunity) নষ্ট হয়ে যায় এবং দেহ সুযোগসন্ধানী সংক্রোমন (Opportunistic infection) এর প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।
এইচ.আই.ভি-১ দ্বারা আক্রান্ত এবং চিকিৎসা না হওয়া বেশিরভাগ মানুষ এইডস রোগের শিকার হয়[10] এবং তাদের বেশিরভাগ মারা যায় সুযোগসন্ধানী সংক্রোমন অথবা ম্যালিগন্যানসির (Malignancy) যা ক্রমশ কমতে থাকা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ফলাফল[11]। এইচ.আই.ভি সংক্রোমন থেকে এইডস হওয়ার হার নির্ভর করে ভাইরাস, পোষক এবং পরিবেশ প্রভৃতি প্রভাবকের উপর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারনত এইচ.আই.ভি সংক্রোমন থেকে এইডস হতে ১০ বছর সময় লাগে তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এর চেয়ে কম না বেশি সময় লাগতে পারে।[12][13]
রেট্রোভাইরাসরোধী চিকিৎসা এইচ.আই.ভি আক্রান্ত রোগীদের জীবনসীমা আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি করতে পারে। এমন কি ২০০৫ সালের তথ্য অনুযায়ী এইডস পর্যায়ে পৌছে যাওয়া আক্রান্ত রোগীদের জীবনসীমা গড়ে ৫ বছর বৃদ্ধি করা সম্ভব এই চিকিৎসার মাধ্যমে।[14] রেট্রোভাইরাসরোধী চিকিৎসা ছাড়া সাধারনত একজন এইডস আক্রান্ত রোগী ১ বছরের মধ্যে মারা যায়।[15]