অং সান সু চি
মায়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা / From Wikipedia, the free encyclopedia
অং সান সু চি (বর্মী: အောင်ဆန်းစုကြည်, উচ্চারিত: [àʊɴ sʰáɴ sṵ tɕì] ঔঁ(অ) সাঁ সূ চী; জন্ম ১৯ জুন ১৯৪৫) একজন বর্মী রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, এবং লেখিকা যিনি মিয়ানমারের প্রথম রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা (প্রধানমন্ত্রীর সমমান) হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির প্রধান নেত্রী। মিয়ানমারের দে ফ্যাক্তো তথা অনানুষ্ঠানিক প্রধান হিসেবেই তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন।[2] এছাড়াও প্রথম নারী হিসেবে তিনি মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মন্ত্রী, বিদ্যুৎশক্তি ও ক্ষমতা বিষয়ক মন্ত্রী, এবং শিক্ষা মন্ত্রী হিসেবে প্রেসিডেন্ট তিন চওয়ের কেবিনেটে কাজ করেন; আর ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি মিয়ানমারের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস তথা নিম্নকক্ষে কৌমু টাউনশিপের এমপি ছিলেন।
ডও অং সান সূ চী | |
---|---|
အောင်ဆန်းစုကြည် | |
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা | |
কাজের মেয়াদ ৬ এপ্রিল ২০১৬ – ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | |
রাষ্ট্রপতি | তিন চও উইন মিন্ট |
পূর্বসূরী | থিন সিন (প্রধানমন্ত্রী, ২০১১) |
উত্তরসূরী | জেনারেল মিন অং হ্লাইং (মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, ২০২১) |
পররাষ্ট্র মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৩০ মার্চ ২০১৬ – ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | |
রাষ্ট্রপতি | তিন চও |
ডেপুটি | তিন চও |
পূর্বসূরী | ওয়ানা মং লুইন |
উত্তরসূরী | পদশুণ্য |
রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৩০ মার্চ ২০১৬ – ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | |
রাষ্ট্রপতি | তিন চও উইন মিন্ট |
পূর্বসূরী | অং মিন হ্লা তুন শো মং শো থিন থিন নুন্ত |
উত্তরসূরী | পদশুণ্য |
ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির সভানেত্রী | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ১৮ নভেম্বর ২০১১ | |
পূর্বসূরী | অং শ্বে |
বিরোধীদলীয় নেত্রী | |
কাজের মেয়াদ ২ মে ২০১২ – ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ | |
রাষ্ট্রপতি | থিন সিন |
পূর্বসূরী | সাই লা চও |
ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির সাধারণ সম্পাদক | |
কাজের মেয়াদ ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮৮ – ১৮ নভেম্বর ২০১১ | |
পূর্বসূরী | পদ প্রতিষ্ঠিত |
উত্তরসূরী | পদ অবলুপ্ত |
মিয়ানমার হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য কৌমু আসনে | |
কাজের মেয়াদ ২ মে ২০১২ – ৩০ মার্চ ২০১৬ | |
পূর্বসূরী | শো তিন্ট |
উত্তরসূরী | পদশুণ্য |
সংখ্যাগরিষ্ঠ | ৪৬,৭৩ (৭১.৩৮%) |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | (1945-06-19) ১৯ জুন ১৯৪৫ (বয়স ৭৮) রেঙ্গুন, ব্রিটিশ বর্মা (বর্তমানে ইয়াঙ্গুন, মিয়ানমার) |
রাজনৈতিক দল | ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি |
দাম্পত্য সঙ্গী | মাইকেল অ্যারিস (বি. ১৯৭২; মৃ. ১৯৯৯) |
সন্তান | ২, আলেকজান্ডার অ্যারিসসহ |
পিতামাতা | অং সান (বাবা) খিন চি (mother) |
বাসস্থান | ৫৪ ইউনিভার্সিটি এভিনিউ |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট হাগস কলেজ, অক্সফোর্ড সোয়াস, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় |
পুরস্কার | রাফটো পুরস্কার শাখারভ পুরস্কার নোবেল শান্তি পুরস্কার জওহরলাল নেহরু পুরস্কার আন্তর্জাতিক সাইমন বলিভার পুরস্কার ওলফ পালমে পুরস্কার ভগবান মহাবীর বিশ্বশান্তি পুরস্কার কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল |
স্বাক্ষর | |
ওয়েবসাইট | দলীয় ওয়েবসাইট |
আধুনিক মিয়ানমারের জাতির জনক অং সান এবং খিন চী এর কন্যা সু চি এর জন্ম হয় ব্রিটিশ বার্মার রেঙ্গুনে। ১৯৬৪ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৬৮-তে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক অর্জন করার পর তিনি জাতিসংঘে তিন বছর কাজ করেন। ১৯৭২ সালে মাইকেল অ্যারিসকে বিয়ে করেন এবং তাদের দুই ছেলে হয়। ১৯৮৮-র গণ আন্দোলনের সময় সু চি সবার নজর কাড়েন এবং ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) সাধারণ সম্পাদক হন; সেসময় সদ্যগঠিত দলটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সামরিক জান্তার বিরোধী অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে এনএলডি সংসদের ৮১% আসন পেলেও সেনাবাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায় যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হৈ চৈ ফেলে দেয়। এদিকে নির্বাচনের আগে থেকেই সু চি-কে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২১ বছরের মধ্যে ১৫ বছরই তাকে গৃহবন্দী অবস্থায় কাটাতে হয়; ততদিনে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রখ্যাত রাজবন্দীদের একজন হয়ে উঠেছেন।
সু চির দল ২০১০ সালের নির্বাচন বয়কট করে, যা সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে তাৎপর্যপূর্ণ বিজয় এনে দেয়। ২০১২ সালের উপনির্বাচনে সু চি সংসদের নিম্নকক্ষের এমপি হন এবং তার দল ৪৫টি ফাঁকা আসনের মধ্যে ৪৩টিতে জয়লাভ করে। ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার দল ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করে, অ্যাসেমব্লি অফ দ্য ইউনিয়নের (সংসদ) ৮৬% আসন অর্জন করে; যদিও প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকটোরাল কলেজে তাদের প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচনের জন্য ৬৭% সংখ্যাগরিষ্ঠতাই যথেষ্ট ছিল। সু চি-র প্রয়াত স্বামী ও সন্তানেরা বিদেশি নাগরিক হওয়ায় সংবিধান অনুসারে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না; তাই তিনি নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা পদটি গ্রহণ করেন যা কিনা মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধানের সমান।
গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে সংগ্রামের জন্য তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার (১৯৯১) সহ আরো অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন, যদিও রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে তার ভূমিকা তীব্রভাবে সমালোচিত। এছাড়াও ২০২০ সালে মিয়ানমারের সংসদীয় নির্বাচনে তিনি ও তার দলের অধিকাংশ নেতার প্রতি ভোটচুরি ও অনিয়মের অভিযোগ আনে দেশটির সামরিক বাহিনী তাতমাডো।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে এক সামরিক অভ্যুত্থানের পর বর্তমানে তিনি ও তার দলের অধিকাংশ নেতা গৃহবন্দী অবস্থায় আছেন। তার মুক্তির দাবিতে মিয়ানমারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্দোলন শুরু হয়েছে।