আইয়ো (প্রাকৃতিক উপগ্রহ)
প্রাকৃতিক উপগ্রহ / From Wikipedia, the free encyclopedia
আইয়ো (ইংরেজি: Io; /ˈaɪ.oʊ/) বা বৃহস্পতি ১ (ইংরেজি: Jupiter I) হল বৃহস্পতি গ্রহের চারটি গ্যালিলিয়ান উপগ্রহগুলির মধ্যে সর্ব-অভ্যন্তরীণ ও তৃতীয় বৃহত্তম। চাঁদের থেকে আকারে সামান্য বড়ো আইয়ো হল সৌরজগতের চতুর্থ বৃহত্তম প্রাকৃতিক উপগ্রহ। সৌরজগতের যে কোনও প্রাকৃতিক উপগ্রহের তুলনায় আইয়োর ঘনত্ব বেশি এবং সৌরজগতের যে কোনও জ্ঞাত জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুর তুলনায় আইয়োতে জলের পরিমাণ (আণবিক অনুপাত অনুযায়ী) সর্বনিম্ন। ১৬১০ সালে গ্যালিলিও গ্যালিলি এই উপগ্রহটি আবিষ্কার করেন এবং এটির নামকরণ করা হয় গ্রিক পৌরাণিক চরিত্র আইয়োর (হেরার স্ত্রী-পুরোহিত, যিনি জিউসের অন্যতমা প্রেমিকা হয়েছিলেন) নামানুসারে।
আবিষ্কার | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
আবিষ্কারক | গ্যালিলিও গ্যালিলি | ||||||||
আবিষ্কারের তারিখ | ৮ জানুয়ারি, ১৬১০[1] | ||||||||
বিবরণ | |||||||||
উচ্চারণ | /ˈaɪ.oʊ/[2] বা গ্রিকো-লাতিন Īō (/ˈiː.oʊ/-এর প্রায় অনুরূপ) | ||||||||
নামকরণের উৎস | Ἰώ (Īō) | ||||||||
বিকল্প নামসমূহ | বৃহস্পতি ১ | ||||||||
বিশেষণ | আইয়োনীয় (ইংরেজি: /aɪˈoʊniən/[3][4]) | ||||||||
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য | |||||||||
অনুসূর | ৪২০০০০ কিমি (০.০০২৮০৭ জ্যো.এ.) | ||||||||
অপসূর | ৪২৩৪০০ কিমি (০.০০২৮৩০ জ্যো.এ.) | ||||||||
কক্ষপথের গড় ব্যাসার্ধ | ৪২১৭০০ কিমি (০.০০২৮১৯ জ্যো.এ.) | ||||||||
উৎকেন্দ্রিকতা | ০.০০৪১ | ||||||||
কক্ষীয় পর্যায়কাল | ১.৭৬৯১৩৭৭৮৬ দি (১৫২৮৫৩.৫০৪৭ সে, ৪২.৪৫৯৩০৬৮৬ ঘ) | ||||||||
গড় কক্ষীয় দ্রুতি | ১৭.৩৩৪ কিমি/সে | ||||||||
নতি | ০.০৫° (বৃহস্পতির নিরক্ষরেক্ষার প্রতি) ২.২১৩° (ক্রান্তিবৃত্তের প্রতি) | ||||||||
যার উপগ্রহ | বৃহস্পতি | ||||||||
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ | |||||||||
মাত্রাসমূহ | ৩,৬৬০.০ × ৩,৬৩৭.৪ × ৩,৬৩০.৬ কিমি[5] | ||||||||
গড় ব্যাসার্ধ | ১৮২১.৬±০.৫ কিমি (০.২৮৬ পৃথিবী)[6] | ||||||||
পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল | ৪১৯১০০০০ কিমি২ (০.০৮২ পৃথিবী) | ||||||||
আয়তন | ২.৫৩×১০১০ কিমি৩ (০.০২৩ পৃথিবী) | ||||||||
ভর | (৮.৯৩১৯৩৮±০.০০০০১৮)×১০২২ কিগ্রা (০.০১৫ পৃথিবী)[6] | ||||||||
গড় ঘনত্ব | ৩.৫২৮±০.০০৬ গ্রা/সেমি৩ (০.৬৩৯ পৃথিবী)[6] | ||||||||
বিষুবীয় পৃষ্ঠের অভিকর্ষ | ১.৭৯৬ মি/সে২ (০.১৮৩ জি) | ||||||||
মুক্তি বেগ | ২.৫৫৮ কিমি/সে | ||||||||
ঘূর্ণনকাল | সমলয় | ||||||||
বিষুবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণন বেগ | ২৭১ কিমি/ঘ | ||||||||
প্রতিফলন অনুপাত | ০.৬৩±০.০২[6] | ||||||||
| |||||||||
আপাত মান | ৫.০২ (বিপরীত অবস্থান)[8] | ||||||||
বায়ুমণ্ডল | |||||||||
পৃষ্ঠের চাপ | ৫০০µPa থেকে ৪mPa | ||||||||
গঠন | ৯০% সালফার ডাইঅক্সাইড | ||||||||
