ইসরায়েলের ইতিহাস
ইতিহাসের বিভিন্ন দিক / From Wikipedia, the free encyclopedia
ইসরাইলের ইতিহাস বলতে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দক্ষিণে এমন একটি এলাকার কথা বুঝানো হয়, যা কেনান, ফিলিস্তিন অথবা পবিত্র ভূমি হিসেবে পরিচিত এবং যেখানে আধুনিক ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন ভৌগলিকভাবে অবস্থিত। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে সংকটপূর্ণ পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় করিডোরের অংশ হিসেবে এই এলাকাটি প্রাচীন মানুষের আফ্রিকা থেকে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পরা ঘটনার সাক্ষী হয়েছে, আনুমানিক ১০ হাজার খ্রিষ্ঠপূর্বে নটিফীয় সংস্কৃতির উদ্ভবকে দেখেছে। আনুমানিক ২০০০ খ্রিষ্ঠপূর্বে ক্যানানীয় সভ্যতার উত্থানের মাধ্যমে এই এলাকাটি ব্রোঞ্জ যুগে প্রবেশ করে, পরবর্তীতে ব্রোঞ্জ যুগের শেষে মিশর এই এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে। লৌহ যুগে ইসরায়েল এবং যিহূদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ইহুদী এবং শমরীয় জাতির উদ্ভব ও ইব্রাহিমীয় ধর্মীয় মুল্যবোধের বিকাশে ভূমিকা পালন করে।[1][2][3][4][5][6] এই ভূমি ইহুদী ধর্ম, শমরীয় ধর্ম, খ্রিষ্টান, ইসলাম, দ্রুজ, বাহাই ধর্ম,এবং আরো অন্যান্য ধর্মের উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষের ইতিহাসের পুরো সময়জুড়েই ইসরায়েলের ভূমি বিভিন্ন জাতির নিয়ন্ত্রণ ও দখলের মধ্যে ছিল। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন জাতিসত্তার আবাসভূমি হয়ে উঠেছিল এই এলাকা।
পরবর্তী শতক জুড়ে কখনো আসিরীয়, কখনো ব্যাবিলনীয়, এবং কখনো হাখমানেশি সাম্রাজ্য এই এলাকা দখল করে নেয়। এরপর টলেমী এবং সেলেউসিড সাম্রাজ্য হেলেনিস্টিক যুগে এই অঞ্চল দখলের প্রতিযোগিতা চালিয়ে যায়। যাইহোক, হাসমোনীয় বংশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্থানীয় ইহুদীরা শতবছর ধরে নিজেদের স্বাধীন রাখতে সক্ষম হয়, যা রোমান প্রজাতন্ত্রের অধীনে পতন ঘটে।[7] ১ম এবং ২য় শতাব্দীতে ইহুদী-রোমান যুদ্ধে অনেক ইহুদী নিহত হয়, তাদের উচ্ছেদ করা হয় অথবা দাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়।[8][9][10][11] রোমান সাম্রাজ্যের প্রভাবে খ্রিষ্ঠান ধর্মের প্রভাব বাড়তে থাকায় ইহুদীরা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে, ফলে চতুর্থ শতকের পূর্বেই খ্রিষ্টানরাই এই এলাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যায়। যাইহোক, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মুহম্মদের অধীনে আরব উপদ্বীপ জুড়ে ইসলাম ছড়িয়ে পরে। ইসরায়েলের ভূমির উপর বাইজেন্টাইন খ্রিষ্টানদের যে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল, ৭ম শতকে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল আরবদের বিজয়ের পর সেই নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয়ে যায়। ১১ থেকে ১৩ শতক জুড়ে ক্রুসেডের অংশ হিসেবে অঞ্চলটি খ্রিস্টান ও মুসলিম আর্মির মধ্যে বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ১৩ শতকে ইসরায়েলের ভূমি মঙ্গোলীয় আক্রমণ এবং দখলের শিকার হয়, যদিও স্থানীয়ভাবেই বিশেষত মামলুক সালতানাত রাজ্যের কারণে মঙ্গোলীয়রা পরাজিত হয়। ১৬ শতাব্দী অবধি এই ভূমি মামলুক রাজ্যের অধীন ছিল। পরিশেষে অটোম্যান সাম্রাজ্যের কাছে মামলুক রাজ্যের পতন হয় এবং এই এলাকাটি ২০ শতক অবধি অটোমান প্রদেশের অংশ ছিল।
ইহুদি জাতীয়তাবাদ আন্দোলন জায়নবাদ উনিশ শতকের শেষভাগে (আংশিকভাবে ক্রমবর্ধমান ইহুদি-বিদ্বেষের প্রতিক্রিয়া হিসাবে) আবির্ভূত হয়, যার অংশ হিসাবে আলিয়াহ (ধর্মীয় ও আইনিভাবে ইসরাইলের প্রতিশ্রুত ভূমিতে প্রবাস থেকে ইহুদিদের ফিরে আসার প্রক্রিয়া) বৃদ্ধি পায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রশক্তির সাথে অটোমান সাম্রাজ্যের সিনাই এবং ফিলিস্তিনের মাঝে একটি স্থানে সংঘর্ষ এবং যুদ্ধ চলে। যেখানে অটোমান সাম্রাজ্যের হেরে যাওয়ার পরিণতি হিসেবে অটোমান সাম্রাজ্যকে বিভক্ত করে ফেলা হয়। ব্রিটিশ সরকার লিগ অব নেশনস থেকে ফিলিস্তিন শাসন করার ম্যান্ডেট (ম্যান্ডেটঃ লীগ অব নেশন থেকে কোনো অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা) অর্জন করে, যা ম্যান্ডাটরী ফিলিস্তিন হিসেবে পরিচিত। ব্রিটিশ সরকার প্রকাশ্যে একটি ইহুদিদের জাতীয় বাসস্থান তৈরি করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। আরব জাতীয়তাবাদীরা পূর্বের অটোমান অঞ্চলসমূহের অধিকার দাবি করে এবং ফিলিস্তিনে ইহুদিদের অভিবাসন রোধ করার চেষ্টা করে, ফলে আরব-ইহুদি উত্তেজনা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর আরব ইসরায়েল যুদ্ধের সূচনা হয়, যার ফলে লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনিদের তাদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং এর পরে আরব ও মুসলিম দেশসমূহ থেকে ইহুদিদের ইসরায়েলে যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্বের সমগ্র ইহুদিদের প্রায় ৪৩% আজ ইসরায়েলে বসবাস করে, যা বিশ্বের বৃহত্তম ইহুদি সম্প্রদায়। ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির ভিত্তিতে ১৯৭৯ সালে মিশর–ইসরায়েল শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইসরায়েল ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থার সাথে ১৯৯৩ সালে ওসলো আই চুক্তি স্বাক্ষর করে, তারপরে ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯৪ সালে ইসরায়েল-জর্ডান শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শান্তিচুক্তি চূড়ান্ত করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, এই সংঘাত ইসরায়েলি এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে একটি বড় ভূমিকা পালন করে।