আফ্রিকার বিবরণ (১৫৫০-এর বই)
From Wikipedia, the free encyclopedia
আফ্রিকার বিবরণ হল প্রধানত প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচিত একটি ভূগোলবিদ্যা-সংক্রান্ত গ্রন্থ। ১৫৫০ সালে ভেনিসে জিওভান্নি বাত্তিস্তা রামুসিও কর্তৃক দেল্লে নাভিগাতিওনি এ ভিয়াগ্গি (Delle navigationi e viaggi) নামক একটি ভ্রমণকাহিনি সংকলনে দেল্লা দেসক্রিত্তিওনে দেল্ল’আফ্রিকা এত দেল্লে কোসে নোতাবিলি চে ইভি সোনো (Della descrittione dell’Africa et delle cose notabili che ivi sono) শিরোনামে এটি প্রকাশিত হয়।[1] এই গ্রন্থটিতেই বারবেরি উপকূল (অধুনা মরক্কো, আলজেরিয়া ও টিউনিশিয়া) এবং পশ্চিম-মধ্য আফ্রিকার স্বর্ণবাণিজ্যে যুক্ত রাজ্যগুলির বিষয়ে ইউরোপে প্রকাশিত প্রথম বিস্তারিত বিবরণ বিধৃত হয়েছে।[2] জলদস্যুদের হাতে বন্দী ও পরে ক্রীতদাস হিসাবে বিক্রীত বিশিষ্ট মুর-জাতীয় পর্যটক ও বণিক লিও আফ্রিকানাস এই বইটি ইতালীয় ভাষায় লেখান। পরে বইটি সহ তাঁকে পোপ দশম লিওর সামনে উপস্থিত করা হলে, তিনি খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন ও মুক্তিলাভ করেন। লিওর বক্তব্য থেকে অনুমিত হয় যে, তিনি আরবি ভাষায় লেখা মূল বইটি নতুন করে ইতালীয় ভাষায় লিখেছিলেন। বইটি সম্পূর্ণ হয় ১৫২৬ সালে।[3] রামুসিও প্রকাশিত ভ্রমণকাহিনি সংকলনটিতে এটি বার বার প্রকাশিত হয় এবং ১৫৫৬ সালে ফরাসি এবং পণ্ডিতবর্গের পাঠের জন্য লাতিন ভাষায় অনূদিত হয়।
আফ্রিকার বিবরণ নয় পর্বে বিভক্ত। একটি ভূমিকা পর্ব এবং নদনদী, প্রাণী ও উদ্ভিদ-সংক্রান্ত একটি নির্ঘণ্ট ছাড়া মধ্যবর্তী সাতটি পর্বের প্রত্যেকটিতে এক-একটি রাজ্যের বিবরণ পাওয়া যায়: মাররাকেশ, ফেজ, ৎলেমসেন ও টিউনিস রাজ্য, নুমিডিয়ার অঞ্চলসমূহ, সাহারা-নিন্ম অঞ্চলসমূহ ও মিশর। বহু দশক ধরে পাণ্ডুলিপি আকারে বইটি প্রচলিত ছিল। পিয়েত্রো বেম্বো রামুসিওর পাণ্ডুলিপিটি পাঠ করে ১৫৪৫ সালের ২ এপ্রিল লেখেন: "একজন মানুষ কীভাবে এই সকল বিষয়ে এত বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন, তা আমি কল্পনাও করতে পারি না।"[4]
যে সময়ে এই অঞ্চলগুলি সম্পর্কে ইউরোপীয়দের জ্ঞান অতি অল্প ছিল, সেই যুগে বইটির যথার্থতা থেকেই এটির গুরুত্ব উদ্ভূত হয়েছিল।[5] আরও একটি কারণে বইটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। বইটির প্রকাশনার কালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও পূর্ব ইউরোপে লাতিন খ্রিস্টান শক্তির সঙ্গে ওটোমান সাম্রাজ্যের সংঘাত চলছিল এবং একই সময়ে পশ্চিম আফ্রিকা ইউরোপীয়দের কাছে অধিকতর সুগম্য হয়ে উঠছিল।
বইটি ইউরোপে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে। অন্য অনেকগুলি ভাষায় এটি অনূদিত হয়[6] এবং পরবর্তী কয়েক দশক (ক্ষেত্রবিশেষে শতাব্দী) ধরে এটি একটি সামগ্রিক সহায়ক গ্রন্থের কাজ করে।[2] জন পোরি বইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন। ১৬০০ সালে এই অনুবাদটি আ জিওগ্রাফিক্যাল হিস্ট্রি অফ আফ্রিকা, রিটেন ইন আরাবিক অ্যান্ড ইটালিয়ান বাই জন লিও আ মুর... (মূল বানান: A Geographical Historie of Africa, Written in Arabicke and Italian by Iohn Leo a More...) শিরোনামে প্রকাশিত হয়। উইলিয়াম শেকসপিয়র সম্ভবত এই অনুবাদটি দেখেছিলেন এবং এখান থেকেই উপাদান সংগ্রহ করে তাঁর ওথেলো (আনু. ১৬০৩) নাটকের নামচরিত্রটিকে নির্মাণ করেন।[7]
বিংশ শতাব্দীতে মূল-অনুলিখিত পাণ্ডুলিপিটি পুনরাবিষ্কৃত হলে দেখা যায়, খ্রিস্টান ইউরোপীয় পাঠকবর্গের কাছে লেখাটিকে অধিকতর স্বাদু করে তোলার জন্য রামুসিও লিও আফ্রিকানাসের মূল রচনার অনেক নিরপেক্ষ বিবরণ অতিরঞ্জিত করেছিলেন।[8] ফরাসি ও ইংরেজি অনুবাদকেরাও বিষয়টিকে আরও অলংকৃত করেছিলেন। সেই জন্য এই পাণ্ডুলিপিটির সঙ্গে প্রদত্ত আধুনিক অনুবাদগুলিই অনেক বেশি মূলানুগ।[9]