আইয়োতে অগ্ন্যুৎপাত
From Wikipedia, the free encyclopedia
বৃহস্পতির প্রাকৃতিক উপগ্রহ আইয়োতে অগ্ন্যুৎপাত সুস্পষ্ট হয়েছে এই উপগ্রহটির পৃষ্ঠভাগে আগ্নেয়গিরি, আগ্নেয় গহ্বর ও লাভার প্রবাহ থেকে। ১৯৭৯ সালে ভয়েজার ১ চিত্রগ্রহণ বিজ্ঞানী লিন্ডা মোরাবিটো এই উপগ্রহে আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা আবিষ্কার করেন।[1] আইয়ো অতিক্রমকারী মহাকাশযান (ভয়েজার, গ্যালিলিও, ক্যাসিনি ও নিউ হোরাইজনস) ও পৃথিবী-ভিত্তিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে দেড়শোরও বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি ধরা পড়েছে। এই সকল পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে, আইয়োতে এই ধরনের ৪০০টি পর্যন্ত আগ্নেয়গিরির অস্তিত্ব আছে।[2] সৌরজগতের যে চারটি মাত্র জ্ঞাত বস্তুতে আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা দেখা যায়, আইয়ো তার অন্যতম (অন্য তিনটি হল পৃথিবী, শনির প্রাকৃতিক উপগ্রহ এনসেলাডাস ও নেপচুনের প্রাকৃতিক উপগ্রহ ট্রাইটন)।
ভয়েজার ১ ফ্লাইবাইয়ের অব্যবহিত পূর্বে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলা হয়েছিল যে, উপগ্রহটির অস্বাভাবিক কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতার ফলে সৃষ্ট জোয়ার-সংক্রান্ত তাপায়নই আইয়োর অগ্ন্যুৎপাতের তাপের উৎস।[3] এই ঘটনা পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ তাপায়নের মতো নয়। পৃথিবীর ক্ষেত্রে তাপের উৎসটি প্রধানত তেজষ্ক্রিয় আইসোটোপ ক্ষয় ও উপচয়ের আদিম তাপ।[4] কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতার জন্য কক্ষপথে বৃহস্পতির নিকটতম ও বৃহস্পতি থেকে দূরতম অবস্থানে আইয়োর উপর বৃহস্পতির অভিকর্ষীয় টানের সামান্য তারতম্য ঘটে, যার ফলে জোয়ার-সংক্রান্ত স্ফীতিতেও পার্থক্য দেখা যায়। আইয়োর আকৃতিতে এই পার্থক্য উপগ্রহটির অভ্যন্তরভাগে উদ্ঘর্ষণ-জনিত তাপ সৃষ্টি করে। এই ধরনের জোয়ার-সংক্রান্ত তাপায়নের ঘটনা না ঘটলে আইয়ো সম্ভবত চাঁদের মতো একই আকার ও ভরের, ভূতাত্ত্বিকভাবে মৃত এবং অসংখ্য অভিঘাত খাদে পরিপূর্ণ একটি উপগ্রহে পরিণত হত।[3]
আইয়োতে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে শত শত আগ্নেয় কেন্দ্র ও বিস্তৃত লাভার বিন্যাস গড়ে উঠেছে, যার ফলে এই উপগ্রহটি হয়ে উঠেছে সৌরজগতে আগ্নেয় কার্যকলাপের দিক থেকে সর্বাপেক্ষা সক্রিয় বস্তু। এই উপগ্রহে অগ্ন্যুৎপাতের তিনটি পৃথক ধরন চিহ্নিত করা গিয়েছে। এই পার্থক্যগুলি উদ্গীরণের স্থিতিকাল, তীব্রতা, লাভা নিঃসরণের হার এবং উদ্গীরণ একটি আগ্নেয় গহ্বরের (প্যাটারা নামে পরিচিত) হচ্ছে কিনা তার উপর নির্ভরশীল। আইয়োতে বহু শত বা বহু সহস্র কিলোমিটার দীর্ঘ লাভার প্রবাহগুলি প্রধানত ব্যাসাল্টীয় উপাদানে গঠিত। পৃথিবীতে হাওয়াইয়ের কিলাওয়েয়া প্রভৃতি ঢালাকৃতি আগ্নেয়গিরিতে এই ধরনের লাভা দেখা যায়।[5] আইয়োর অধিকাংশ লাভা ব্যাসাল্টের দ্বারা গঠিত হলেও অল্প কয়েকটি লাভা প্রবাহের উপাদান হিসেবে সালফার ও সালফার ডাইঅক্সাইডের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। সেই সঙ্গে উদ্গীরণকালীন তাপমাত্রা সর্বাধিক ১,৬০০ K (১,৩০০ °সে; ২,৪০০ °ফা) শনাক্ত করা হয়েছে, উচ্চ তাপমাত্রা-যুক্ত অতি-ম্যাফীয় সিলিকেট লাভার উদ্গীরণই যার ব্যাখ্যা হতে পারে।[6]
আইয়োর ভূত্বকে ও তার পৃষ্ঠভাগে প্রচুর পরিমাণে গন্ধকীয় উপাদানের উপস্থিতির জন্য কোনও কোনও উদ্গীরণে সালফার, সালফার ডাইঅক্সাইড গ্যাস ও পাইরোক্লাস্টিক উপাদানকে মহাশূন্যে ৫০০ কিলোমিটার (৩১০ মা) পর্যন্ত উৎক্ষিপ্ত হয়ে বৃহৎ ছত্রাকৃতি আগ্নেয় স্তম্ভ সৃষ্টি করতেও দেখা যায়।[7] এই উপাদানগুলির দ্বারা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলি লাল, কালো ও/অথবা সাদা রঙে রঞ্জিত হয়ে যায় এবং আইয়োর সামঞ্জস্যহীন বায়ুমণ্ডল ও বৃহস্পতির বিস্তৃত চৌম্বকক্ষেত্রটিকে উপাদান যোগান দেয়। ১৯৭৯ সাল থেকে যে মহাকাশযানগুলি আইয়োর পাশ দিয়ে উড়ে গিয়েছে সেগুলির পর্যবেক্ষণে আইয়োর আগ্নেয় সক্রিয়তার ফলস্বরূপ উপগ্রহটির পৃষ্ঠভাগে অসংখ্য পরিবর্তন ধরা পড়েছে।[8]