চারশোটিরও বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি নিয়ে আইয়ো সৌরজগতের ভূতাত্ত্বিকভাবে সর্বাপেক্ষা সক্রিয় বস্তু।[9][10] এই চরম ভূতাত্ত্বিক সক্রিয়তাটি হল বৃহস্পতি ও অন্যান্য গ্যালিলিয়ান উপগ্রহগুলির (ইউরোপা, গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টো) মধ্যস্থলে বাঁধা পড়ে আইয়োর অভ্যন্তরভাগে যে উদ্ঘর্ষণের সৃষ্টি হয় তার থেকে উৎসারিত জোয়ার-সংক্রান্ত তাপায়নের ফল। বেশ কয়েকটি আগ্নেয়গিরি থেকে উৎক্ষিপ্ত সালফার ও সালফার ডাইঅক্সাইডের স্তম্ভ পৃষ্ঠভাগের ৫০০ কিমি (৩০০ মা) পর্যন্ত উত্থিত হয়। আইয়োর পৃষ্ঠভাগে শতাধিক পর্বতও রয়েছে, যেগুলি আইয়োর সিলিকেট ভূত্বকের তলায় প্রবল চাপের ফলে উত্থিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে কয়েকটি পর্বতশৃঙ্গ পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগের সর্বোচ্চ বিন্দু মাউন্ট এভারেস্টের থেকেও উঁচু।[11] বাহ্য সৌরজগতের অধিকাংশ প্রাকৃতিক উপগ্রহ প্রধানত জলীয় বরফ দ্বারা গঠিত হলেও আইয়ো প্রধানত গঠিত হয়েছে একটি গলিত লৌহ বা আয়রন সালফাইড অন্তস্থল ঘিরে থাকা সিলিকেট পাথরে। আইয়োর পৃষ্ঠভাগের বেশিরভাগই গঠিত হয়েছে সালফার ও সালফার ডাইঅক্সাইডের হিমায়িত আবরণে ঢাকা বিস্তৃত সমভূমির দ্বারা।
আইয়োতে অগ্ন্যুৎপাত এই উপগ্রহের অনেক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী। আগ্নেয় শিখা ও লাভার প্রবাহগুলি উপগ্রহটির পৃষ্ঠভাগে অনেক ভূপ্রাকৃতিক পরিবর্তন সূচিত করেছে এবং সালফারের অ্যালোট্রোপ ও যৌগগুলির জন্য পৃষ্ঠভাগটি হলুদ, লাল, সাদা, কালো ও সবুজ রঙের বিভিন্ন সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম মাত্রায় রঞ্জিত হয়ে গিয়েছে। অসংখ্য সুপ্রসারিত লাভা প্রবাহের (যার মধ্যে কয়েকটি দৈর্ঘ্যে ৫০০ কিমি (৩০০ মা)-এরও বেশি) চিহ্নও পৃষ্ঠভাগে পাওয়া যায়। এই অগ্ন্যুৎপাতের ফলে যে বস্তুগুলি উৎক্ষিপ্ত হয় তা দ্বারাই আইয়োর পাতলা, সামঞ্জস্যবিহীন বায়ুমণ্ডল ও বৃহস্পতির সুপ্রসারিত চৌম্বকমণ্ডলটির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও আইয়োর আগ্নেয় উৎক্ষেপ বৃহস্পতির চারিধারে একটি বৃহৎ প্লাজমা টরাস সৃষ্টি করেছে।
সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিকাশে আইয়ো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। ১৬১০ সালের জানুয়ারি মাসে গ্যালিলিও গ্যালিলি কর্তৃক অন্যান্য গ্যালিলিয়ান উপগ্রহের সঙ্গে আইয়োর আবিষ্কার সৌরজগতের কোপারনিকান মডেলের অনুমোদন, কেপলারের গতিসূত্রের বিকাশ ও প্রথম আলোর গতি পরিমাপকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে বিংশ শতাব্দীর গোড়া পর্যন্ত পৃথিবী থেকে আইয়ো কেবলমাত্র আলোর একটি বিন্দু রূপেই দেখা যেত। তারপর এই উপগ্রহটির ঘন লাল মেরুদেশীয় ও উজ্জ্বল বিষুবীয় অঞ্চলগুলির মতো পৃষ্ঠভাগের বৃহৎ বৈশিষ্ট্যগুলি চিহ্নিত করা সম্ভবপর হয়। ১৯৭৯ সালে দু’টি ভয়েজার মহাকাশযান আইয়োকে ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় একটি জগৎ হিসেবে প্রকাশ করে এবং দেখা যায় যে এই উপগ্রহটিতে রয়েছে অগ্ন্যুৎপাতের অসংখ্য চিহ্ন, বৃহৎ পর্বত এবং এমন এক নবীন পৃষ্ঠভাগ যাতে অভিঘাত গহ্বরের কোনও নিশ্চিত চিহ্ন পাওয়া যায় না। গ্যালিলিও মহাকাশযানটি ১৯৯০-এর দশকে এবং ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে উপগ্রহটির খুব কাছে বেশ কয়েকটি ফ্লাইবাই প্রেরণ করে আইয়োর অভ্যন্তরীণ গঠন ও পৃষ্ঠভাগের উপাদান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। আইয়োর সঙ্গে বৃহস্পতির চৌম্বকক্ষেত্রের সম্পর্ক এবং আইয়োর কক্ষপথটিকে কেন্দ্র করে একটি উচ্চ শক্তিসম্পন্ন বিকিরণ বলয়ের অস্তিত্বের কথা এই মহাকাশযানটির মাধ্যমেই জানা যায়। আইয়ো প্রতিদিন ৩,৬০০ রেম (৩৬ এসভি) আয়নায়নশীল বিকিরণ প্রাপ্ত হয়।[12]
২০০০ সালে ক্যাসিনি-হাইগেন্স, ২০০৭ সালে নিউ হোরাইজনস ও ২০১৭ সাল থেকে জুনো কর্তৃক এবং সেই সঙ্গে পৃথিবী-ভিত্তিক দূরবীন ও হাবল স্পেস টেলিস্কোপ কর্তৃকও আরও পর্যবেক্ষণ চালানো হয়েছে।